
আবাসন খাত দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। পর্যাপ্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নানা সমস্যার কারণে এ খাতের পূর্ণ বিকাশ ঘটছে না। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আবাসনের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হলেও মধ্যবিত্তদের জন্য সুযোগ খুবই সীমিত। আকাশচুম্বী দাম ও মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের পক্ষে ফ্ল্যাট বা প্লট কেনা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা এ শ্রেণির মানুষের জন্য সরকারি প্রণোদনা ও বিশেষ আবাসন প্রকল্প বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ক্রেতাদের অনেকের অভিযোগ, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অতিরিক্ত মুনাফার আশায় নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়। প্লটের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেশি নেওয়া হয়। ফ্ল্যাট বা প্লটের দাম কমাতে সরকারি নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে আবাসন খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাকালে এ খাতে বড় ধরনের ধস নামে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবাসন খাতে গতি ফিরতে শুরু করে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের উচ্চমূল্য, এলসি খোলায় কড়াকড়ি, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হওয়ায় আবাসন ব্যবসায় আবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কারোপ এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও সংকট আরও বেড়েছে বলে তারা মনে করেন। দেশে ও বিদেশে নির্মাণসামগ্রীর দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সীমামুক্ত হওয়ায় বাধ্য হয়ে ফ্ল্যাটের দাম বাড়াতে হয়েছে। ফলে ক্রেতা কমে গেছে। তাই এ খাতে গতি আনতে নিবন্ধন ব্যয় কমানো জরুরি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আবাসন সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম এবং এটি একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব হলেও বাস্তবে সরকার সে ভূমিকা যথাযথভাবে রাখতে পারছে না। বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণে আবাসন খাত পরিচালিত হচ্ছে। এ খাতে গতি আনতে সরকারের সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা যাতে অতিরিক্ত দামে ফ্ল্যাট বা প্লট বিক্রি করতে না পারেন, সেজন্য কঠোর নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দেশজ পণ্যের ওপর ভিত্তি করেই পুরো নির্মাণ খাত দাঁড়িয়ে আছে। সংকট থাকলেও আবাসন খাতে সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এ খাত টিকে থাকা কঠিন। তৈরি পোশাকশিল্পের মতো সুবিধা দিলে ফ্ল্যাট বা প্লটের দাম কমবে, ক্রেতা বাড়বে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়বে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো নেই, চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে না। দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ সঞ্চয় করতে পারছে না। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে ফ্ল্যাট বা প্লট কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারকে কম খরচে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য।
আবাসন খাতের সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু কার্যকর তদারকি ও উদ্যোগের অভাবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য সরকারি উদ্যোগে সারা দেশে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বেসরকারি আবাসন খাতে সহযোগিতার পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রত্যাশা রইল, সরকারের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় আবাসন খাত সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে।
