
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার বিএনপিকে ‘বাঁচাতে’ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে ইয়াছিন বলেন, প্রিয় নেতা, দলের কোনো ক্ষতি হলে আমরা যেমন কষ্ট পাই, তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাবেন আপনি। আপনি কুমিল্লার বিএনপিকে বাঁচান। আমরা কুমিল্লার মানুষ প্রস্তুত আছি। আপনি কুমিল্লা-৬ আসন থেকে নির্বাচন করুন। শুধু নমিনেশন জমা দিন-আমরা নেতাকর্মীরা ইনশাল্লাহ লক্ষ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে আপনাকে বিজয়ী করবো। কুমিল্লা-০৬ আসনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি আমাদের বিশেষ অনুরোধ-কুমিল্লার বিএনপিকে বাঁচান। হাজার হাজার নেতাকর্মী আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আপনাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। এটি আমাদের অন্তরের কথা, প্রাণের কথা, মনের কথা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই আমার প্রিয় নেতা জনাব তারেক রহমানকে। তাঁর রাজনীতি করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য ও সার্থক মনে করি। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে তিনি বাংলার মাটিকে বুকে ধারণ করেছেন—এর মাধ্যমে তিনি ১৮ কোটি মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। এই দৃশ্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুগ্ধ করেছে। বাংলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল।
তিনি বলেন, রাজনীতি আমার পেশা নয়, রাজনীতি আমার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম নয়, রাজনীতি আমার অর্থ উপার্জনের পথও নয়—কখনো ছিল না, হবেও না। আমি রাজনীতি করি কুমিল্লার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য। শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সেই আদর্শ ধারণ করে আমি সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি রাজনীতি করি কুমিল্লার মাটি ও মানুষের জন্য—খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, যুবসমাজ এবং মা-বোনদের জন্য। একটি সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধ কুমিল্লা গড়ে তোলাই আমার রাজনীতির মূল লক্ষ্য।
হাজী ইয়াছিন বলেন, এখানে উপস্থিত প্রতিটি নেতাকর্মী বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫টি মামলা মোকাবিলা করে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁরা সবাই শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া পরীক্ষিত সৈনিক। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই জানেন—আমার দ্বারা কখনো দলের ক্ষতি বা বদনাম হয়নি। আমাদের প্রিয় নেতা বহু দূরে থাকায় হয়তো কুমিল্লার বাস্তব চিত্র তাঁর কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়নি।
তিনি বলেন, আপনারা আমার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন—আমি জানি আপনারা আমাকে ভালোবাসেন। প্রাথমিক মনোনয়ন ও দলীয় কাগজপত্র অন্য একজন পেলেও আপনারা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন। এখনো মনোনয়ন জমা দেওয়ার কিছু সময় বাকি আছে—এই সময়ের মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
হাজী ইয়াছিন বলেন, আমি যেমন একজন বিশ্বস্ত জাতীয়তাবাদী কর্মী, তেমনি এখানকার নেতাকর্মীরাও অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা সত্ত্বেও দল ছাড়েননি। তাই হাজার হাজার নেতাকর্মীর কণ্ঠের সঙ্গে একাত্ম হয়ে প্রিয় নেতার কাছে বিনীত অনুরোধ—বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করুন। আমরা দলটাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি, এই দলের জন্য আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখুন—যদি শতকরা আশি ভাগ নেতাকর্মী একমত না হন, তবে আমি মনোনয়ন চাইবো না। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রিয় নেতা আমাদের এই আবেদন বিবেচনায় নেবেন।
সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এ বারী সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল কাইয়ুম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান ছুটি, শহীদুল্লাহ রতন, মাহবুবুর রহমান দুলাল, আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম রায়হান, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য মজিবুর রহমান কামাল, রিয়াজ খান রাজু, মনির হোসেন পারভেজ।
এছাড়াও বক্তব্য দেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি হাজী আনোয়ারুল হক, কুমিল্লা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সৈয়দ মেরাজ, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আমিরুল পাশা সিদ্দিকী রাকিব, কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রোমান হাসান, কুমিল্লা জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু, কুমিল্লা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর কৃষকদলের সভাপতি কাজী শাহিনুর ও সাধারণ সম্পাদক ইকরাম হোসেন তাজ, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ রানা, কুমিল্লা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী জুবায়ের আলম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ধীমান, কুমিল্লা মহানগর জাসাসের সভাপতি মনজুরুল আলম মঞ্জু, মহানগর তাঁতী দলের আহ্বায়ক রেজাউল ও সদস্য সচিব নবী উল্লাহ নবী, কুমিল্লা মহানগর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।
এছাড়া আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ও অংশ নেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে কুমিল্লা-০৬ আসনের প্রতিটি নেতাকর্মী জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ সময় হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন নেতাকর্মীদের জামিন, কারামুক্তি, আইনি সহায়তা প্রদান, আহতদের চিকিৎসা, পরিবারগুলোর দেখাশোনা, ভরণপোষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করে পাশে থেকেছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি কখনো পিছপা হননি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ করে ভিন্ন একটি আসনের প্রার্থীকে কুমিল্লা-০৬ আসনে ধানের প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি থেকে পরে জাতীয় পার্টি হয়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়া ব্যাক্তি এই আসনে ধানের প্রতীকে নির্বাচন করবেন—এটি কুমিল্লা-০৬-এর নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। এ আসনে হয়তো হাজী ইয়াছিন ধানের শীষের নির্বাচন করবেন, নয়তো দেশ নায়ক তারেক রহমান নির্বাচন করবেন, তৃণমূলের ম্যাসেস ক্লিয়ার।।
নেতাকর্মীরা আরও বলেন, হাজী ইয়াছিন নিজের ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ দলের পেছনে ব্যয় করেছেন, শ্রম ও সময় দিয়েছেন। তিনি কখনো ঠিকাদারি বা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতিটি মিছিল, সভা-সমাবেশের ব্যানার থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ তিনি নিজ উদ্যোগে বহন করেছেন।
বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বিগত ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। আগামী দিনে আবারও হাজী ইয়াছিন ভাইকে কুমিল্লা-০৬ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
নেতাকর্মীরা হাজী ইয়াছিনের ত্যাগ, সততা ও নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই আসনের মানুষের সুখ-দুঃখে তিনি সবসময় পাশে ছিলেন এবং থাকবেন।
