
কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লার
মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারীর এখনো ডাক্তারী
পরীক্ষা সম্পন্ন হয়নি। অপরদিকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ফজর আলী আহত
অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তিনদিনেও তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব
হয়নি। তবে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার চার যুবক কারাগারে
রয়েছেন, তাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে, এ বিষয়ে এখনো শুনানী হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে এসব তথ্য জানান মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান।
গত
২৬ জুন দিবাগত রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ
ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক
নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ধর্ষক ও ভুক্তভোগী নারীকে
বিবস্ত্র করে নির্যাতনেরদুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে
দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরই মধ্যে পুলিশ ধর্ষণে অভিযুক্ত একই গ্রামের
বাসিন্দা ফজর আলী ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে চার যুবককে গ্রেপ্তার
করেছে। পর্নোগ্রাফী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ওই চার যুবক বর্তমানে
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। আর ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার
হওয়া ফজর আলী কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা
নিচ্ছেন। তবে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা এখনো সম্পন্ন
হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ওই
নারী কিছুতেই ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে রাজি হচ্ছেন না। আমরা তাকে নানাভাবে
বুঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার একই কথা- পরীক্ষা করাবেন না। আমরা তো আর
তার সাথে জোড়াজুড়ি করতে পারি না। দেখি তিনি রাজি হন কি না।
দেশজুড়ে
আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় নতুন করে আর কাউকে গ্রেপ্তার করা
হয়নি জানিয়ে ওসি বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ফজর আলীকে ঢাকার
সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সে মারাত্মক আহত অবস্থায় থাকায়
তাকে প্রথমে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে এবং পরে পুলিশ পাহাড়ায়
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিছুটা সুস্থ হলে
তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। অপরদিকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে
পর্নোগ্রাফী আইনের মামলা গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে কারাগারে প্রেরণ করা
হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে প্রত্যেক আসামির ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন
করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো শুনানী হয়নি। তাদেরকে রিমান্ডে পেলে জিজ্ঞাসাবাদ
করে অন্য আর কেউ জড়িত আছে কি-না এবং কি কারণে তারা এটা ছড়িয়ে দিয়েছে-
বিস্তারিত জানতে পারবো।
ভুক্তভোগীর বাড়িতে কায়কোবাদ, দ্রুত বিচার দাবি:
কুমিল্লার
মুরাদনগর উপজেলায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকারওই নারী ও তার স্বজনদের প্রতি
সমবেদনা জানাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লা-৩ মুরাদনগরের সাবেক এমপি
ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। মঙ্গলবার (২
জুলাই) দুপুরে ভুক্তভোগীর বাড়ি মুরাদনগরের পাচকিত্তা বাহারচরে গিয়ে
ভুক্তভোগীর পরিবারসহ স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হীনমন্যতায় না ভোগার
পরামর্শ দেন তিনি।
এসময় কায়কোবাদ বলেন, আমি যেমন এ মুরাদনগরের সন্তান
আপনারও এ মাটিরই সন্তান। এখানে আমার যেমন অধিকার আপনাদেরও তেমন অধিকার।
ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে হেনেস্তা করার সুযোগ নেই। যেহেতু এ ঘটনায় দায়ের করা
মামলার তদন্ত চলমান, তাই আমি বেশি কিছু বলব না। সুষ্ঠু বিচার করতে হবেই
হবে। হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি ছিল, আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের
পাশে আছি। আপনারা নির্ভয়ে বসবাস করুন।
তবে কায়কোবাদ যখন ওই বাড়িতে যান,
তখন ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে
কায়কোবাদ বলেন, ‘আমি এখানে এসেছিলাম সকলের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে। কিন্ত
পুলিশ ও আমাদের মাননীয় শিশু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে এখান থেকে দূরে
নিয়ে যায়। আমি জানতে চাই, তাদের উদ্দেশ্য কি। তারা বিএনপির বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আপনাদের সাথে বিএনপির বিরোধ সৃষ্টি করার
জন্য আওয়ামিলীগ ও এনসিপি যে ষড়যন্ত্র করেছে তা সফল হয়নি, হবেও না
ইনশাআল্লাহ।আমাদের সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সুসম্পর্ক নষ্ট করতেই আওয়ামী
লীগ নেতাকে বিএনপি বলে অপপ্রচার করেছে একটি পক্ষ। ওরা চায় হিন্দু মুসলিম
দাঙ্গা লাগিয়ে এ দেশকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য বানাতে। ওদের ষড়যন্ত্র শুধু
বিএনপির বিরুদ্ধে নয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির বিরুদ্ধে।