আশা করা যাচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, সরকার সে পথেই হাঁটছে। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ১২ দলীয় জোটের নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে বলেছেন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। ওই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেছেন, নির্বাচন ভণ্ডুল করার চেষ্টা রুখে দিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আগামী ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি হবে। এই সময়ে মানুষের প্রধান চাওয়া ছিল নির্বাচন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রধান উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন হবে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে। কোনো কোনো উপদেষ্টা বলতে থাকেন, মানুষ চায় অন্তর্বর্তী সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকুক। দু-একটি রাজনৈতিক দলও প্রায় একই সুরে কথা বলতে থাকে। এসব উক্তি ও কর্মকাণ্ডে মানুষ বিভ্রান্ত হতে থাকে।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতিতে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। সম্প্রতি তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় দেশে কেউ উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন।
একই সঙ্গে প্রতিশ্রুত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কেউ সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে কি না, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান জানান তিনি। গত ১৯ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী আয়োজিত আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে আদৌ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি না, কোনো কোনো মহল থেকে এমন প্রশ্ন উত্থাপন বিচ্ছিন্ন বক্তব্য হিসেবে দেখার আজ আর সুযোগ নেই।’ এই সংশয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে শনিবার প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন বিষয়ে তাঁর ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও বলেন, আইন পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে এবং সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে। অর্থাৎ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সিইসি অপপ্রচার রোধে সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানান। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হবে।
আমরা আশা করি, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আর কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। দ্রুত নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করা হবে।