তানভীর দিপু।। নীলফামারী জেলার জলঢাকা এলাকার বাসিন্দা মেরাজ। কুমিল্লা নগরীর একটি নির্মাণাধীন ভবনের রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ঈদের ছুটি পেয়ে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বাসস্ট্যান্ডে।
আহসান পরিবহনের যাত্রী মেজার হুসাইন জানালেন কুমিল্লা থেকে নীলফামারীর জলঢাকা যেতে আসতে সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩৬০০ টাকা। তার মধ্যে ১৫ শ' টাকা করে যাওয়া আসার ভাড়া ৩ হাজার টাকা। অন্যান্য আরো আনুষাঙ্গিক খরচ ৫ শ থেকে ৬ শ টাকা। যেখানে কাজ করেন তার দৈনিক মজুরি ৬শ টাকা, সে হিসাবে তার ঈদে বাড়িতে যাওয়া আসার খরচ বাবদ ৬ দিনের মজুরি খরচ হবে।
মেরাজ বলেন, তাও বাড়ি যাবার আনন্দ অন্যরকম। টাকার কথা চিন্তা করলে বাড়ি গিয়ে ঈদ করা হবে না। মা বাবা ভাই বোনের সাথে ঈদ করার আনন্দ টাকায় কেনা যাবে না।

তবে ঈদের সময় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে। সাধারণ সময়ে রংপুর নীলফামারী যেতে যেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হয়, ঈদের বাজারে তা হয়ে যায় দ্বিগুণ।
জলঢাকা আগামী নির্মাণ শ্রমিক সুমন বলেন, এটা প্রতি ঈদেই হয়। ভাড়া বেশি থাকে বিধায় অনেকেই ট্রাক কাভার্ডভ্যান বা পিকআপ ভাড়া করে যায়। আর ট্রাকে পিকআপে না যেতে পারলে বেশি ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে যেতে হয়।
রংপুরগামী বিদ্যুত শ্রমিক মারুফুল ইসলাম জানালেন, আমরা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকি দ্বিগুন ভাড়া দিতে হবে। আমি ১৭ দিন আগে কুমিল্লায় কাজ করতে এসেছিলাম, লম্বা ছুটি তাই আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আমাকেও আমার চার দিনের মজুরি খরচ করেই বাড়ি যেতে হবে।
কুমিল্লার পদুয়ার বাজার থেকে উত্তরবঙ্গগামী আহসান পরিবহন, ঝুমুর, রোমার, জলঢাকা ট্রাভেলস্, পরান, সোহাগ পরিবহন, জহিরুল পরিবহন, আয়ান পরিবহনের বাস চলাচল করে। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এসব পরিবহনের সংশ্লিষ্ট দলের রয়েছে ব্যাখ্যা।

আহসান পরিবহনের বাস চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সাধারণ সময়ে আমাদের ভাড়া ১২শ থেকে ১৩শ টাকা হলেও আমরা ৭শ থেকে ৮ শ' টাকার উপরে কাউকে নিতে পারি না। কারণ আমাদের বাসগুলোতে উত্তরবঙ্গে বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ চলাচল করে। এছাড়া ঈদের সময় ঢাকা থেকে বাসের চাহিদা বেশি থাকে বিধায় - অনেকবার কুমিল্লা থেকে না গিয়ে ঢাকা থেকেই ফিরে যায়। তাই যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করতে অন্য কোন ট্রান্সপোর্ট থেকে বাস ভাড়া করে এনে চালাতে হয়। দিতে হয় বেশি খরচও। তাই যাত্রীদের কাছ থেকেও ভাড়া নেয়া হয় বেশি।
আহসান পরিবহনের ম্যানেজার দুলাল আহমেদ বলেন, ঢাকা থেকে বাস গেলে খরচ কম কিন্তু ভাড়া পাওয়া যায় বেশি। তাই অনেক বাস কুমিল্লা আসতে চায় না। আমাদেরকে অন্য জায়গা থেকে বেশি খরচে বাস এনে চালাতে হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে বেড়েছে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ। ঈদে ঘরমুখ মানুষের দেখা গেছে মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। বিশেষ করে মহাসড়কের পদুয়ার বাজার এলাকায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা নোয়াখালী ফেনী লক্ষীপুরগামী যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে।

৫ জুন থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই মহা সড়কে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তবে যাত্রীরা বলছে, মহাসড়কে কোথাও কোন যানজটের মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। কিন্তু বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাসের সংকট রয়েছে বলে জানান তারা।
এদিকে মহাসড়কে যানজট নিরসন ও শৃঙ্খলা রক্ষায় হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনীও। মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন প্রতিরোধ এবং বিশৃঙ্খল ভাবে জাতীয় উঠানামায় যানজট ঠেকাতে যৌথ বাহিনী কাজ করবে ঈদের পর পর্যন্ত।

এদিকে ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৪ কিলোমিটার অংশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বিভিন্নস্থানে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। এছাড়া যানজট এড়াতে সড়কের ১২ টি স্থানে নেয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। সড়কের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে দুপুরে দাউদকান্দিতে উপস্থিত হন র্যাব- ১১ এর অধিনায়ক- লে. কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঈদের আগে, ঈদের দিন এবং তারপরের দিনগুলোতে আলাদা আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি। আমাদের সাধারণ টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি, গোয়েন্দা নজরদারিও রয়েছে মহাসড়কে। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি কিংবা যাত্রীবাহী যানবাহনে ছিনতাই ও ডাকাতি রোদে মহাসড়কের র্যাব সদস্য সচেষ্ট থাকবে।