*জনগণের প্রতি জুলুম হয়েছে: মনির চৌধুরী
*জনগণের পক্ষেই শেষ সিদ্ধান্ত যাবে: ড. মারুফকুমিল্লার ৬টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের খসড়া তালিকা প্রকাশের পর এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। জেলার ১১টি আসনের মধ্যে ৬টিতেই সীমানা পরিবর্তনের যে বিন্যাস, তাতে এলোমেলো হয়ে গেছে পুরনো চিত্র। সেইসব আসন থেকে শুধু জনপ্রতিনিধি নয়, বরং নতুন বিন্যাসের আসন নিয়ে ভোটাররাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন- ‘এ বিন্যাস ছিল অপ্রত্যাশিত।’ অপরদিকে, নতুন এ আসন বিন্যাসের ফলে ভোটের হিসেবেও ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। সেই সাথে আসনগুলোতে পাল্টে যেতে পারে বিভিন্ন দলের প্রার্থীও।
যদিও কমিশন বলছে, সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আদমশুমারি- এ তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলছেন- যেহেতু এখনো চূড়ান্ত বিন্যাস হয়নি, তাই কমিশন নিশ্চয়ই জনপ্রত্যাশা পূরণ করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী এ বিন্যাস ঘটাবেন।
বুধবার (৩০ জুলাই) কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬টি আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত খসড়ায় দেখা যায়, কুমিল্লা-৯ আসনের সদর দক্ষিণ উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আসনের সাথে। কুমিল্লা-১০ লাকসাম আসন ভেঙে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে যাওয়া হয়েছে নাঙ্গলকোট উপজেলার সাথে- আর কুমিল্লা-৯ আসনের লালমাই উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে লাকসামের সাথে। অন্যদিকে, কুমিল্লা-১ আসনে দাউদকান্দি উপজেলার সাথে আবার যুক্ত হয়েছে মেঘনা উপজেলা, আর কুমিল্লা-২ আসনে হোমনা উপজেলার সাথে গেছে তিতাস উপজেলা।
তবে নতুন এই আসন বিন্যাসের খসড়া প্রকাশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মনিরুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, “এটা উন্মাদের কাণ্ড। সংস্কার কমিশনের নামে উন্মাদের প্রস্তাব। আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব, প্রতিরোধ করব। তারপরও এ বিন্যাসেই নির্বাচন দেয়- তিন আসন থেকেই প্রার্থী হব।”
তিনি বলেন, “সংস্কার কমিটিতে যারা আছেন, তারা জীবনে কোনো ভোটও দেননি, প্রার্থীও হননি। তারা কুমিল্লা দক্ষিণকে চেনেন না। আগে আক্রমণ করেছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণকে, এখন আক্রমণ করেছে নাঙ্গলকোটকে, চৌদ্দগ্রামকে এবং লাকসামকে। এটা মগের মুলুক বানিয়েছে। নির্বাচনে দুই উপজেলাকে যদি একত্র করতে হয়, তাহলে ছোট উপজেলার সাথে বড় উপজেলা একত্র হওয়ার কথা। তাদেরকে দেখতে বলেন, সবচেয়ে ছোট উপজেলা কোনটা।”
তিনি বলেন, “এ আসন বিন্যাসে জনগণ কী করবে- এটা জনগণের সিদ্ধান্ত। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- এ বিরুদ্ধেই আইনগত সর্বাত্মক লড়াই করব। আমি বিশ্বাস করি, যারা এ প্রস্তাব দিয়েছে, যে উপর থেকেই আসুক না কেন- তাদের কেউ কোনোদিন নির্বাচনে জড়িত ছিল না। ভূগোল আর ইতিহাস পড়ে নির্বাচনী এলাকা গঠন চলে না। যে নির্বাচনী এলাকার কারণে উপজেলা হয়েছে, এটাকে তৃতীয়বারের মতো ষড়যন্ত্রকারীরা তিনভাগ করলো। এটা জনগণের প্রতি জুলুম হয়েছে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন বলেন, “দাউদকান্দি, তিতাস, মেঘনা, হোমনা- এ চার উপজেলার মানুষের কল্যাণে যেটা হয়, যেভাবে করলে মানুষের উপকার হবে, সকল সেবা পাবে, সেটাকেই চিন্তা করেই ইলেকশন কমিশন ফাইনালি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলেই বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, জনগণের পক্ষেই শেষ সিদ্ধান্ত যাবে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেন, “নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আসন পুনঃবিন্যাসের একটি খসড়া প্রস্তাবনা প্রকাশ করা নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ আসনের জনগণের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ- আপনাদের হতাশা বা অতিউৎসাহের কোনো কারণ নেই। এখানে লালমাই এবং মনোহরগঞ্জের জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। তাদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনে পুনরায় সংক্ষুব্ধ আবেদন করার সুযোগ আছে। মনোহরগঞ্জবাসী সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কি নাঙ্গলকোটের সাথে যেতে আগ্রহী? না লাকসামে থাকতে আগ্রহী? তেমনি লালমাইবাসী সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কি নাঙ্গলকোটের সাথে থাকতে আগ্রহী? না লাকসামের সাথে যেতে আগ্রহী?”
তিনি আরও বলেন, “আমি বিএনপির একজন কর্মী। আসন বিন্যাস নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। বিএনপি একটি জনপ্রিয় দল। আসন যেখানেই হোক, মানুষ ধানের শীষে ভোট দেবে। নাঙ্গলকোটে হলেও ধানের শীষে ভোট দেবে, লালমাই হলেও ধানের শীষেই ভোট দেবে।”