নিজস্ব
প্রতিবেদক : নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন। সোমবার (২৯
ডিসেম্বর) কুমিল্লা-৬ (সদর) আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত এই
হেভিওয়েট নেতার পক্ষে তার অনুসারীরা কুমিল্লা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার
কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। মনোনয়ন দাখিল শেষে
সমর্থকরা ঘোষণা দেন, হাজী ইয়াছিন এবারের নির্বাচনে হাঁস প্রতীকে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক
সভাপতি নিজামুদ্দিন কায়সার বলেন, জেল-জুলুম, মামলা-হামলা আর নির্যাতনের
শিকার নেতাকর্মীদের একমাত্র আশ্রয় ও ভরসার নাম হাজী ইয়াছিন, অথচ তাকেই দলীয়
মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই অবহেলার প্রতিবাদেই
নেতাকর্মীদের ভালোবাসা আর সমর্থন নিয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে
নির্বাচনে নেমেছেন এবং হাঁস প্রতীকে লড়াই করবেন। মনোনয়ন দাখিলকে ঘিরে হাজী
ইয়াছিনের অনুসারীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে পুরো এলাকা মুহূর্তেই উৎসবমুখর হয়ে
ওঠে, স্লোগান, করতালি আর আবেগী মুহূর্তে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ। দীর্ঘদিনের
পরীক্ষিত এই নেতাকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও দেখা যায় আলাদা এক আবেগ,
কারণ আন্দোলন-সংগ্রামের দুঃসময়ে তিনিই ছিলেন নির্যাতিত নেতাকর্মীদের
ভরসাস্থল। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘ সতের বছর ধরে ত্যাগ, সংগ্রাম আর
নিরবচ্ছিন্ন পাশে থাকার যে ইতিহাস তিনি তৈরি করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটবে
ভোটের মাধ্যমে, আর কোনো ষড়যন্ত্রই তাকে রুখতে পারবে না।
এর আগে একই
দিনে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মনিরুল হক
চৌধুরী দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন, যার পরপরই স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিনের মনোনয়ন জমা পড়ে। ফলে একই আসনে
একই দলের দুই শক্তিশালী প্রার্থীর অবস্থান তৈরি হওয়ায় মাঠের রাজনীতিতে দেখা
দিয়েছে তীব্র দ্বন্দ্ব ও চাপা উত্তেজনা। কার পক্ষে দাঁড়াবেন, কার ডাকে
সাড়া দেবেন, এই প্রশ্নে বিভ্রান্ত শুধু নেতাকর্মীরাই নন, সাধারণ ভোটাররাও
পড়েছেন দ্বিধায়। তবে হাজী ইয়াছিনকে ঘিরে আলাদা আবেগ ও ভালোবাসা স্পষ্টভাবে
চোখে পড়ছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত তৃণমূল নেতাকর্মীদের আগলে
রাখা, গ্রেপ্তার ও হামলার ভয় উপেক্ষা করে সংগঠন বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামী
ভূমিকা তাকে করেছে ভরসার প্রতীক। সে কারণেই অনেকের প্রত্যাশা ছিল, দলীয়
মনোনয়ন এবার তার হাতেই উঠবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ায় সেই বেদনা, ক্ষোভ
আর অবহেলার অনুভূতিই আজ তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামিয়েছে।
সমর্থকদের
মতে, এটি কেবল একটি মনোনয়ন নয়, এটি তৃণমূলের দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট,
প্রত্যাশা আর অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই। ফলে কুমিল্লা-৬ আসনের নির্বাচন এবার
শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতার নয়, আবেগ, অভিমান ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের এক
গভীর পরীক্ষায় রূপ নিয়েছে।
