কুমিল্লার মুরাদনগরের মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনিতে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে আরও একজন। নিহতারা হলেন- বাঙ্গরা বাজার এলাকার কড়াই বাড়ির বাসিন্দা রোকসানা আক্তার রুবি(৫৫), তার ছেলে রাসেল(২৮) ও মেয়ে জোনাকি (২২) । গুরুতর আহত রুবির মেয়ে রুমি আক্তার। স্থানীয়রা বলছে- ওই পরিবারটি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। এ ছাড়াও নানা অপকর্ম ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল তারা। এর জের ধরে সঙ্ঘবদ্ধ গ্রামবাসী বুধবার সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়িতে হামলা চালায়। এতেই ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। তবে নিহতদের পরিবারের দাবি, মোবাইল চুরির ঘটনা কে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এই হত্যাকান্ড।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রুবির পরিবার ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত, এ ঘটনার জেরে আজ সকাল ৯ টার দিকে এলাকাবাসী ওই বাড়িতে হানা দিয়ে তাদেরকে গণপিটুনি দেয়। এতেই ঘটনাস্থলে তিনজনের মৃত্যু হয়। তিনি জানান, রুবির নামে পাঁচটি, রাসেলের নামে নয়টি এবং জোনাকির নামে দুইটি মামলা রয়েছে।
করইবাড়ী এলাকার স্থানীয় একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত রবি'র পরিবারের উপর মাদক ব্যবসা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলো স্থানীয়রা। রুবি এবং তার পরিবারের সদস্যরা এলাকায় আধিপত্য নিয়েই বসবাস করে আসছিল দীর্ঘদিন। সম্প্রতি একটি মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রুবির সাথে দ্বন্দ্ব হয় স্থানীয় বাছির নামে এক ব্যক্তির। এই ঘটনায় রুবি স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানকেও অপদস্ত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রুবি এবং তার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার। এরই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার সকালে রুবির বাড়িতে হামলা ও গণপিটুনির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কড়াইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত রুবি এই এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। তার পরিবারও স্থানীয় মানুষকে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত করে ক্ষতি করে আসছিল। এরই জের ধরে গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর হামলা করে। এ সময় বাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং গণপিটুনিতে তিনজনের মৃত্যু হয়।
তবে রুবির ছেলে নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সম্প্রতি মারুক নামে এক ছেলে চুরির ঘটনায় পড়লে তাকে ছাড়িয়ে আনতে যায় তার শাশুড়ি রোকসানা আক্তার রুবি । এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা বাছিরের সাথে বাগবিতণ্ডা হয়। এরই সূত্র ধরে আমাদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর হয়। গণপিটুনি দিয়ে আমার স্বামী শাশুড়ি এবং ননদকে মেরে ফেলা হয়েছে।
তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যায় এই হামলা করার পরিকল্পনা করে তাদের প্রতিপক্ষের লোকজন। এভাবে যে তিনজন মানুষকে মেরে ফেলা হবে সেটা বুঝতে পারিনি।
এদিকে তিনজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান। এ সময় তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। কেউ এলাকায় কোন অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করলে জনগণের উচিত তাকে পুলিশে সোপর্দ করা। এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া জরুরি কাম্য নয়। যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।