কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের পর নিপীড়ন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ধর্ষক ফজর আলীর ভাই শাহপরানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। ভাইদের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে শাহপরানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নিপীড়ন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে উঠে এসেছে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার ওই নারীও বলছেন একই কথা। আর এলাকাবাসী বলছেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
গত ২৬ জুন দিবাগত রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ধর্ষক ও ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরই মধ্যে পুলিশ ধর্ষণে অভিযুক্ত একই গ্রামের বাসিন্দা ফজর আলী ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। পর্নোগ্রাফী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ওই চার যুবক বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আদালতে তাদের রিমান্ড শুনানির কথা রয়েছে। অপরদিকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ফজর আলী কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হওয়ার পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ধর্ষণের শিকার নারী ও ধর্ষকের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ধর্ষক ফজর আলীর ভাই শাহপরানের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে প্রাথমিক তদন্তে ।
এঘটনায় ইন্দনদাতা ও মূল কারণ উদঘাটনে পর্নোগ্রাফির মামলায় গেপ্তার চারজনের ৭দিন করে রিমান্ড আবেদন করেছে বলে জানিয়েছেন মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শাহপরান জড়িত আছে বলে আমরা তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। এই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই টুটুল নির্দেশ প্রদান করেছি। এর আগে আমরা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। গ্রেপ্তার চারজনের প্রত্যেকের ৭দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। শুনানি শেষে তাদেরকে রিমান্ডে পেলে ঘটনার বিষয়ে আরো
ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারী মামলা প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বরং এ ঘটনায় দু’টি মামলায় অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছেন। ভুক্তভোগী ওই নারীর ভাষ্য ধর্ষক ফজর আলীর সাথে ধারদেনা নিয়ে পূর্ব পরিচয় থাকলেও, বিশেষ কোন সম্পর্ক ছিলো না তার। ফজর আলীর সাথে ভাইয়ের বিরোধীতার প্রতিশোধ নিতেই ধর্ষণের ঘটনার দিন তাদেরকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর ও ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনায় অশালীন ভিডিও ভাইরালকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, অপরাধীকে মিথ্যা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে যেন মূল ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করা না হয়।
এ প্রসঙ্গে মুরাদনগর আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদ ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান, তাই আমি বেশি কিছু বলব না। অনেকেই অভিযুক্তকে বিএনপির কর্মী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তারা মূলত বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে আমি বলতে চাই, ধর্ষকসহ অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় না খোঁজে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শমাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সুষ্ঠু বিচার করতে হবেই হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, সামাজিক সম্প্রীতি ও সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমে মানবিক নিরাপত্তা রক্ষায়, এমন ঘৃন্য কাজে যারাই জড়িত - সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন তাদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হোক। অপরাধীদের মিথ্যা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে বিচারকে যেন কেউ প্রভাবিত করতে না পারে।