কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ইউসুফ ভুইয়া টিপু নামে এক জুতা ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক সাব্বির মাহমুদ চৌধুরী এ রায় দেন। এছাড়াও রায়ে আরো ৬ জন আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
তবে সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামি পলাতক রয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। মামলা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি ইফতেখার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০০৯ সালের ১৬ মে দিবাগত মধ্যরাতে বাড়ির উঠোনের যাকাত দলের গুলিতে নিহত হন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার তারাশাইল গ্রামের বাসিন্দা জুতা ব্যবসায়ী ইউসুফ ভুইয়া টিপু।
আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মরকোটা গ্রামের মৃত ডাঃ আবুল হাসেমের ছেলে মেহেদী হাসান জামশেদ (২১) ও একই উপজেলার দক্ষিণ চর চান্দিয়া গ্রামের মনির আহাম্মদ ডিলারের ছেলে শহীদুল ইসলাম মাসুদ ওরফে মাসুম (৩২)।
এছাড়াও ১০ বছর করে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ফেনী সোনাগাজী উপজেলার চান্দলা পাটোয়ারী বাড়ীর মৃত আবুল কালামের ছেলে মোঃ জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী (৩২), কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গাংরা (ধানছা) গ্রামের মৃত আঃ হালিমের ছেলে মোঃ জামাল হোসেন মানিক (৩১) ও ধোরকড়া গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ একরামুল হক মিলন (৪১), নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মঙ্গলকান্দি গ্রামের রুহুল আমিনেট ছেলে ইব্রাহিম ওরফে বড় মিয়া (৪৫), ফেনী সোনা গাজী উপজেলার সহদিয়া গ্রামের মোঃ দুলাল মিয়ার ছেলে মোঃ আলাউদ্দিন তোতা (২৮) ও চট্টগ্রাম মীরশ্বরাই উপজেলার পশ্চিম সোনাই গ্রামের মৃত মুজাফফর হোসেনের ছেলে মোঃ শাহাবুদ্দিন (৩৮)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৬ মে দিবাগত রাত ২টার দিকে ইউসুফ ভাইয়া টিপু (২৮) প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে বাড়ির উঠোনে ডাকাত দলের সামনে পড়ে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা টিপুকে ঝাপটে ধরে গুলি করে পালিয়ে যায়। এরপর টিপুর শোরচিৎকারে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় টিপুর পিতা মোহাম্মদ আলী (৭৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। সে সময় ওই চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। তবে পরবর্তীতে তারা জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
পরবর্তীতে আদালতে মামলাটির অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষে ১৬জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি এবং আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৬ জন আসামি প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড; অনাদায়ে আরও ০৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায় , পুলিশের তদন্ত শেষে এ মামলায় মোট ১৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এর মধ্যে মামলা চলাকালীন সময়ে আসামি ইব্রাহিম, তাজু ও আবদুল রাজ্জাক মৃত্যু বরণ করেন। এছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে আবুল হাসেম ভূইয়া ভুটু, মোঃ দুলাল, ফারুক হোসেন, ইলিয়াস ভূইয়া, আবুল কাশেম ও সাইফুলর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।