কোমর সমান জলাবদ্ধতায় গুদামে ১৪ ঘরের মধ্যে ৮টি পরিত্যক্ত, নষ্ট হচ্ছে খাদ্য, চর্মরোগ আক্রান্ত শ্রমিকরা

কুমিল্লার
প্রধান খাদ্যগুদাম ধর্মপুর খাদ্য সংরক্ষণাগার ভাসছে হাটু থেকে কোমর
পানিতে। পুরো এলাকাই রূপ নিয়েছে আলকাতরার মত ঘন কালো বিষাক্ত পানির জলাশয়ে
আর গুদাম ঘরগুলোর চারপাশ পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। শুকনো কিংবা বর্ষা..
সারাবছরই থাকে এমন দৃশ্য।
গুদাম কর্তৃপক্ষের দাবি, জলাবদ্ধতা সৃষ্টির
এই পানি হচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের। তাদের বাসা-বাড়ি, ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানের এবং ড্রেনের পানি প্রবেশ করছে বছরের পর বছর। বিকল্পভাবে সিটি
কর্পোরেশন নিষ্কাশনের ব্যবস্থার উদ্যোগ না নেয়ায় পানি জমে এ জলাবদ্ধতার
সৃষ্টি হয়েছে খাদ্য সংরক্ষণাগার এলাকাজুড়ে। নিরুপায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক
কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার সিটি কর্পোরেশনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে তাদের পানি
নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হলেও কানে তুলেননি সিটি কর্পোরেশন।
স্থানীয়রা
জানান, গত ২০১৭ সাল থেকে এ অচল অবস্থার শুরু। নগরীর বাগিচাগাঁও, অশোকতলা,
রাণীর বাজার, বিসিক শিল্পনগরীসহ আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ
করেন অশোকতলার বাসিন্দা স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর। যার কারণে সরাসরি পানি
নিষ্কাশনের পথ না পেয়ে খাদ্য গুদামে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।
নগরীর
অশোকতলার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ড্রেনেজ কাঠামো ভেঙে পড়ায় মূলত
আশপাশের আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা ও সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের ময়লা পানিতে
তারাও জলাবদ্ধতার শিকার। এছাড়া খাদ্য সংরক্ষণাগারেও একই পানি প্রবেশ করছে ।
নেই পানি নিষ্কাশনের টেকসই কোন ব্যবস্থা। বিগত সময়ে নিষ্কাসনের বেশ কয়েকটি
পথ থাকলেও খাদ্য গুদামের পাশের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়নে বন্ধ হয়ে যায়
সেগুলো।
১৯৬০ সাল থেকে খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার হয়ে আসা এ
সংরক্ষণাগারে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে গুদাম রয়েছে ১৪টি। যার ধারণ ক্ষমতা সাড়ে
১০ হাজার টন। কিন্তু জলাবদ্ধতায় পরিত্যক্ত ৮টি গুদাম। ফলে বর্তমানে ধারন
ক্ষমতা নেমেছে অর্ধেকে।
গুদামে
খাদ্য উঠানামায় কাজ করা বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, জলাবদ্ধতা আর
স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে নষ্ট হচ্ছে গুদামে সংরক্ষণে থাকা ধান, চাল, গম।
অন্যদিকে, পানির নিচে ডুবন্ত গুদাম এলাকার সব সড়ক। ভাঙাচুরা ও গর্তে
বিঘ্নিত হচ্ছে খাদ্য পরিবহন। গত ২০১৭ সাল থেকে এমন অচল অবস্থার পরও
সংস্কারে নেই কোনো উদ্যোগ।
শ্রমিকরা বলছেন, জমাট বাধা দূষিত পানির মধ্যে
মালামাল উঠানামায় চর্মরোগসহ আক্রান্ত হচ্ছেন নানা ধরণের পানিবাহিত রোগে।
এছাড়াও খাদ্য পরিবহনের চালকরা গাড়ি নিয়ে এ খাদ্য গুদামে প্রবেশ অনিয়া
প্রকাশ করছেন।
নগরীর সচেতন মহল জানান, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে
পড়েছে বহু আগেই। সিটি কর্পোরেশন নিস্কাশনের পথ না খুঁজে রীতিমতো খাদ্য
গুদামের উপর অত্যাচার করছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের এবং
বাসাবাড়ির ময়লা,আবর্জনাযুক্ত পানি দিয়ে এটাকে ময়লা ভাগাড়ে পরিণত করেছে।
খাদ্য সংরক্ষণের কোন পরিবেশ নেই এখানে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের
উচিত হবে সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া।
তারা বলেন,
কুমিল্লার ধর্মপুরের এ খাদ্য সংরক্ষণাগার থেকে রেশন হয় জেলা পুলিশ, বিজিবি,
সেনাসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে
ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি খাদ্যেরও সরবরাহ হয় এখান থেকে।
কুমিল্লা ধর্মপুর
খাদ্য গুদাম সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, বারবার অবহিত
করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না সিটি কর্পোরেশন। ২০১৭ সাল একই অত্যাচার করে
যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। আগে রেলপথের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ ছিল। পরে
রেলপথের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে কালভার্টগুলো ভেঙে ফেলায় সিটি কর্পোরেশনের
সব পানি খাদ্য গুদাম এলাকায় জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। যার কারণে বছরের
প্রতিটি দিন হাটু ও কোমর পানিতে তলিয়ে থাকে গুদাম ঘরগুলো, প্রবেশ পথ এবং
পুরো এলাকা।
কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন,
বহুবার সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে
তাদের আবাসিক এলাকার ও ড্রেনের পানি অন্যদিকে নিষ্কাশনের পথ তৈরি করতে।
কিন্তু তারা কোন কিছুরই ব্যবস্থা নেয়নি। এখন সশরীরে গিয়েও সিটি
কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সিটি
কর্পোরেশন দ্রুত কোন ব্যবস্থা না করলে এবার খাদ্য গুদামে পানি প্রবেশের
পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, খাদ্য সংরক্ষণাগারের উন্নয়নে
খাদ্য মন্ত্রণালয় একশ' কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে জমা দিয়েছে। চলতি
অর্থবছরের শুরুতেই খাদ্য গুদামের উন্নয়নের কাজে হাতে দেয়ার প্রত্যাশা ছিল
কিন্তু সরকার পরিবর্তনের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে খাদ্য উপদেষ্টা
জানিয়েছেন প্রকল্পটি দ্রুততম সময়ের সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।
জেলা
খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান
নির্বাহী মোঃ ছামছুল আলম বলেন, আমার জানা নেই। প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন।
এগুলো আমার জানাও বিষয় নয় বলে তিনি এড়িয়ে যান।