ছাত্র
প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্র্বতী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
অবশেষে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিয়েছেন।তবে এই ছাত্রনেতা
জানিয়েছেন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তার ভোট করার বিষয়ে
অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ভোট থেকে সরে
আসার কথা বললেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা গত
১০ ডিসেম্বর মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরে দাঁড়ান দুই ছাত্র
প্রতিনিধি। পরদিন ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয় তাদের
পদত্যাগ।
সেই থেকে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে নানা বিষয় আলোচনায়
আসে, খবর প্রকাশিত হয়। আসিফ মাহমুদ ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে নির্বাচন করার
প্রস্তুতি নিতে থাকেন। বিশেষ করে ঢাকা ১০ আসনে জনসংযোগও শুরু করেন।
লক্ষ্মীপুর থেকে মাহফুজ আলমের নির্বাচন করার বিষয়ে কথাবার্তা হতে থাকে।
স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার কথাও বলেন তিনি।
তবে তাদের পদত্যাগের ১৮
দিনের মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রেক্ষাপট বদলে গেলে তাদের নির্বাচন না
করার ঘোষণা এল। এরমধ্যে অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে গঠিত দল
এনসিপি নির্বাচনি জোট গড়ে জামায়াতের সঙ্গে।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
আসার ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে এনসিপিতে যোগ না দেওয়ার কথা ফেইসবুকের মাধ্যমে
জানিয়ে দেন মাহফুজ আলম। তখনও আসিফ মাহমুদ কোনো দলে যোগ দেওয়া কিংবা ভোট
করার বিষয়ে কিছু বলেননি। পরের দিন এসে দুই বিষয়েই মুখ খুললেন তিনি।
শুধু
এ দুইজন নয়, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনি জোট করা নিয়ে আলোচনা ও
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই এনসিপি থেকে সরে দাঁড়ান তাসমিন জারা, তাজনূভা
জাবীনসহ আরও কয়েকজন নেতা।
এছাড়া জামায়াতের জোটে না ভিড়তে আহ্বায়ককে চিঠি লেখেন এনসিপির ৩০ নেতা।
এরপর ঘোষণা আসে মাহফুজের; ফেইসবুকে তিনি লেখেন- “এই এনসিপির অংশ আমি হচ্ছি না।”
সাবেক
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে
বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি তো শুরু থেকেই বলে আসছি যে, নির্বাচন করব না। এই
কারণে আমি সরকার থেকে সরে যেতে চাইনি। কিন্তু সরকার মনে করেছে, ছাত্র
প্রতিনিধিরা থাকলে নিরপেক্ষতা নিয়ে নির্বাচনের সময় প্রশ্ন উঠতে পারে। সে
কারণে আমি সরে গেছি।
“কিন্তু নির্বাচন করব না, সেটা আমার আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল।”
ভাইয়ের
নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তিনি এনসিপির নেতা,
তার নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি নির্বাচন করবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার
কিছু নেই।”
মাহফুজের ভাই এনসিপি নেতা মাহবুব আলম বলেছেন, তার ভাই
নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কে বা কারা মাহফুজের নামে মনোনয়নপত্র নিয়েছে তা
তাদের জানা নেই।
“তিনি নির্বাচন করবেন না, এজন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। আমি এনসিপি থেকে নির্বাচন করব, মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি।”
অপরদিকে
সোমবার সন্ধ্যায় তার অবস্থান খোলাসা করেন আসিফ মাহমুদ। এনসিপি কার্যালয়ে
সংবাদ সম্মেলনে এসে দলটিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তিনি নির্বাচনেও অংশ
না নেওয়ার কথা বলেন।
আসিফ হলেন মুখপাত্র:
অভ্যুত্থানের সময়কার
সাবেক সমন্বয়ককে দলে সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির
আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “এনসিপি নির্বাচনি যাত্রায় পুরোপুরি ঢুকে পড়েছে।
এই নির্বাচনকালীন দলের কর্মকাণ্ড সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি (আসিফ)।
“দলের
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা
নির্বাচন করবেন না তাদেরকে নিয়ে তিনি এই গুরু দায়িত্ব পালন করবেন।”
পাশাপাশি তাকে দলের নীতি নির্ধারণী কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত করার তথ্য দেন তিনি।
এর
আগে বক্তব্যে এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন দলের
মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। বলেন, যেহেতু তিনি ওসমান হাদির সেই
ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- তাই নির্বাচন পরিচালনা
কমিটির প্রধানের পদ ছাড়ছেন।
