ম্যাচ
শুরুর প্রস্তুতি চলছিল তখন। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গা গরমে ব্যস্ত
ছিলেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। তাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে সহায়তা
করছিলেন কোচিং স্টাফের সদস্যরা। হটাৎ মাঠে পড়ে গেলেন মাহবুল আলি জাকি। পরে
আর তিনি উঠে দাঁড়ালেন না। মাঠে ও হাসপাতালে সবার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে
অভিজ্ঞ এই কোচ পাড়ি জমালেন পরপারে।
কুমিল্লার কৃতি সন্তান বিসিবির গেম
ডেভেলপমেন্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞ পেস বোলিং কোচ বিপিএলে কাজ করছিলেন ঢাকা
ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ হিসেবে। তার বয়স হয়েছিল ৫৯।কুমিল্লা শহরের
কাপ্তানবাজার আদম আলী পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা জাকি। তার পিতা মোহাম্মদ
আলী ছিলেন কুমিল্লা আর্ট স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। ছোটবেলা থেকেই
ক্রিকেট-আন্ত:প্রাণ জাকি ব্যাপক অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সবশেষ
যুক্ত ছিলেন বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের সঙ্গে। বিপিএলের দ্বিতীয় দিনে
শনিবার প্রথম ম্যাচে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আসর শুরু
করেছে ঢাকা ক্যাপিটালস। সেই ম্যাচের আগেই দলের সঙ্গে মাঠে ছিলেন মাহবুব।
বুকে ব্যথা অনুভব করার পর তিনি হুট করেই পড়ে যান। আশপাশ থেকে দ্রুতই ছুটে
আসেন সবাই। তাকে ঘিরে তৈরি হয় জটলা। তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর দেওয়া হয় তাকে।
একটু পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয় হাসপাতালে।
দল সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সেও শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল তার। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর আর বাঁচানো যায়নি।
দুপুর
২টায় সামাজিক মাধ্যমে ঢাকা ক্যাপিটালস জানায়," অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে
জানাচ্ছি, ঢাকা ক্যাপিটালস পরিবারের প্রিয় সহকারী কোচ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে
আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এই অপূরণীয় ক্ষতিতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার
আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা
জানাই।"
ঢাকার প্রধান কোচ টবি র্যাডফোর্ড। তিনি আসার আগ পর্যন্ত প্রস্তুতি দেখভাল করেছেন মাহবুব। এরপর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন সহকারী হিসেবে।
দেশের
ক্রিকেটে তিনি পরিচিত মুখ। বিশেষ করে পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিজের আলাদা
পরিচিতি তিনি গড়েছেন। তাসকিন আহমেদের অ্যাকশনের সমস্যা শোধরানো থেকে শুরু
করে দেশের অনেক পেসারের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি নিবিড়ভাবে। দেশের অনেক
পেসারের 'মেন্টর' ছিলেন তিনি। ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলেও তিনি ছিলেন সহকারী
কোচ।
খেলোয়াড়ি জীবনে মাহবুব ছিলেন পেসার। জাতীয় দলে খেলতে না পারলেও
জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন কুমিল্লা জেলার হয়ে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে
খেলেছেন আবাহনী, ধানমন্ডির মতো ক্লাবে। খেলা ছাড়ার পর তিনি নাম লেখান
কোচিংয়ে। বিসিবির সঙ্গে তার সম্পর্কের শুরু ২০০৮ সালে হাই পারফরম্যান্স কোচ
হিসেবে। ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের প্রধান পেস বোলিং কোচদের একজন।
মিরপুর
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে, ইনডোরে বা নেটে তাকে নিয়মিতই দেখা
যেত সব পর্যায়ের পেসারদের নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে। মাঠের মানুষ বিদায়
নিলেন মাঠ থেকেই।
