বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫
১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
বস্তিবাসীর চিত্র
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১:০২ এএম |




 বস্তিবাসীর চিত্র বস্তিবাসীর খোজখবর নিতে গিয়ে জানা যায়, বস্তিবাসীদের পারিশ্রমিকের বড় অংশ চলে যায় ‘বস্তির মালিক’ ও ‘সিন্ডিকেটের’ হাতে। ঘর ভাড়াসহ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অবৈধ বিলের নামে একেকটি বস্তি থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা তোলা হয় ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায় এই টাকা। জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন শুধু মুখ পরিবর্তন হয়েছে। বদলায়নি বস্তিকেন্দ্রিক দুর্বৃত্তপনা। বস্তির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে খুনাখুনির ঘটনাও ঘটেছে। রূপনগরের চলন্তিকা বস্তি, ভাষানটেক বস্তি, বনানীর কড়াইল বস্তি, মহাখালীর সাততলা বস্তি, পল্লবীর শহীদবাগ কলাপানি বস্তি, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়িবস্তিসহ বিভিন্ন বস্তিতে ঘুরে সরেজমিনে ঘূর্ণয়নকারীরা এমন তথ্যই দিয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন বস্তি আন্ডারওয়ার্ল্ডের গড্ফাদারদের আশ্রয়স্থল হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে।
বিত্তবানদের বড় বড় দালানের পাশে ঘুপরি বানিয়ে তারা যে জীবনযাপন করছেন, এ জীবন যেন এক চোখে দুই দৃষ্টি ধনী গরিবের বৈষম্যের ঠিকানা, এক শহরেই বাস। অথচ জীবন তাদের কত নীচে নামাতে পারে এর বড় নজির বস্তির জীবন। পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, প্রায় তিন কোটি মানুষের রাজধানী ঢাকায় ৪০ লাখেরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত বস্তিবাসী। ‘বস্তিবাসী’ চিহ্নটি তাদের কপালে জুটেছে, তা থেকে আজও বের হতে পারেনি। না পেরেছে কোন সরকার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করাতে, না পেরেছে কোন বেসরকারি সংস্থা কিংবা এনজিও।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে ঢাকার কয়েকিেট বস্তির যে বিবর্ণচিত্র উঠে এেেসছ, তা অত্যন্ত কষ্টের, বেদনার। সমাজহিতৈষিরা বলেন, আমরা বস্তিবাসীকে বাঁকা চোখে দেখি, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়েছে। কিন্তু এ জীবনের আড়ালে এক দেশে জন্ম নেয়া মানুষ কিভাবে নাগরিক হয়ে উঠতে পারেনি, তা নিয়ে কোন গবেষণা ত দূরের কথা সুষ্ঠু চিন্তার পদচিহ্নও খুজে পাওয়া যায় নি। এ জীবন থেকে বের করে তাদের সুস্থ ধারার জীবন দেয়ার জন্য কেউ কাজও করেনি। তারা দেশের নাগরিক সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার আলো পৌঁছেনি তাদের ভাঙ্গা ঘরে। ফলে তারা হয়ে আছেন তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক। অনেক তথ্যমতে জানা যায়, বস্তিবাসীর একটা বিরাট অংশ নদী ভাঙ্গনসহ প্রকৃতিক দূর্যোগে সর্বস্ব হারিয়ে এক কাপড়ে এ নগরে এসে ঠাই নিয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে হতভাগ্য এসব মানুষ বড়লোকদের পাশে আশ্রয় নেয়। বেশির ভাগ বস্তিতে নেই বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ পানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। উল্টো উচ্ছেদ, ঘনঘন অগ্নিকান্ডসহ নানারকম ভয়ে আতঙ্গে কাটে তাদের দিন।
ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ এর ২০২৪ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৮৪ শতাংশ বাড়ীতে নেই কোন স্বাস্থ্যসেবা কর্মযজ্ঞ, ৬৭ শতাংশ এলাকায় নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা এবং ৫৪ শতাংশ পরিবার নিয়মিত পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যায় ভুগছে। নিউট্রিক্যাপের গবেষণায় উঠে এসেছে বস্তির শিশুদের ৫৯ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। শিশুদের ২৭ শতাংশের উচ্চতা এবং ২০ শতাংশের ওজন কম। বস্তির ৯১ শতাংশ পরিবার কোন না কোনভাবে ঋণগ্রস্থ। বস্তির প্রতি চার পরিবারের একটি খাদ্য সংকটে ভোগে। গর্ভবতী মায়েরাও নানাহ শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। বস্তিশুমরি Ñ২০১৪ এর পরিসংখ্যানে জানা যায়, রাজধানীতে ৩,৩৯৪টি বস্তি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১,৬৩৯ টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১,৭৫৫ টি। বস্তিবাসীর মূলপেশা রিকশা-ভ্যান চলানো। ১৬.৮০ শতাংশ মানুষ এ পেশায় জড়িত। ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ১৫.৭১, পোশাক কারখানার সঙ্গে জড়িত ১৪.৩৪, সেবাখাতের সঙ্গে জড়িত ১৪.৩৩ নির্মান শ্রমিক ৮.৩৮, কুলি বা দিনমজুর ৮.২৭, পরিবহন শ্রমিক ৮.৩৮ এবং ৬.১১ শতাংশ বস্তিবাসী অন্যান্য কাজের সঙ্গে জড়িত। স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, ভিটেহারা অসংখ্য গল্প লুকিয়ে আছে বস্তি জীবনের পরতে পরতে। 
বস্তির বেশির ভাগ মানুষ নিরীহ ও পরিশ্রমী। তবে পরিস্থিতির চক্করে পড়ে অপরাধে জড়ায় তাদের একটি অংশ। বস্তির শ্রমজীবী মানুষকে অবহেলার চোখে দেখা হলেও তারাই মূলতঃ শহরের চাকা সচল রাখে। জীবিকার তাগিদে এসব মানুষ বাস-ট্রাক, রিকশা ও বেবি টেক্সি চালান, গার্মেন্টস’সহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকের চাকুরী রাজমিস্ত্রি, গৃহকর্মী, ফুটপাতে দোকানসহ নিম্নআয়ের পেশায় যুক্ত হন। তাদের পরিশ্রমের সেবা ভোগ করেন নাগরিকরা। আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বস্তির বেশির ভাগ জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। বাকীটা সরকারী সম্পত্তি। মিরপুরের বাউনিয়াবাদ বস্তির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন, বাকী জমি সরকারের। ঐ বস্তির জনসংখ্যা ৬০ হাজার। আইসিডিডিআরবি’র ঐ গবেষনায় আরও বলা হয়েছে, ঢাকার বস্তিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫০ হাজার মানুষ বাস করে। ৮০ শতাংশ পরিবার এক কক্ষের ঘরে থাকে। ৯০ শতাংশ পরিবার টয়লেট ও সরবারহকৃত পানি ভাগাভাগি করে।
নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ভিটেমাটির মা-মেয়ে মিলে একটি বস্তিতে থেকে গার্মেন্টসে কাজ করছেন এমন অনেক উদাহরণ লুকিয়ে আছে ঢাকার বস্তি জীবনে। বস্তির বাসিন্দাদের বলতে শুনা যায়, “বস্তিবাসী বলে এই শহরের কারও কোন নজর নাই।” অথচ বস্তি থাকার কারণে শহরের বড়লোকদের বাসার কাজের লোক পেতে সমস্যা হয় না। একটি উঁচু ভবনে বাসিন্দাকে বলতে শুনা যায় বস্তির মানুষই আমাদের সহযোগীতা করে, বস্তিকে ঘিরে অপরাধের ঘটনাও ঘটে। আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে শহরের প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে। কিন্তু স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বের ফাঁকে পড়ে তারা মৌলিক সেবা থেকেও বঞ্চিত।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
আসন বিন্যাসের খসড়ায় কার লাভ, কার ক্ষতি
যা আছে খসড়া পুন:বিন্যাসে
সীমানা নির্ধারণে দাবি-আপত্তির সুযোগ ১১ দিন
তিতাসে ১৫ দিন যাবৎ দলিলের নকল সরবরাহ বন্ধ : ভোগান্তি দুই হাজার গ্রাহক
কুঁচিয়া বিক্রির টাকায়সংসার চলে নরেশের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আসন বিন্যাসের খসড়ায় কার লাভ, কার ক্ষতি
মহাসড়কের কুমিল্লায় ডাকাত ও ছিনতাইকারীর আতঙ্ক
দাউদকান্দিতে সরকারী মার্কেটের জায়গা অবৈধ দখলের মহোৎসব
কুমিল্লায় ঘর থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার
ভারতে অনুপ্রবেশের অপরাধে বাংলাদেশী যুবক আটক
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২