মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২
উন্নয়ন প্রকল্পের আড়ালে হরিলুট
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১:০৬ এএম |

উন্নয়ন প্রকল্পের আড়ালে হরিলুট
সরকারি প্রকল্পে হরিলুট বাংলাদেশে কোনো নতুন ঘটনা নয়, কমবেশি সব সরকারের আমলেই প্রায় একই চিত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগের সর্বশেষ দেড় দশকের শাসনামল এই লুটপাটকে প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক করে ফেলেছিল। বিভিন্ন প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটতে থাকে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেখা যাচ্ছে, যেসব প্রকল্প ছিল পতিত সরকারের গর্ব, যেগুলো ছিল তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অংশ, এমনকি সরকার ও দলীয় প্রধানের নামের প্রকল্পগুলোও এই লুটপাটের বাইরে ছিল না।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, একদিকে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের মাধ্যমে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বরাদ্দ করা একটি রাষ্ট্রীয়  জুট মিল প্রকল্পের ২ শতাংশ কাজ করেই ২৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প কিভাবে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয় এবং এর মাধ্যমে জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হয় তার প্রমাণ এই প্রকল্পগুলো।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে ‘হরিলুট’-এর যে চিত্র, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিলে দুর্নীতি ও অনিয়মের এক বিশাল জাল তৈরি করেছিলেন।
দরপত্র আহবান না করে কাজ করানো, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, শর্ত না মেনে মাটি ভরাট এবং ঘুষের বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ-এসবই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করেছে। ফলস্বরূপ, বছর না যেতেই অনেক ঘর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, কোথাও চালা উড়ে গেছে, বৃষ্টির পানি পড়ছে, আবার কোথাও ঘরগুলো ছাগল পালনে ব্যবহৃত হচ্ছে। পীরগাছা, ধুনট, দামুড়হুদা, ধামরাই, ডামুড্যা, রাউজান ও কেরানীগঞ্জের মতো বিভিন্ন স্থানে একই রকম চিত্র দেখা গেছে। 
বিস্ময়কর হলো, পতিত সরকারপ্রধানের নামে হওয়া ‘শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল’ প্রকল্পের নামে ৫০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পেয়েও মাত্র ২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে প্রায় ২৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে।
এই প্রকল্পটির মূল এলাকা জামালপুর হলেও সংশোধিত প্রস্তাবে ঢাকার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস এলাকা দেখানো হয়েছে, যা তথ্যের বিভ্রান্তি এবং চরম দায়িত্বহীনতার প্রমাণ। প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত জমি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এর জন্য কোনো চুক্তিপত্রও ছিল না। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এসব প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক অপচয় নয়, বরং সামাজিক অবিচারকেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর পান না, বরং রাজনৈতিক প্রভাবে সুবিধাভোগীরা তা আত্মসাৎ করেন। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে শামিল হন।
এই বাস্তবতায় প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশনের প্রয়োজন, যাদের সুপারিশ অনুযায়ী জবাবদিহি ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন যদি জনগণের কল্যাণে না আসে, যদি তা দুর্নীতিবাজদের লুটপাটের মাধ্যম হয়ে ওঠে, তাহলে সেটি আর কোনো উন্নয়ন থাকে না, ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত হয়। এই ব্যর্থতা থেকে ‘নতুন বাংলাদেশ’কে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ‘উন্নয়ন’ হবে কেবল কাগজে আর দুর্নীতি থাকবে বাস্তবের প্রতিটি ইটের গায়ে লেখা।













সর্বশেষ সংবাদ
ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো নিপীড়নকারীদের উদ্দেশ্য?
পর্নোগ্রাফি মামলার আসামিদের রিমান্ডে চায় পুলিশ
কুমিল্লায় প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ
সেনাবাহিনীর অভিযান কুমিল্লায়৩ হাজার ইয়াবা ও ৩০ লাখ টাকাসহ আটক ১
এবি পার্টি মহানগরের উদ্যোগে চাউল বিতরণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
চালের ড্রাম ছিলো ৩ হাজার ইয়াবা ও ৩০ লাখ টাকা; জব্দ করল সেনাবাহিনী
লালমাইয়ে দুই মাদকসেবীকে সাজা
ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো নিপীড়নকারীদের উদ্দেশ্য?
কে এই ফজর আলী
অভিযুক্ত ফজর আলীসহ গ্রেপ্তার ৫
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২