স্টাফ রিপোর্টার।। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) কার্যালয়ে তথা নগর ভবনে ঢুকলেই চোখে পড়ে এক ‘বিস্ময়কর’ লিফট, যেটি আকাশের দিকেউঠে গেছে। দুইতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য বসানো হয়েছে এই লিফট, যাতে নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪০টাকা। অথচ ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য এত ব্যয় অস্বাভাবিক ও অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও লুটেরাদের যোগসাজসে র্নিমিত লিফটটি এখন ব্যবহৃত না হওয়ায় তা এখন কুসিক ভবনে দুর্নীতির প্রতীক হয়েদাঁড়িয়ে আছেু।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগেরসাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। শারীরিকভাবে অসুস্থ রিফাত সিটিকর্পোরেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে না পারায় তার জন্য দ্রুত লিফট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।
সেই লিফট স্থাপনের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয় ‘ড্রিমস আন লিমিটেড’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে। কোম্পানিটিকে লিফট সরবরাহ ওস্থাপনের জন্য দেওয়া হয় ২৭ লাখ ৯ হাজার ৯৯০ টাকা এবং লিফট স্ট্রাকচার নির্মাণে আরও ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৫০ টাকাসহ মোট৫৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪০ টাকা দেওয়া হয়। অথচ দেশে এই ধরনের ৬৩০ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন লিফটের বাজারমূল্য সর্বোচ্চ১১-১৩ লাখ টাকার মধ্যে।
স্থানীয়রা বলছেন, একটি সাধারণ দুইতলা ভবনের জন্য এত ব্যয় অযৌক্তিক ও ট্যাক্সদাতাদের অর্থের অপচয়। সেই লিফট এখনব্যবহারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। কারণ ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য লিফট ব্যবহার করার বাস্তব কোনো প্রয়োজন নেই।ভবনের ছাদ পর্যন্ত গিয়েও লিফটটি সেখানে থেমে গেছে, দেখলে মনে হয় লিফটটি আকাশে উঠে গেছে।
আরো জানা গেছে, ড্রিমস আন লিমিটেডের মালিক মনু কুমিল্লা শহরের দেশওয়ালীপট্টির বাসিন্দা এবং সাবেক সংসদ সদস্য আ ক মবাহাউদ্দিন বাহারের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। তিনি বর্তমানে একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতাতাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আরফানুল হক রিফাত মেয়র নির্বাচনের কিছুদিন পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বেশিরভাগ সময় বাসায় থেকেই অফিসেরকাজ চালাতেন। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারমৃত্যুর পর লিফটটি কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
নগরবাসীর প্রশ্ন, ট্যাক্সদাতাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে গড়ে ওঠা নগর ভবনে এ ধরনের অপচয় এবং দুর্নীতির ঘটনায় কেন তদন্ত হচ্ছেনা? তারা মনে করেন- সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সবরকম দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই এসব লুটপাটের প্রকল্পকাজ সম্পন্ন করা হয়। লুটের প্রকল্প তারা তৈরি করে দিয়ে- লুটে ভাগ নিলেও কর্মকর্তারা বেঁচে যাওয়ার সব পথও খোলা রাখেন।
কুমিল্লাবাসীর দাবি-এই অনিয়মের পেছনে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এক নাগরিক বলেন,“এটি চরম দুর্নীতির উদাহরণ। একটি দুইতলা ভবনের জন্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে লিফট বসানো কেবল অপচয়ই নয়, এটা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
আরেকজন প্রবীণ নাগরিক বলেন, “এই লিফট কেবল লোহা আর যন্ত্রপাতি নয়-এটা কুমিল্লার দুর্নীতির স্মারক।”