শনিবার ২৮ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শিক্ষা ও চাকরি বাজারে মেলবন্ধনের অভাব
সময় এসেছে বদলানোর
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫, ১:৪২ এএম আপডেট: ২৮.০৬.২০২৫ ২:০৬ এএম |

 শিক্ষা ও চাকরি বাজারে মেলবন্ধনের অভাব
বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২শতাংশই তরুণ। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই  শিক্ষার্থী। জনসংখ্যা সুবিধাকে বলা হয় ‘উইন্ডো অব অপরচুনিটি'। এ সুবিধা যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ যদি সঠিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়, তাহলে দেশে বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে চাকরির বাজারের চাহিদা বেশি বেসরকারি খাতে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞান থাকা জনবলের।  স্নাতক পাস করেও কারিগরি জ্ঞানও প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে অনেকেই পছন্দ অনুযায়ী চাকরী পাচ্ছে না। আমাদের দেশে বেসরকারি খাতে অফিশিয়াল কাজে কিছু কর্মকর্তা থাকেন, যাঁদের কারিগরি জ্ঞান কম থাকলে ও চলে। এদের সংখ্যা খুবই কম। সাধারণত বেসরকারি কারখানায় শ্রমিক ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলে দরকার হয় প্রায় সত্তর শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিতরা সাধারণ শিক্ষা শিক্ষিত, যার সঙ্গে শিল্প কারখানা ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনার কোনো সম্পর্ক থাকে না। 
দেশের জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো যাচ্ছে না। সুবিধা জনক চাকরি না পেয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ও অনেকে টিউশনি, পাঠাও-উবারে ডেলিভারিম্যান, বিক্রয়কর্মীসহ নানা ধরনের কাজ করে জীবন ধারণ করছেন। এমনকি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরির জন্যও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা আবেদন করছেন 
বিবিএসের হিসাব অনুসারে দেশের মোট বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮২ হাজার। তাঁদের মধ্যে সাড়ে ২১ লাখই তরুণ-তরুণী। বেকারদের ৮৩ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। গড় বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৭ শতাংশ হলেও তরুণ শ্রমশক্তির মধ্যে বেকারের হার ৮ শতাংশ। একজন কাজ প্রত্যাশী তরুণকে গড়ে ছয় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেকার থাকতে হয়।
দেশের লেখাপড়া ও পরীক্ষা পদ্ধতির কি এর জন্য দায়ী নয়! আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো অনেকাংশে বইয়ের পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার উপর নির্ভরশীল। পরীক্ষা আসছে তো ইংরেজি গ্রামার, প্যারাগ্রাফ, ডায়ালগ, লেটার-এসব মুখস্থ করো। পরীক্ষায় লিখে দাও। পাস ঠেকায় কে। এবার সনদ নিয়ে ঘুরতে থাক। কিন্তু এ সনদে এ যুগে চাকরি পাওয়া কঠিন, ফলে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি পেলেও কাজের বাস্তব দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।  যদি ও শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কেবল চাকরি পাওয়া নয়। দেখা যাচ্ছে, এই সনদধারীদের একটি বড় অংশ ভালো করে ইংরেজি লিখতে, ইমেইল করতে ও ঠিকমত সুন্দর করে কথা বলতে পারছেন না। তাদের মধ্যে একটি ভালো প্রেজেন্টেশন সমস্যা হচ্ছে অনেকের কারণ, এর দায় শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যবহারিক চর্চা কম থাকা।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান কারণ ছিল শিক্ষার্থীদের চাকরি নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ । সেই হতাশা ও ক্ষোভ থেকে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হয়। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের প্রতি কি আশানুরূপ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতে এ ধারা চলতে থাকলে এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নেবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সিলেবাস ও প্রশিক্ষণ সংযুক্ত করা দরকার। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনে এমন অনেক বিষয় শেখে, যা সরাসরি কোনো পেশাগত কাজে লাগেনা। এ শিক্ষাব্যবস্থা যুগের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। 
