মাসুদ পারভেজ।।
কুমিল্লার
মুরাদনগরে মোবাইল ফোন চুরির জের ধরে গণপিটুনিতে একই পরিবারের মা ও দুই
সন্তানসহ তিন জনকে পিটিয়ে হত্যার নেপথ্যে কে এ বাছির। গণপিটুনিতে তিন
হত্যাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন বলে সবার মুখে তার নাম। কারণ
বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাতে মোবাইল ফোনের রোকসানা আক্তার
রুবির ছেলে রাসেল মিয়াকে হত্যার হুমকি দেন। হুমকিতে বলেছিলেন সকালটা হতে
তোদের পুরো পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলবো। এমনটাই অভিযোগ করে বলেছেন রাসেল
মিয়ার স্ত্রী মীম আক্তার।
তাই ধারণা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই)
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি
গ্রামে ঘটে যাওয়া একই পরিবারের তিন ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডটি বাছিরের
নেতৃত্বেই হয়েছে।
হত্যার মূল মাস্টারমাইন্ড বাছির কড়ইবাড়ি বাজারের
ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বক্তব্যে নিহত রাসেল মিয়ার স্ত্রী
মীম আক্তার বলেন, আমি আর রাসেল আমাদের বাড়িতে ছিলাম। রাতে কড়ইবাড়ি বাজারের
ব্যবসায়ী বাছির আমার স্বামীকে ফোন করে বলেন সকালটা হতে দে, তোদের পরিবারের
সবাইকে মেরে ফেলবো। আমরা মনে করছি এমনিতেই বলতাছে। সকালে আমার ননদ রুমা
রাসেলকে ফোন করে বলে ভাই মা ও জোনাকীরে কোপাইয়া মাইরালাইছে। আমারেও
কোপাইছে, এখন হাসপাতালে নিতাছে। খবর পেয়ে রাসেল মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত
বাড়িতে আসে। পিছে পিছে অটো রিকশা নিয়ে আমিও রওয়ানা দিয়। রাসেল আসা মাত্রই
তাকেও পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার শ্বশুর খলিলুর রহমান ও ননদ রিক্তাকে
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
মীম আরও দাবি করেন, এটি বাছিরের পরিকল্পিত
হত্যাকাণ্ড। বাছিরের নেতৃত্বে আমার শাশুড়ি, ননদ ও স্ত্রীকে হত্যা করা
হয়েছে। তদন্তপূর্বক এ ঘটনার বিচার দাবী করছি এবং হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে
দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাঁসির দাবী জানিয়েছেন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে
শ্বশুর ও ননদ সন্ধান দাবী করেন তিনি।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও
বলেন, সকাল বেলা থাই গ্লাসে বড় বড় ইট মারা হয়। ভাবলাম তুফান আসছে। জানালা
দিয়ে দেখি মানুষ আর মানুষ পুড়ো বাড়ি মানুষ ঘিরে ফেলেছে। পরে আমার শাশুড়ি
দেখে ভয়ে দৌড় দিছেন। আমার শাশুড়িকে আগে কুপিয়েছে। মাথাটা ইট দিয়ে আর বাঁশ
দিয়ে পিটিয়ে থেতলিয়ে ফেলেছে। আমার শাশুড়ি মারা যাওয়ার অবস্থা দেখে তারা
তিনজন তিন দিকে দৌড় দিছে তাদেরকেও ধরে ফেলেছে। আমার শাশুড়িকে যেভাবে মেরেছে
একই ভাবে আমার ছোট ননদকেও মেরে ফেলেছে। ছুরি কুপিয়েছে আর ইট দিয়ে মারছে।
এর মধ্যে আমার এক ননদ পালিয়ে গিয়েছে।
মেঝো ননদ তার ভাইকে ফোন দিয়ে বলছে
ভাই আম্মাকে আর জোনাকীরে তো মেরে ফেলেছে আমাকে এসে বাঁচাও। খবর পেয়ে আমার
স্বামী বলতেছে বাড়িতে নাকি ঝগড়া হইছে আমি বাড়ি যাই। আমি নিষেধ করেছি তুমি
যাইয়ো না। সে বলতেছে না আমি যাই আমার মা’কে নাকি মাইরা ফেলছে। আমার স্বামী
মোটরসাইকেলে আসছে। আমার উনার পিছনে পিছনে সিএনজিতে আসছি। আমার স্বামী
মোটরসাইকেলে থাকা অবস্থায় লোকজন দেখে তাকে ঘিরান দিয়ে ধরছে। সেখানে একটি
কুপ দিয়েছে ওই কুপ মাথার একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়েছে। তারপরও
আমার স্বামী তাদেরকে বলেছিল ভাই আমাকে প্রান ভিক্ষাদে। আমার একটি কন্যা
শিশু আছে আমি মাত্র দুই বছর হয় বিয়ে করেছি। এরপরেও আমার স্বামী দৌড়ে পালাতে
চেয়েছিল কিন্তু তাকে আবারও ধরে এনে ইট দিয়ে মাথা থেতলিয়ে মগজ বের করে
ফেলে। এই ঘটনার সময় চেয়ারম্যান, মেম্বার, বাছির, বাছিরের ভাই মা ও বাবা
এলাকার সবাই উপস্থিত থেকে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন,
একই পরিবারের তিনজন হত্যার ঘটনায় মামলা প্রকৃয়াধীন। তারপরও পুলিশ প্রাথমিক
তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নেপথ্যে কারা জড়িত তদন্তে সেই
বিষয়গুলো তুলে আসতে থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে।