আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এআই-এর অপব্যবহারকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অনেকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অস্ত্রের চেয়েও মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এআইয়ের মাধ্যমে মানুষের হুবহু ছবি ও কণ্ঠস্বর তৈরি করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা সম্ভব। এর অপব্যবহারে ইউরোপের একটা দেশে নির্বাচন বন্ধ করতে হয়েছিল। এটা আধুনিক একটা হুমকি। নির্বাচন কমিশন এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। এর নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। এর অপব্যবহার রোধে রয়েছে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। তবে নির্বাচনের পাঁচ অংশী পক্ষ যদি ১০টি কাজ যথাযথভাবে করতে পারে, তাহলে এ চ্যালেঞ্জ অনেকটা উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া, জনগণ ও রাজনৈতিক দলকে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় ভুয়া তথ্যসংবলিত কনটেন্ট ভোটের মাঠে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কারণ, দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ মিডিয়া বা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে তুলনামূলক কম সচেতন। এআইয়ের অপব্যবহার রোধে সরকার চাইলে আইন চালু করতে পারে। নির্বাচনি প্রচারের জন্য ভুয়া তথ্য দিয়ে ভিডিও তৈরি হলে নিষিদ্ধ করতে পারে সেটিও। একই সঙ্গে কারা এআইয়ের অপব্যবহার করছে তা মনিটরিং করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সেলও গঠন করা যেতে পারে। পাশাপাশি ভোটারদের এ নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন চালু করা যায়।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নির্বাচনের ভিডিও বানানোর প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ধরনের কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের ভয়েস দিয়ে বিতর্কিত বা সংবেদনশীল বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। অথচ সেসব বক্তব্য আদৌ রাজনীতিবিদরা দেননি। কিন্তু অনেকেই যাচাই না করে সেই বক্তব্য বিশ্বাস করছেন। গত কয়েক মাসের তথ্য বলছে, বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দলের নেতা-কর্মী শত শত ফেসবুক পেজ ও আইডিতে এসব ভিডিও পোস্ট করেছেন। এসব ভিডিওতে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানানো হয়। অনেক সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে, যা প্রভাবিত করছে ভোটারদের। যাদের অনেকেই এআই সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। অনেক সময় সঠিকভাবে যাচাই করতেও তারা অক্ষম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, এতটাই নিপুণ করে এআই দিয়ে ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে, যা শনাক্ত করা অনেক কঠিন। সে কারণে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণকে সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা রাখতে হবে।
নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে সতর্কতা জরুরি। এখনই সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অপব্যবহার রোধে সরকার আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করতে পারে। একই সঙ্গে বিশেষ সেল গঠন করে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে সরকারি প্রচার মাধ্যমের পাশাপাশি বেসরকারি গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সব অংশীজনকে একত্রিত করে সরকার এআইয়ের অপব্যবহার রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে, এটিই প্রত্যাশা।