এ কারণে বিদেশ থেকে কর্মী আনা হয়। দেশে মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ে পেশাদার মানবসম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। দেশের বড় তিনটি খাতের মধ্যে রয়েছে পোশাক, চামড়া ও ওষুধশিল্প। এ খাতের অধিকাংশ মূল পদে কাজ করেন বিদেশিরা, যা কাম্য নয়।
পোশাকশিল্পে দরকার ফ্যাশন ডিজাইনারসহ অনেক ধরনের টেকনিক্যাল কাজের জনশক্তি। দেশের উচ্চশিক্ষিতদের এ কাজের দক্ষতা নেই। তাই এক পোশাক খাতেই বিদেশি কর্মীদের কয়েক বিলিয়ন ডলার বেতন দিতে হয়। অনেক খাতেই এমন অবস্থা বিরাজমান। এ থেকে উত্তরণে শিক্ষানীতির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সাধারণত অর্থনৈতিক সংকটের সময় কোম্পানিগুলো নতুন নিয়োগ করে না। কর্মী ছাঁটাই করে। ফলে বেকারত্ব বেড়ে যায়। এ সময় যাদের কাজের অভিজ্ঞতা কম, তাদের কাজ পাওয়া আরো কঠিন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রযুক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এখন অনেক নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। বিকাশ, পাঠাও, শিওর ক্যাশ, সহজ, ওয়ানস্টপ সরবরাহকারী সংস্থাসহ প্রায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার স্টার্টআপ কাজ করছে। এখানে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।
 এসব ক্ষেত্রে যেন তরুণেরা উদ্যোক্তা হতে পারেন। কাজের বাজার সৃষ্টি করতে পারেন। সেভাবে তাদের গড়ে তুলতে হবে । দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় পড়াশোনা করেন। কারিগরি বিষয়ে আগ্রহ কম। বর্তমানে কমপক্ষে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। কোন শিল্পের জন্য কী ধরনের মানবসম্পদ দরকার, প্রথমে সেটা ঠিক করতে হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি তৈরি করতে হবে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এ ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক শত শত কোটি টাকা আয় করেন। কিন্তু তাদের কয়টা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে? কয়টা গবেষণাকেন্দ্র আছে? দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে তাদের ও দায় রয়েছে। সরকারের উচিত তাদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা।
প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ কর্মবাজারে আসছেন। তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনেক অর্থ ও সময় ব্যয় করে আমাদের একশ্রেণির মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় কি কেবল শিক্ষিত বেকার তৈরি করতেই থাকবে? শিক্ষার্থীরা যে সাবজেক্ট বা বিষয়ের ওপর উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন, তা তার কর্ম ও বাস্তব জীবনে কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে। বর্তমান শিক্ষা ও চাকরি বাজারের মধ্যে একটি বড় মেলবন্ধনের অভাব রয়েছে। এই ব্যবধান দূর না করলে বেকারত্ব কমবে না এবং দেশের মানবসম্পদের পূর্ণ ব্যবহারও সম্ভব হবে না। তাই সময় এসেছে শিক্ষা ব্যবস্থায় বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানোর।
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা। 













সর্বশেষ সংবাদ
‘চট্টগ্রাম বন্দর ও করিডোর কাউকে না দেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে’
কুমিল্লায় পাটজাতপণ্য উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধের হিড়িক, রপ্তানীতে ধস
সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই উপহার দিতে পারে সম্প্রীতির কুমিল্লা- হাজী ইয়াছিন
‘দিবসবিষয়ক সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে সরকার’
বুড়িচংয়ে ৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লার জগন্নাথপুরে যখন রথউৎসব হতো তখন হাতির মিছিল হতো
আগামী সংসদ নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীর প্রচারণা
‘বন্দর বাঁচাতে, করিডোর ঠেকাতে’ চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ এখন কুমিল্লায়
সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই উপহার দিতে পারে সম্প্রীতির কুমিল্লা- হাজী ইয়াছিন
কুমিল্লায় পাটজাতপণ্য উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধের হিড়িক, রপ্তানীতে ধস
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২