
ঘরের
ভেতরেই প্রবাহিত হচ্ছে ময়লা পানির স্রোত,তার উপর চুলা জ্বালিয়ে
রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত এক মা; পাশেই দুর্গন্ধযুক্ত পঁচাপানির উপর
মাছধরায় মেতে আছেন শিশুরা। তবে তারা জানেনা এ পানি তাদের আনন্দ নয়
অসুখ!ঘরের ভেতরও হাঁটু সমান পানি।আসবাবপত্রের একাংশ পানির নিচে। গলির
রাস্তায় হুছুট খেয়ে পড়ে হাত ভেঙে খাঁটের উপর শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধ বাবা।
নর্দমাযুক্ত পানি ভেঙে স্কুল-কলেছে যেতে পারছেননা ছাত্রছাত্রীরা। চরম
বিঘ্নিত ঘটছে তাদের পড়ালেখায়। রাত হলেই বাড়ে পোকা-মাকর ও সাপের ভয়।পানিতে
থাকতে থাকতে শিশুসহ অনেকের হাত-পায়ে দেখা দিয়েছে ঘা, চর্মরোগ সহ বিভিন্ন
পানিবাহিত রোগ;জ্বর-ঠান্ডাতো লেগেই আছে!অসুস্থ রুগিকে দ্রুত হসপিটালে
নেওয়ারও সুযোগ নেই।
পানির কারণে যানবাহনের দেখা দেয় ক্রুটি। এমন
নারকীয় ভোগান্তি ছেড়ে কেউ কেউ নিজের জলমগ্ন বাড়িঘর ফেলে আত্মীয়ের বাসায়
আশ্রয় নিয়েছেন।সরেজমিনে দেখা যায় গলির প্রতিটি ঘরে ঘরে একই চিত্র।তাদের এই
ভোগান্তি শুধু একদিনের নয়,বারো মাসের।ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানতে
পারলাম, কুমিল্লা নগরীর চানপুর এলাকার ৫০হাজার মানুষ পানিবন্দি দুঃসহ জীবন
পাড় করছেন।চানপুর দক্ষিণপাড়া বেবিস্ট্যান্ড থেকে নাজির মসজিদ পর্যন্ত
রাস্তাটি বৃষ্টি এলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।মজুমদারবাড়ি গলি, একগম্বুজ মসজিদ
গলি সহ চানপুর মধ্যম ও উত্তরপাড়ার কিছু গলির মানুষ বারো মাসই পানিবন্দি
থাকেন।বহুদিন ধরে রাস্তার উন্নয়ণ কাজ না করা, গলির ড্রেনিং ব্যবস্থার
দুর্বলতা, নালা ভরাট এর মূল কারণ।এছাড়াও এলাকার মানুষের দাবী এ এলাকার পানি
নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মেথর পট্টিরবাঁধ এটা ভেঙে দিলে এ এলাকার
মানুষের ভোগান্তি অনেকটা হ্রাস পাবে।

মধ্যমপাড়ার
আরবআলী উস্তাগারের বাড়ির বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী রশিদ মিয়া বলেন,আমাদের গলির
সকলের বাসা পানির নিচে।ঘরের ভেতর প্রবেশ করে নিজের ঘরের পরিবেশ দেখিয়ে
দেখিয়ে ভোগান্তির বর্ণনা দিচ্ছেন।ঘরে অসুস্থ বাবা।এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে
যেতে দেখা যায় আসবাব পত্র পানির নিচে।শুধু বিছানার উপরের অংশই দেখা যায়।তার
স্ত্রী দুপুরের রান্না করছে পানির উপর দাঁড়িয়ে।তিনি বলেন আমার ৩২হাজার
টাকার নতুন আসবাবপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।সন্তানরা পানির জন্য স্কুলে
যেতে পারছেনা।ঘরের ভেতর পানি থাকায় তাদের হাত পায়ে খোঁসপাচরা দেখা
দিয়েছে।তিনি নিরুপায় দৃষ্টিতে বলেন,আমরা কি এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবোনা?
ভুক্তভোগী
আরেক বাসিন্দা জানান,পানি বন্দি জীবন আমরা বারো মাসই কাটাই।অনেকেই আসে ছবি
তুলে নেয়,নিউজ করে, কিন্তু কোনো লাভ নেই।আমাদের দেখার কেউ নেই।আমাদের
অবস্থা দেখেন।নর্দমার পানি বৃষ্টির পানি সব এক হয়ে ঘরের ভেতর ডুকে আছে।
এখানে কি থাকা যায়?মানুষ এমন জায়গায় থাকতে পারে?আমাদের বাচ্ছাগুলো অসুস্থ
হয়ে পড়ছে।নিজেরাও আর এ পানি সহ্য করতে পারছিনা।
কুমিল্লা আদর্শ সদর
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে তার বাবা অটো রিকশায় কোলে করে তুলে
দিচ্ছেন। পানিতে যেন স্কুলের পোশাকটি না ভিজে যায়।তার সাথে কথা বলতে গেলে ঐ
শিক্ষার্থী জানান,গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।পানির কারণে সহজে
অটো পাওয়া যায় না।মাঝে মাঝে আমরা স্কুলে যাওয়ার সময় এ ময়লাযুক্ত পানিতে পড়ে
যাই। তাই বাবা আমাকে প্রতিদিন এভাবে কোলে তুলে গাড়িতে তুলে দেয়।
চানপুর
একগম্বুজ মসজিদ গলি, তার আশেপাশের দোকানীরা জানান এ পানির জন্য যেমন
চলাফেরায় ভোগান্তির সৃষ্টি হয় তেমন ব্যবসা বাণিজ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে অনেক।এক
ব্যবসায়ী বলেন ঘর থেকে মানুষ বের হতেই পারেনা, দোকানে কিভাবে আসবে?দোকান
পকটেও পানি জমে থাকে।আসলে আমরা নরকের উপর বাস করছি।আমাদেরকে আপনারা উদ্ধার
করেন।
সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ
মামুন জানান, আমি যতোটুকু জানি সম্ভবত এলাকাটি সিটিকর্পোরেশনের ভেতর
নয়।আমি খোঁজ নেবো।যদি কুসিকের ভেতরে হয় অবশ্যই জরুরীভাবে পদক্ষেপ নেবো।