ঘড়ির
কাটায় তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। প্রচন্ড রোদে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর
অফিসের বারান্দায় সেবা গ্রহীতাদের ভীড়। কেউ জন্ম নিবন্ধন, কেউ ভুল সংশোধন
আবার কেউবা নাগরিক সনদ ও ওয়ারিশ সনদপত্র নিতে ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তার
অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। কিন্তু দেখা নেই কারও!
বৃহস্পতিবার
(৮ মে) কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১নং শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে
গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। সেদিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শারীরিক অসুস্থ থাকায়
আসেননি নিজ কার্যালয়ে। আর ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিসের আগমন ঘটে
নিত্য দিনের ন্যায় দুপুর ১টায়!
স্থানীয় সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ সকাল
৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে সচিব (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) দায়িত্ব
পালন করার কথা থাকলেও শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা
হোসেনেয়ারা বিথী আসেন নিজের গড়া সময়ে। কোন দিনও তিনি ১২টার আগে আসেন না,
দুপুর ২-৩ টার পর আর থাকেন না। সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও প্রতি সপ্তাহের পাঁচ
কর্মদিবসের মধ্যে ২-১ দিন অনুপস্থিত থাকেন তিনি।
কম্পিউটারে অজ্ঞ
প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসনেয়ারা বিথী’র অফিসে আগমন যেন শুধুমাত্র স্বাক্ষরের
জন্য। সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর
নিয়োগ থাকার পরও তার কার্যালয়ের ব্যক্তিগত ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার
করছেন বহিরাগত কথিত এক উদ্যোক্তা মো. আলাউদ্দিন। ওই সহকারী কাম কম্পিউটার
অপারেটর সায়েমা আক্তারও নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদ না আসা ও কম্পিউটারে কাজ না
জানার অভিযোগ রয়েছে।
একই ইউনিয়ন অফিসে প্রায় দশ বছর কর্মরত হোসনেয়ারা
বিথী গত তিন বছর যাবৎ সাচিবিক সব কার্যক্রম পরিচালনার সকল দায়িত্ব দিয়ে
রেখেছেন ওই কথিত উদ্যোক্তাকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই কথিত উদ্যোক্তা
টাকার বিনিময়ে তৈরি করে দিচ্ছেন জন্ম-মৃত্যু ও নাগরিক সনদ। ৫-১০ হাজার
টাকার চুক্তিতে করছেন বয়স সংশোধনের কাজও। জন্ম নিবন্ধনসহ সকল নাগরিক সুবিধা
নিশ্চিত করতে নানা কাগজপত্র প্রস্তুতে সরকারের নির্ধারিত ফি এর চেয়ে
কয়েকগুন বেশি ফি আদায় করছেন ওই উদ্যোক্তা। সেবা গ্রহীতাদের অনেকের মুখে
শোনা গেছে ওই উদ্যোক্তা সচিব (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) এর নামেও টাকা আদায়
করেন।
বৃহস্পতিবার শুহিলপুর ইউনিয়নে আসা সেবা গ্রহীতা রাবিয়া বেগম,
ইউনুছ মিয়া সহ আরও অনেকে জানান, আমরা সকাল ১০টা থেকে বসে আছি। কম্পিউটার
অপারেটর সব কাজ করে সীলগুলো দিয়ে রেখেছে। কিন্তু সচিব এর স্বাক্ষরের জন্য
আমরা ৩-৪ ঘন্টা অপেক্ষা করছি। তারা অভিযোগ করে আরও বলেন- প্রতিদিনই এমন
সমস্যায় ভূগছে এই ইউনিয়নের মানুষ।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর এর
ব্যক্তিগত নিয়োগকৃত কম্পিউটার অপারেটর মো. আলাউদ্দিন জানান- সচিব ও
কম্পিউটার অপারেটর কম্পিউটার চালাতে পারেন না। অনলাইনের কোন কাজও বুঝেন না
তারা। এই ইউনিয়ন পরিষদে কোন উদ্যোক্তা না থাকায় চেয়ারম্যান আমাকে উদ্যোক্তা
হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বেশির ভাগ আমারই করতে হয়। সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে
অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগে তিনি বলে- আমাকে সরকারি ভাবে কোন টাকা দেয়না।
যাদের কাজ করে দেই তারা যা দেয় তা দিয়েই চলি।
শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদে
নিয়োগ হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সায়েমা আক্তার এর ব্যবহৃত ফোন কল
করলে অন্য একজন রিসিভ করে বলেন, তিনি অসুস্থ।
কর্মস্থলে অনিয়মিত
যাতায়াত ও কম্পিউটারে অজ্ঞতার কথা স্বীকার করে শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ
প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসনেয়ারা বিথী বলেন- আমি প্রায়ই অসুস্থ থাকি, তাই
নিয়মিত আসতে পারি না। কম্পিউটারে আমি তাকাতে না পারায় ইউজার আইডি ও
পাসওয়ার্ড দিয়েছি ওই উদ্যোক্তাকে।
১নং শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর
চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দিক জানান- আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে এ
সমস্যায় আছি। ইউনিয়নের সচিব (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) হোসনেয়ারা বিথী কোন কাজ
বুঝেন না, কম্পিউটার জানেন না। অনিয়মিত যাতায়াত করেন। হিসাব সহকারী কাম
কম্পিউটার অপারেটর পদে যিনি আছেন তিনিও কম্পিউটারে পারদর্শী না। যে কারণে
বাধ্য হয়ে সে সময়ের ইউএনও’কে বিষয়টি অবহিত করে একজনকে উদ্যোক্তা হিসেবে
রেখেছি।
এ বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া
হোসেন জানান- শুক্র থেকে রবিবার ছুটি থাকায় আগামী সোমবার বিষয়টি তদন্ত করে
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।