কুমিল্লার
দেবিদ্বারে ৬ বছরের এক শিশুকে রাস্তা থেকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে নির্মাণাধীন
একটি বাড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আরমান হোসেন ভূঁইয়া নামে এক কিশোরের
বিরুদ্ধে। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর টানা দুই দিন ভুক্তভোগী শিশুটিকে কোনো
চিকিৎসা না দিয়ে বাড়িতে রাখা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি
হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (কুমেক) এ নিয়ে
আসা হয়। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)-এ
মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গত রবিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকালে
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
তবে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকালে এ ঘটনা জানাজানি হলে ক্ষুব্দ হয়ে
উঠেন এলাকাবাসী। এ ঘটনার পাঁচদিন পরও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের চাপে
শিশুটির দরিদ্র পরিবার থানায় মামলা করতে পারেনি বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত
আরমান হোসেন ভূঁইয়া (১৭) কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে। এ ঘটনায়
অভিযুক্ত আরমান হোসেন ভূঁইয়াকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারিনি পুলিশ।
স্থানীয়
সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার বিকেলে পার্শ্ববর্তী বাড়ি থেকে আরবী পড়ে
বাড়ি ফিরছিল শিশুটি। পথে গোপালনগর গ্রামের আল-আমিন মেম্বার বাড়ির একটি
নির্মাণাধীণ নির্জন ভবনে শিশুটি ফুঁসলিয়ে নিয়ে মুখ চেপে জোরপূর্বক ধর্ষণ
করে আরমান।
ভুক্তভোগীর শিশুটির দাদি জানায়, আমার নাতিন এখন কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে। ঘটনার দিন
সন্ধ্যায় আমার নাতিন বাড়ি এসে তার মাকে ঘটনা জানায়। প্রথমে লোকলজ্জার ভয়ে
কাউকে জানানো হয়নি। ঘটনার তিনদিন পর নাতিন অসয্য যন্ত্রণায় বিছানায়
কাতরাচ্ছে, কিন্তু এলাকার কয়েকজন লোক চাপ দেয় যেন তাকে হাসপাতালে না নেওয়া
হয়। শেষমেশ মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে প্রতিবেশী দাদা স্বপন ভূঁইয়াকে এ
অবস্থার কথা জানালে তিনি আমার নাতিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুনেছি এখনও আমার নাতিনের অবস্থা ভালো না।
হাসপাতাল
থেকে শিশুটির বাবা বলেন, “চারদিন ধরে আমার মেয়েটা মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আর
একটি প্রভাবশালী মহল বিচার না করে উল্টো মিমাংসার কথা বলে মামলা না করতে
চাপ দিচ্ছে। আমরা গরীব বলে কি বিচার পাব না?”
মেয়ের প্রতিবেশী দাদা
মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার তিন দিন পর মেয়ের দাদি আমার
বাড়িতে এসে এ ঘটনা জানালে আমি এলাকার কয়েকজনকে জানিয়ে রাত ২টার দিকে দ্রুত
শিশুটিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর ওখানে তাকে
বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। বর্তমানে শিশুটি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিসে
চিকিৎসাধীন রয়েছে। মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন শুনেতেছি ঘটনাটি ধামাচাপা
দিতে এলাকার কিছু লোক মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি
থানায় অবগত করেছি।
অভিযুক্ত আরমান হোসেন ভূঁইয়ার বাবা মোবারক হোসেন
ভূঁইয়া বলেন, শুনেছি শিশুটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু পাওয়া যায় নাই।
হয়তো দস্তাদস্তি হয়েছে কিন্তু কিছুই হয়নি, ধর্ষণের ঘটনাটি মিথ্যা। তারা
দুইজনেই ছোট বাচ্চা। আমরা এলাকাবাসীর সঙ্গে বসে মেয়ের বাবার সাথে মীমাংসা
করেছি এখন আর কোন সমস্যা নেই।
রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
মো.শাহজাহান সরকার বলেন, ধর্ষণের ঘটনাটি আমি শুনেছি, মেয়েটি বর্তমানে
মুমূর্ষ অবস্থায় মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমি তার বাবার সঙ্গে
সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। ঘটনাটি মর্মাান্তিক, অভিযুক্তকে আইনের আওতায়
আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)
গোলাম সারোয়ার বলেন, আমি চারদিন ছুটিতে ছিলাম, ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের
মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শিশুটির পক্ষ থেকে
থানায় কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
