অনিরাপদ
হয়ে উঠেছে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
কুমিল্লা অংশ। কি দিন আর কি রাত। সমান তালে পাল্লা দিয়ে অহরহ মহাসড়কের
কুমিল্লা অংশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের মতো জঘন্য
ঘটনা। হাইওয়ে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ কার্যক্রম না থাকায়
মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ এখন আতংকের সড়কে পরিণত হয়েছে।
রাতের বেলা
মহাসড়কের দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়ক অতিক্রম
করার সময় বেশ আতংকে থাকতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। বিশেষ করে দাউদকান্দির
গৌরীপুর থেকে চান্দিনার মাধাইয়া পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা খুব বেশি
বিপদজনক হয়ে উঠেছে। এমন কোন রাত নেই যে কোন একটি ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা
ঘটেনি। যে পরিমান ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে তার ১০ শতাংশ ঘটনাও
জানে না পুলিশ। আবার মামলার ঝামেলা এড়াতে পুলিশেও অভিযোগ করেনা অধিকাংশ
ভূক্তভোগী।
২৬ জুলাই (শুক্রবার) রাতে মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার
বানিয়াপাড়া এলাকায় কাপড় ভর্তি কাভার্ডভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ২০ জুলাই
(রবিবার) রাত পৌঁনে ১টায় দাউদকান্দির টামটা এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা
ফেনীর দাগনভূইয়াগামী একটি মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১৭ জুলাই
(মঙ্গলবার) রাত ৩টায় মহাসড়কের চান্দিনা ও দেবীদ্বারের সীমান্তবর্তী কুরছাপ
এলাকায় নোয়াখালী সোনাইমুড়ি এলাকায় এক প্রবাসীর মাইক্রোবাসে রড ছুড়ে ডাকাতির
ঘটনা ঘটে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চান্দিনার কাঠেরপুল এলাকায় দিন দুপুরে
মাইক্রোবাসে করে চান্দিনার এক হোমিও চিকিৎসককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ৩
লক্ষ টাকা মুক্তিপনের পর রাতে চোখ বেঁধে দাউদকান্দির শহীদনগর এলাকায় গাড়ি
থেকে নামিয়ে দেয়। মহাসড়কের বিভিন্ন স্টেশন এলাকাগুলোতে ছিনতাইয়ের অহরহ ঘটনা
ঘটছে। এছাড়া চলতি বছরের মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অন্তত
অর্ধশতাধিক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা রয়েছে।
২৬ জুলাই রাতে মহাসড়কের
বানিয়াপাড়া থেকে কাভার্ডভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভূক্তভোগী চান্দিনার কাপড়
ব্যবসায়ী তাপস মজুমদার জানান- আমরা কয়েকজন ব্যবসায়ী একত্রিত হয়ে প্রতিনিয়ত
বাবুরহাট থেকে কাপড় কিনে ট্রান্সপোর্টে দিয়ে আসি। ২৬ জুলাই আমরা ১৮জন
ব্যবসায়ী প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার কাপড় কিনে নিরাপদ ট্রান্সপোর্টে দেই।
ট্রান্সপোর্টের কাভার্ডভ্যানটি দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া পৌঁছলে পিছন থেকে
একটি পিকআপ এসে কাভার্ডভ্যানের গতিরোধ করে এবং চালককে সরিয়ে তারা গাড়ির
নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিরাপদ ট্রান্সপোর্টের পক্ষ থেকে
দাউদকান্দি মডেল থানায় মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত (২৯ জুলাই)
গাড়ি ও মালামালের কোন খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশ।
প্রাইভেটকার চালক মেহেদী
হাসান জানান- আমরা রাতে যখনই ঢাকা থেকে আসি, তখন দাউদকান্দির গৌরীপুর
অতিক্রম করার পর থেকে সাবধান থাকি। বিশেষ করে টামটা, ইলিয়টগঞ্জ চান্দিনার
তীরচর, গোমতা, নাওতলা, দোতলা, কুরছাপ এলাকায় খুব বেশি সতর্ক থাকি। ওই সমস্ত
স্থানে ডাকাতরা উঁৎ পেতে থাকে এবং গাড়িতে রড ছুড়ে মারে। আবার কখনও পিকআপ
দিয়ে আমাদের ছোটগাড়ি গুলোকে চাপ দেয় যাতে বাধ্য হয়ে আমরা গাড়ি থামাই। তখনই
তারা ডাকাতি করে।
মাইক্রোবাস চালক সাদ্দাম হোসেন জানান- ডাকাতরা ডাকাতি
শেষে এখন চালকদের ফাঁসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে ডাকাতির পর চালককে ‘মামা’
বা ‘ভাগিনা’ বলে চলে যায়। তখন যাত্রীরা চালককেও ডাকাত দলের সদস্য বলে
অভিযুক্ত করে। এমন ঘটনা গত দুই মাস আগে চান্দিনাতেও ঘটছে।
দাউদকান্দি
মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. জুনায়েদ চৌধুরী জানান- ২৬ জুলাই
কাভার্ডভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু অন্য কোন ঘটনা
আমাদের জানা নেই। কাপড়ভর্তি কাভার্ডভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমাদের পুলিশ কাজ
করছে।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়ন পুলিশ সুপার খায়রুল আলম জানান- ২৬
জুলাই কাভার্ডভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং থানায় মামলা সংক্রান্ত বিষয়টি
আমাকে কেউ অবহিত করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যেসকল ভূক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
যদি কোন ভূক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ না করে তাহলে সেটা আমাদের পক্ষে
জানাও কষ্ট হয়ে পড়ে। মহাসড়কে আমাদের হাইওয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।