রোববার ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২
মরণনেশার হাত থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচান
প্রকাশ: রোববার, ২৯ জুন, ২০২৫, ১:৩৬ এএম |



 মরণনেশার হাত থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচান



দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শিশু, তরুণ, কিশোরদের আসক্ত হওয়ার সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে; যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। মাদক সেবন বাড়ার পেছনে এর সহজলভ্যতাকে দায়ী করছেন অনেকে। প্রতিনিয়ত মরণনেশায় জড়াচ্ছে এ দেশের শিশু-কিশোর ও উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে মাদকের কারবারিরাও তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
তারা বেছে নিচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গোপনে মাদক কেনাবেচা করছে তারা। কারবারিরা মাদকদ্রব্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেন করছে তারা বিটকয়েন ব্যবহার করে। বেপরোয়া এই চক্রের তৎপরতা এতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, সরকারি হিসাবেই মাত্র সাত বছরে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। অর্থাৎ মাদকের কেনাবেচা ও সেবন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) অর্থায়নে মাদকসেবীদের নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা ৮৩ লাখ। এর মধ্যে ৭৭ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ, নারী পৌনে ৩ লাখ ও আড়াই লাখের মতো শিশু রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখের কিছু বেশি। 
বিশ্লেষকদের মতে, বিজিবি ছাড়াও র‌্যাব, পুলিশ, ডিএনসি, কোস্টগার্ডসহ অন্য সংস্থাও নিয়মিত অভিযান চালিয়ে প্রতিদিনই মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করে যাচ্ছে। তার পরও থামানো যাচ্ছে না মাদকের আগ্রাসন। মাদক যখন বেশি ধরা পড়ে, তখন সাধারণত তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি জানান দেয়। কয়েক স্তরের গোয়েন্দা নজরদারি সত্ত্বেও সীমান্তে যেভাবে মাদকের ঢল দেখা যাচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। ‘শর্ষের মধ্যে ভূত’ আছে কি না, তা নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। খবরের কাগজের অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে।
 সারা দেশে যেখানে মাদকের ভয়াবহ থাবায় তরুণসমাজ ধ্বংস হওয়ার পথে, সেখানে বাড়তি উদ্বেগ বাড়িয়েছে অনলাইনে মাদকের হাট। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মাদক চক্রের তৎপরতা চললেও এসব ক্ষেত্রে মাদকবিরোধী কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। মাঝেমধ্যে দু-চারজন গ্রেপ্তার হলেও ধারাবাহিক অভিযান নেই। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গোয়েন্দারা ঠিকমতো এসব বিষয়ে মনিটরিং করছে না বলে মনে করেন সামাজিক অপরাধ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ নানা কারণে মাদকবিরোধী অভিযানেও ভাটা পড়ে। 
সামাজিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, মাদক সেবন ও কেনাবেচা এমন একটি অপরাধ, যার সঙ্গে সব অপরাধের যোগসাজশ রয়েছে। মাদক বন্ধ করা না গেলে অন্য অপরাধও কমানো যাবে না। ফলে মাদকের সামাজিক যে ক্ষতি সেটা ভয়াবহ। সমাজ, পরিবার সর্বোপরি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাদকের থাবায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেমন কঠোর হতে হবে, তেমনি পরিবার বা অভিভাবকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। 
মাদক একটি সমাজিক ব্যাধি। মাদকের  সহজলভ্যতার কারণে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। এতে ভবিষ্যৎ ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি দুর্বিষহ করে তুলেছে পরিবারের সদস্যদের জীবন। সরকারকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া সামাজিকভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দিতে হবে। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নৈতিক শিক্ষার চর্চা বাড়াতে হবে। মরণনেশার ছোবল থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।













সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে আসামীদের গ্রেফতারের প্রেচেষ্টা অব্যাহত
কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড়
ব্রাহ্মণপাড়া- মিরপুর সড়ক রাস্তা ধসে পুকুরে বিলীন হওয়ার শঙ্কা
ব্রাহ্মণপাড়ায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
চৌদ্দগ্রামে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড়,
১০ হাজার টাকা করে পাবেন শিক্ষার্থীরা, যেভাবে মিলবে এই টাকা
অন্যায়ভাবে নীলফামারীতে আটক কুমিল্লার শাহাজাদাসহ দুই সাংবাদিক, ন্যূনতম মামলা দেওয়ার চেষ্টা
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আবারও টানা ৩ দিনের ছুটি
কুমিল্লায় পাটজাতপণ্য উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধের হিড়িক, রপ্তানীতে ধস
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২