নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় পুরো দেশের
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকান্তরে
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই দিনে দেশের ছয়টি জেলায় চার গৃহবধূসহ সাতজনের
হত্যাকাণ্ড এবং রাজধানীর সবুজবাগে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে
হত্যার ঘটনা সমাজে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পারিবারিক কলহ, ব্যক্তিগত
শত্রুতা, মাদকাসক্তি এবং ছিনতাইয়ের মতো কারণে সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ড দেশের
সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে যৌথ
বাহিনীর অভিযান কিছুটা আশার আলো দেখালেও অপরাধের মূলে আঘাত হানতে আরো
কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
একটি সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব জনগণের
জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। জননিরাপত্তার ব্যত্যয় ঘটায় এবং সমাজে
অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয় এবং খোদ সরকার
প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
খবর থেকে জানা যাচ্ছে, কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা
ক্যাম্পে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, টেকনাফে কিশোরের ছুরিকাঘাতে গৃহবধূর
মৃত্যু, খাগড়াছড়িতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, পঞ্চগড়ে যুবকের গলা কাটা
মরদেহ উদ্ধার, ফেনীতে ডোবা থেকে স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নরসিংদীর
বেলাবতে তুচ্ছ ঘটনায় দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু এবং সিরাজগঞ্জে
স্ত্রীর গলা কেটে স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা-প্রতিটি ঘটনাই গভীরে পচন ধরা
সমাজের এক অস্বাভাবিক চিত্র তুলে ধরে। বিশেষভাবে পারিবারিক সহিংসতা এবং
কিশোর অপরাধের বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
অন্যদিকে রাজধানীর
সবুজবাগে ব্যবসায়ী জাকির হোসেনকে অপহরণের পর টুকরা করে হত্যা ও মাটিচাপা
দেওয়ার ঘটনাটি অপরাধীদের নৃশংসতা এবং অর্থের লোভে যেকোনো সীমা ছাড়িয়ে
যাওয়ার প্রবণতাকে স্পষ্ট করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, সমাজে অপরাধ এতটাই গভীরে
প্রোথিত যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে।
তবে আশার কথা হলো,
যৌথ বাহিনীর আট দিনের অভিযানে সারা দেশে ২৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং
১৫টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সেনাবাহিনী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত টহল ও
নিরাপত্তা কার্যক্রম চালাচ্ছে, শিল্পাঞ্চলগুলোতে অস্থিরতা রোধে কাজ করছে
এবং ঈদ যাত্রায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।এসব প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে
প্রশংসনীয়।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায় তো সরকার এড়াতেই পারে না।
পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষার ভূমিকা এবং সমাজের দায়িত্বের প্রতি
গভীর অবহেলার ফল হচ্ছে এসব সহিংসতা। এগুলো আমাদের ভেতরকার নৈতিকতা,
সহানুভূতি ও মানবিকতাকে মেরে ফেলছে। প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি
সামাজিক অনুশাসন ও মূল্যবোধগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে।সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে
নাগরিকের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা।
শুধু অভিযান চালিয়ে অপরাধ দমন করা
সম্ভব নয়। অপরাধের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি
পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। মাদকাসক্তি, পারিবারিক বিরোধ, কিশোর অপরাধ,
সামাজিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য-এসবের প্রতি সুনির্দিষ্ট মনোযোগ
দিতে হবে। পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং
স্থানীয় পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও আবশ্যক। সমাজের প্রতিটি স্তরে
শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা
অপরিহার্য।