ভারতের কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলাকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়ায় ভারত-পাকিস্তান। যুদ্ধের অস্ত্র সবসময় মিসাইল, বোমা বা ড্রোন নয়, কখনো কখনো পানিও হতে পারে অস্ত্র। এই যুদ্ধে ভারত দেখিয়েছে, এ অস্ত্র কতটা শক্তিশালী হতে পারে। ভারত যখন ঘোষণা দিয়ে সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ হ্রাস করেছে, তখনই পাকিস্তানের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সিন্ধু নদের পানি পাকিস্তানের ‘লাইফ লাইনের’ মতো। সপ্তাহখানেক আগে, নয়াদিল্লি ভারতশাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এ ব্যবস্থা নেয়।
ইতোমধ্যে চলমান সহিংসতায় অর্ধশতাধিক মানুষ মারা গেছেন। গত কয়েক দিনের সীমিত যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পর বড় ধরনের যুদ্ধ থেকে সরে এসেছে ভারত-পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে দুই দেশ। ট্রাম্প বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি হয়েছে এবং নিরপেক্ষ স্থানে এ নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনায় বসবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান হামলা বন্ধ করে যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছে। পাকিস্তান সব সময়ই এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সঙ্গে কোনো আপস করেনি। অপরদিকে ভারতের পক্ষ থেকেও যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দুই দেশই জানায়, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। শান্তির পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেহবাজ শরিফের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও রাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করি।’
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান কয়েক দফা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। সেখানে কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে। এদিকে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এটা দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শ্রীনগরের কয়েকজন বাসিন্দা আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, তারা একাধিক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। ওই সময় শহরটির একটি অংশে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে ব্ল্যাকআউট করা হয়। বিস্ফোরণের পর সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভারত পাকিস্তানের এ সহিংসতায় বিশ্বনেতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিশ্বনেতারা দুই দেশকে সংযত আচরণ করতে এবং যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানও জানিয়েছেন। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে এ সংঘাতের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, ঠিক সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর ও দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনায় আশার সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন দুই দেশের সরকারপ্রধানকে। আশা করছি, দুই দেশের দক্ষ নেতৃত্ব পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ সবসময়ই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুসুলভ। সে হিসেবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সৃষ্ট উত্তেজনা দ্রুত নিরসন হোক, এটাই প্রত্যাশা।