শ্রাবণ
মাসের শেষদিকে গুরি গুরি বৃষ্টি আবারও মাঝে মধ্যে কাক ফাটা রোদ ঝলক দিয়ে
পশ্চিম আকাশের ফোটে উঠছে। রাস্তায় মানুষের সমাগম একেবারেই নেই ।মঙ্গলবার
(২৯ জুলাই) সাহেবাবাদ বাজারের দক্ষিণ পাশে নগরপাড় এলাকায় কথা হয় তার সাথে।
তার কাঁধে মাছ ধরার চাঁইয়ের মতো ব্যতিক্রমধর্মী কিছু।
তার নাম নরেশ
সরকার ( ৫৩) । তিনি এসেছেন হবিগঞ্জ জেলার থোকাই উপজেলার হরিনাখোলা গ্রাম
থেকে। তিনি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে তিনি কুঁচিয়া
মাছ শিকার করে। এক মেয়ে দুই ছেলে স্ত্রীকে এবং মাকে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার
তার।
নরেশ সরকার এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে
খাল, বিল ও জলাশয়ে চাঁই পেতে কুঁচিয়া ধরে বিক্রি করে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ
জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি। বছরের সব দিন এ কাজ করলেও বর্ষা মৌসুমে এই
কাজে লাভ বেশি। তবে শীতকালে সংসার চালাতে এই পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ করতে
হয় তাকে। বর্ষা মৌসুমে কুঁচিয়া মাছ ধরে প্রতিদিন গড়ে ৮শ থেকে ৯শ টাকা
উপার্জন হয় তার। এই উপার্জন দিয়েই চলছে তার ৬ সদস্যের সংসার।
নরেশ আরো
বলেন, এ পেশায় জড়ানোর আগে আমি দিনমজুরের কাজ করতাম। সবসময় হাতে কাজ থাকত
না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। একদিন কুঁচিয়া মাছ ধরার এক ব্যক্তির
সঙ্গে দেখা হয়। তার সঙ্গে কথা বলে ও আয়ের আশা দেখে এ পেশায় জড়িয়ে পড়ি। তার
কাছ থেকেই শিখেছি কুঁচিয়া ধরার কলাকৌশল। তারপর থেকে মনেপ্রাণে এ পেশায় এখনো
আছি। এ মাছটির বিদেশে বেশ চাহিদা থাকায় এর কদরও রয়েছে।
কুঁচিয়া মাছ
কীভাবে ধরেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে
চাঁইয়ের ভেতর কেঁচো দিয়ে চাঁইগুলো খাল, বিল, ও বিভিন্ন জলাশয়ে খুঁটি গেড়ে
পেতে রাখি। তার পরদিন আবার চাঁইগুলো উঠিয়ে নিই। পরে চাঁইগুলো থেকে কুঁচিয়া
সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বাজার ওঠানামা করার কারণে প্রতি কেজি ৩০০ আবার
কখনও ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করি। পাতানো সব চাঁইয়ে কুঁচিয়া না ধরা পড়লেও যে
কয়টাতে ধরা পরে তাতে আড়াই থেকে ৩ কেজি কুঁচিয়া পাই। কোনো কোনো দিন এর বেশিও
পাই, আবার কোনো কোনো দিন কম কুঁচিয়া ধরা পড়ে। তবে কোনো দিন খালি হাতে ফিরি
না। কুঁচিয়া জীবিত রাখতে বড় বালতির পানিতে জিইয়ে রাখি।
তিনি বলেন, এ
পেশায় কষ্টও আছে। প্রতিদিন কেঁচো সংগ্রহ করা এবং প্রতিটি চাঁইয়ে কেঁচো
ঢুকিয়ে অনেক জায়গা হেঁটে হেঁটে কুঁচিয়া থাকতে পারে এরকম স্থানে পাততে হয়।
পরদিন আবারও হেঁটে হেঁটে সব চাঁই তুলে আনতে হয়। এতে বেশ পরিশ্রমও হয়।
সারাদিনের ধকল শেষে রাতে হাত-পা ব্যথা করে। তবে আমার এ পেশা আমার ছেলেদের
নিয়োজিত করতে চাই না।তবে আমার ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করছে এবং মেয়েকে বিয়ে
দিয়েছি। ছেলেরা পড়াশোনা করে কাজে লাগলেই আমি এ পেশা ছেড়ে দিব।