শিশু অবস্থায় অর্থাৎ
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মানুষের হিসাবের খাতা খোলা হয় না। কোনো পাপ বা
গুনাহ লেখা হয় না। তাই শিশুরা নিস্পাপ থাকেন। তারা যদি মারা যান, তাহলে
নিস্পাপ অবস্থায় মারা যান। তাদের ঠিকানা হয় জান্নাত।
হাদিসে এসেছে, মৃত
শিশুরা জান্নাতের একটি পাহাড়ে তারা আল্লাহর নবি ও খলিল ইবরামি (আ.) ও তার
স্ত্রী সারার (আ.) অভিভাবকত্বে থাকেন। কেয়ামতের দিন তারা ওই শিশুদের তাদের
বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুমিনদের শিশু সন্তানরা
জান্নাতে একটি পাহাড়ে থাকবে, যেখানে ইবরাহিম (আ.) ও সারাহ (আ.) তাদের
লালন-পালন করবেন কেয়ামতের তারা তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার আগ
পর্যন্ত। (মুসনাদে আহমদ)
সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি
(সা.) একদিন সকালে তার আগের রাতে দেখা স্বপ্ন সাহাবিদের শুনিয়েছিলেন যে
স্বপ্নে দুইজন ফেরেশতা তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের বিভিন্ন দৃশ্য
দেখিয়েছেন। ওই স্বপ্নে এক পর্যায়ে ফেরেশতারা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন জান্নাতরে
এক সবুজ বাগানে। নবিজি (সা.) বলেন, একটা সজীব শ্যামল বাগানে আমাকে নিয়ে
যাওয়া হলো, যেখানে বসন্তের অনেক রকম ফুল ফুটে আছে আর বাগানের মাঝে আসমানের
থেকে অধিক উচু দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছি
না। তার চারপাশে আমি এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত শিশু
একসাথে আর কখনো দেখিনি। আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, উনি কে আর এই শিশুগুলো
কারা? ফেরেশতারা বলেন, তিনি হলেন, ইবরাহিম (আ.) আর তার আশেপাশের
বালক-বালিকারা হলো ওইসব শিশু, যারা ফিতরত বা স্বভাবধর্মের ওপর মৃত্যু বরণ
করেছে।
কয়েকজন সাহাবি নবিজিকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল!
মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও? নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও। (সহিহ বুখারি)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায় মুমিন ও
কাফের যে কোনো পরিবারের শিশুই হোক, শিশু অবস্থায় মারা গেলে জান্নাতে যান
এবং আল্লাহর নবি ইবরাহিমের (আ.) তত্ত্বাবধানে জান্নাতে থাকেন।
মৃত শিশুরা বাবা-মাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন
এ
ছাড়া একাধিক হাদিস থেকে বোঝা যায়, মৃত শিশুরা কেয়ামতের দিন তাদের মুমিন
বাবা-মায়েরও জান্নাতে যাওয়ার কারণ হবে। তারা তাদের বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর
কাছে সুপারিশ করবে। নবিজি (সা.) বলেন, ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার
প্রাণ! যে মা গর্ভপাত হলে সেজন্য সওয়াবের আশা করবে, তার গর্ভচ্যুত সন্তান
(কেয়ামতের দিন) নিজের নাভির নাড়ী ধরে তাকে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
(সুনানে ইবনে মাজা)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে নবিজি (সা.) বলেছেন, যে নারীর
তিনটি শিশু মারা যাবে, ওই নারীরার জন্য তার ওই শিশু সন্তানরা জাহান্নাম
থেকে পর্দা হবে। এক নারী বললেন, আর দুটি সন্তান মারা গেলে? নবিজি (সা.)
বললেন, দুটি মারা গেলেও। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
মুমিন বাবা-মা ও সন্তানরা জান্নাতে মিলিত হবেন
জান্নাতে মুমিন বাবা-মা ও সন্তানদের মিলন ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
যারা
ইমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ইমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা
তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের আমলের সওয়াবও কমাব না।
প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ। (সুরা তুর: ২১)