বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের পুঁজিবাজার আস্থার সংকটে ভুগছে এবং একটি স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাব অনুভূত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা হতাশা প্রকাশ করছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন।
আশা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করবে।
প্রথম নির্দেশনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কম্পানিগুলোর শেয়ার দ্রুত পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত, দেশি বড় বেসরকারি কম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাবও বাজারের গভীরতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনাটি হলো স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি ঠেকাতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তিন মাসের মধ্যে বাজার সংস্কারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে বাজারকে অস্থির করে তোলে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। চতুর্থত, পুঁজিবাজারে অনিয়মে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, অনেকে অনিয়ম করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে। পঞ্চম নির্দেশনায় বড় কম্পানিগুলোকে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভর না করে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইকুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কথা বলা হয়েছে।
অতীতেও অনেক ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু যথাযথভাবে বাস্তবায়নের অভাবে সেগুলো আশানুরূপ ফল দেয়নি। এবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদেরও বাজার গঠনে সহযোগিতা করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের কিছু উদ্বেগের কথাও মনে রাখা জরুরি। তাঁদের রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করার এবং গুরুতর অভিযোগের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করার প্রত্যাশা যৌক্তিক। সরকার যদি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করে এবং তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেয়, তবে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠন করা সম্ভব।
এখন দেখার বিষয়, এই নির্দেশনাগুলো কতটা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়। আশা করি, এসব সিদ্ধান্তের একটি প্রভাব নিশ্চয়ই পুঁজিবাজারে পড়তে শুরু করবে। গৃহীত সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা পাওয়া সরকারের জন্য কঠিন নয়। তাঁদের নিয়ে বসলে তাঁরা আরো পথ দেখাতে পারবেন। একটি স্থিতিশীল ও আস্থাবান পুঁজিবাজার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং এই লক্ষ্য অর্জনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।