২০২৫-২৬ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল অর্থাৎ কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, সমালোচনার মুখে তা বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ২ জুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তখন এ বাজেটেও অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বিশেষ সুযোগ রাখা হয়েছিল। পরে সরকার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে এবং এ পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, নৈতিকতার দিক বিবেচনা করে এবং সব মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কালোটাকা সাদা করার বিধান সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হলো। বাজেট ঘোষণার পর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত মতামত এবং অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এখন প্রশ্ন আসতে পারে যাদের অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, তাদের কী হবে? তাদের জন্য যা আছে, তা হচ্ছে, তারা নিয়মিত ট্যাক্স দেবে। সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ এবং তার সঙ্গে বাড়তি ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বর্তমান বিধান বহাল আছে। কারণ, এটা কালোটাকা না। যেটা নিয়ে বিতর্ক ছিল, সেই সুযোগ আর নেই। এখন আইনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আর নেই বলে জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করায় বিষয়টিকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা। অর্থনীতিবিদদের মতে, এতে অর্থনীতিতে দৃশ্যমান কোনো প্রভাব পড়বে না। প্রস্তাবিত বাজেটে জমি বা ফ্ল্যাট কেনার মাধ্যমে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ থাকলেও নানা মহলে সমালোচনার কারণে চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তা বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন বাজেটের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটেরও অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। সরকারের দাবি, এ সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও সুশাসনের প্রতিফলন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এটি নৈতিকভাবে প্রশংসনীয় হলেও এর বাস্তব প্রভাব সীমিতই থাকবে। কালোটাকা নতুন করে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে, সে ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
নীতি-নৈতিকতার দিক বিবেচনা করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল হওয়ায় এটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রেখেছিল। এরপর নানা মহল থেকে ব্যাপকভাবে আলোচনার ঝড় ওঠে। পরে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্তে এটি বাতিল করে।
অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। সেখানে এ ধরনের সুযোগ রাখা হলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নৈতিকতার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হতো। এ ক্ষেত্রে দেশের নাগরিকদের সুচিন্তিত মতামত গ্রহণ করায় সরকার একটি ভালো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছে। প্রত্যাশা করছি, সরকার দেশের অর্থনীতিতে সুশাসন নিশ্চিতকরণে আরও জোরদার ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।