ফুটফুটে
এক নবজাতক ঘুমিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের বিছানায়।
কিছুক্ষণ পর পর তাকে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে মানুষ। তবে হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ সবাইকে সে সুযোগ দিচ্ছে না।
পরিচয়বিহীন এই মেয়ে শিশুকে বুকে
জড়িয়ে নিতে অর্থাৎ দত্তকের জন্য সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অন্তত ১৫টি
আবেদন জমা পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। আবেদন করার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন
আরও কয়েকজন। জটিলতা এড়াতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলা শিশু কল্যাণ
বোর্ডের সভাপতি বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে আগ্রহীদের।
রোববার খুলনার
ফুলতলা উপজেলার একটি সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। জন্মের পরপরই
কে বা কারা তাকে ফেলে যায় সেখানে। উপজেলা প্রশাসনের হাত ঘুরে পরে তার স্থান
হয়েছে খুলনা মেডিকেলে। এরইমধ্যে ফেসবুকে ফুটফুটে শিশুটির ছবি ছড়িয়ে পড়লে
চাঞ্চল্য দেখা দেয়। তারপর থেকে শিশুটি এক নজর দেখতে হাসপাতালে আসছেন
অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, রোববার ভোরে ফুলতলা উপজেলার
দামোদর ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় সড়কের পাশ থেকে নবজাতকের কান্নার শব্দ
আসছিল। শব্দ পেয়ে স্থানীয় সোনিয়া বেগম সেখান গিয়ে ওই নবজাতককে দেখতে পান।
এরপর সোনিয়া ও তার প্রতিবেশী তুলি বেগম শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান
ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। খবর পেয়ে সেখানে যান ইউএনও তাসনীম
জাহানসহ সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। পরে শিশুটিকে খুমেক হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়।
আজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে আসছে শিশুটিকে দত্তক
নিতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, 'আমার দুটি
ছেলে। ফেসবুকে মেয়ে শিশুটি দেখে স্ত্রী হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আমার খুব মায়া
হয়েছে। ওকে কেউ না নিলে আমরা শিশুটি দত্তক নিতে চাই।'
হাসপাতালের নবজাতক
বিভাগের প্রধান ডা. ফররুখ আহাম্মদ জানান, শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।
মঙ্গলবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের
প্রবেশন কর্মকর্তা ও ফুলতলা উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত
দায়িত্ব) আবিদা আফরিন বলেন, 'শিশুটির দায়িত্ব নিতে এখন পর্যন্ত ১৫ জন আবেদন
করেছেন। আবেদনগুলো নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায়
আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে শিশুটি
খুলনার মহেশ্বরপাশা ছোটমনি নিবাসে থাকবে।'
ফুলতলা থানার ওসি জেল্লাল
হোসেন বলেন, 'নবজাতক উদ্ধারের পর আশপাশে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রকৃত
বাবা-মায়ের বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউ পরিচয় দাবি করে যোগাযোগও
করেনি।'