নিজস্ব
প্রতিবেদক।। শিক্ষক হচ্ছেন জাতি গঠনের প্রকৃত কারিগর। তাঁদের অবদানের ঋণ
কোনোভাবে শোধ করার নয়। তবে কোমাল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন
শিক্ষার্থীরা সেই ঋণ শোধের এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস দেখিয়েছেন। বিদায়ী
সম্মাননা বলতে আমরা সাধারণত স্মারক, ক্রেস্ট কিংবা ফুলেল শুভেচ্ছায়
সীমাবদ্ধ থাকি। কিন্তু এবার বিদায় জানানো হয়েছে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন
করে, উমরাহ হজ্বের ব্যবস্থা করে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা
উত্তর ইউনিয়নের কোমাল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক- আমিন
আহম্মেদ (বিএসসি. বিএড), এ.কে.এম মফিজুর রহমান (বিএসসি, বি.এড), আবদুল
মবিন এর বিদায় জানানোর জন্য এক ব্যতিক্রমী আয়োজন করে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন
শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পবিত্র মক্কা ও মদিনা
জেয়ারতের উদ্দেশ্যে উমরাহ পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ খরচ বহনের একটি
প্যাকেজ। এমন উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিন শিক্ষকই। অনেকের চোখে তখন
আনন্দাশ্রু।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তারা বলেন, 'আমরা শিক্ষক হিসেবে
গর্ববোধ করছি, আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে এভাবে সম্মানিত করবে।
বাংলাদেশে কোথাও এমন সুন্দর ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা আমাদের
জানা নেই। আমরা তাদের জন্য মন ভরে দোয়া করি, যারা যেন জীবনে সফল হয়।
বিদায়
অনুষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল প্রিয় শিক্ষকদের
স্মৃতিচারণ। কেউ বললেন, এই শিক্ষকদের হাত ধরেই তারা মানুষ হয়ে উঠেছেন, কেউ
আবার কণ্ঠ রুদ্ধ করে স্মরণ করলেন শৈশবের নানা ঘটনা। সবার কণ্ঠে ছিল
কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার গভীরতা। অনেকে প্রিয় শিক্ষকদের বিদায়ে ঝরিয়েছেন
অশ্রু।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও
অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, এন্ট্রাস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান রিপন। তিনি বক্তব্যে বলেন, আয়োজকদের
ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর করে সবকিছু সাজানোর জন্য। এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা
কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হতে পেরেছি। কারণ দায় এড়ানোর সুযোগ কারোরই নেই। দায়
এড়ানো কোন ভাল গুণ নয়। সবাইকে দায় নিতে হবে।"
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য
রাখেন বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক সফিকুর রহমান খান। তিনি বলেন, এই
আয়োজনের সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা শিক্ষকরা ভালো ফলাফল
করানোর জন্য আমরা চেষ্টা করি। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকেও চেষ্টা
করতে হবে। তাহলেই বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে।
পাশাপাশি,
অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালে কোমাল্লা মাধ্যমিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায়
উর্ত্তীর্ণ হওয়া কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে সংবর্ধনা তুলে দেওয়া হয়।
এসময় অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতি যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।