“নির্বাহী
আদেশে নয় বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে” এই ধারণাটাই
ভুল। বিচারিক প্রক্রিয়ায় কি “করতে হবে” সেটা আমরা আগে থেকে বলে দিতে পারি
না। নির্বাহী আদেশ সরকার দেয়, তার মধ্যে জনতার দাবির প্রতিফলন থাকতে পারে।
কিন্তু বিচারের রায় কি হবে সেটা সম্পূর্ণ বিচারকের স্বাধীন সিদ্ধান্ত তথ্য
প্রমাণ যুক্তি তর্কের ভিত্তিতে। জনগণ কি চাইল অথবা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট
কোনটাই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা উচিত না। সুতরাং নির্বাহী বিভাগ যে
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বরাতে বিচার চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম
নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এটাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাস্তবসম্মত সমাধান।
সেই
সাথে এটাও উল্লেখ্য যে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে “কার্যক্রম নিষিদ্ধ”
এর ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনেও দল
হিসেবে বিচার/নিষিদ্ধ করা যায় কি না সেই সংক্রান্ত ধারা যুক্ত করা হবে বলে
সরকার কথা দিয়েছে।
গত তিন দিন তিন রাত যেই স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন হলো এটা
এনসিপির একার আন্দোলন ছিলো না। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি প্রায় সকল
জুলাইযোদ্ধার প্রাণের দাবি। এখানে নানা দল নানা মতের মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ও
সাংগঠনিকভাবে অংশ নিয়েছে। তাই অন্য কোন দলের স্লোগান ও দলীয় সংগীতের দায়
এনসিপির নয় এবং অনেকের চোখে “বিতর্কিত” মানুষের উপস্থিতি আটকানোর দায়িত্বও
এনসিপির ছিলো না। শাহবাগ থেকে যমুনা পর্যন্ত এক জনসমুদ্র ছিলো, আবার অনেকে
ভাগ ভাগ হয়ে বসে থেকেও আন্দোলন চালিয়ে গেছে। রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে এই
গ্রুপ গুলোর মতপার্থক্য আছে, থাকবে। তবে গত তিন দিন সবার একটাই লক্ষ্য ছিলো
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা। বাসায় বসে একটা রিল দেখে আপনি হয়তো ভাবছেন দেশ
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নিয়ে গেল কারণ আপনাকে ভাবানো হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে
তেমন কিছুই হয় নাই। আর এনসিপি শুরু থেকেই আহ্বান জানিয়ে আসছে নিজের ও
অন্যদের দলীয় পরিচয় বাদ দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের নামে এই আন্দোলন করতে
যেন সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিতে পারে।
এনসিপি সম্পর্কে সব সময়ই বলে
আসছি, একাত্তরের স্বাধীনতার সত্যিকারের চেতনাই চব্বিশের স্বাধীনতার মূল
অনুপ্রেরণা, আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা নিশ্চিতের অংশ হিসেবেই
এই আওয়ামী নিষিদ্ধের আন্দোলন। এর পিছনে আর কোন উদ্দেশ্য নাই। অনেকেই আমাদের
ভুল বুঝছেন জানি। জনগণের আস্থা অর্জন আমাদের দায়িত্ব, করতে না পারলে
আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত মিথ্যাচার যে করা হয় সেটাও
কলুষিত রাজনীতির অংশ। আমরা এর বিরুদ্ধে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় তুলে ধরতে
চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমরা নতুন দল হতে পারি কিন্তু কারও বি টিম নই। ডান বাম
যেদিকেই আমাদের ঠ্যালা দেন আমরা মধ্যেই থাকবো আর যখন যেটা সঠিক কথা সেটাই
বলবো।
জুলাই আন্দোলন কে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করেছেন আপনারাই, এ দেশের
মুক্তিকামী জনতা। গতকাল এই গণঅভ্যুত্থানকে কাঙ্খিত বিপ্লবে পরিণত করার পথে
এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হলো। এখন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, জুলাই ঘোষণাপত্র
লাগবে আগামীর দলিল হিসেবে এবং মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।
লেখক: জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও কুমিল্লা অঞ্চলের সাংগঠনিক তত্ত্বাবধায়ক।