বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলীতে ফেলা হচ্ছে বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য
বায়ু ও পরিবেশ দূষণের দায়ে কুমিল্লা ইপিজেডের সিগমা ইকোটেককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা
মাসুদ পারভেজ।।
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫, ১:৫০ এএম আপডেট: ০৩.০৭.২০২৫ ১:৫৮ এএম |



  ঢাকা-চট্টগ্রাম  মহাসড়কের হাড়াতলীতে ফেলা হচ্ছে বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ ধরে কারখানার বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য ফেলে বায়ু ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগে কুমিল্লা ইপিজেডের সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সিগমা ইকোটেক লিমিটেডকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (২ জুলাই) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণের হাড়াতলী এলাকায় বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য ফেলে বায়ু ও পরিবেশ দূষণের দায়ে সিগমা ইকোটেক লিমিটেডকে এ জরিমানা করে
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর দক্ষিণ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ রেফাঈ আবিদ।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সৈয়দ রেফাঈ আবিদ জানান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে সিগমা ইকোটেক লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সাথে মহাসড়কের পাশ থেকে দ্রুত বর্জ্য অপসারণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। মহাসড়কের হাওড়াতলী এলাকায় কুমিল্লা ইপিজেডের সেন্ট্রাল ইটিপি’র অন্তর্গত সিগমা ইকোটেক লিমিটেড বিরুদ্ধে স্লাজ বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০২২ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৬(গ) লঙ্ঘনের দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি দূষণকারী বর্জ্য দ্রুত অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  ঢাকা-চট্টগ্রাম  মহাসড়কের হাড়াতলীতে ফেলা হচ্ছে বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য
অভিযানে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক চন্দন বিশ্বাস প্রসিকিউশনের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা, সিনিয়র কেমিস্ট মো. রায়হান মোর্শেদ ও পরিদর্শক জোবায়ের হোসেন। এছাড়াও উপজেলা পুলিশ প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।
শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।
হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিবুল ইসলাম বলেন, ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। এখন দেখছি ইপিজেড কর্তৃপক্ষও এখানে ময়লা ফেলে বায়ু ও পরিবেশ দূষণ করছেন।
স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ রেফাঈ আবিদ বলেন, মহাসড়কের হাওড়াতলীর এ স্থানটি বড়সড় একটি ময়লার ভাগাড়ে সৃষ্টি করেছেন মানুষ। এখানে বাসা-বাড়ি, হাটবাজার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবাই ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে আসছেন। এসব বর্জ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করা যাত্রী, চালক ও পথচারীদের দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাক চেয়ে এ স্থানটি পারাপার হতে হয়। বুধবার স্থানটিতে কুমিল্লা ইপিজেডের বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য ফেলছেন সিগমা ইকোটেক লিমিটেড। এসময় সংবাদ পেয়ে অভিযোগ পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে জরিমানা করা হয়। আজকের পর থেকে হাওড়াতলী এ স্থানে ময়লা পেয়ে বায়ু ও পরিবেশ দূষণ করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয় হবে।

















সর্বশেষ সংবাদ
সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সকালে গণপিটুনি, কুমিল্লায় এক পরিবারের তিনজন নিহত
ফজর আলীর ভাই শাহপরানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলীতে ফেলা হচ্ছে বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য
কুমিল্লায় ভেজাল ঘি ও নকল বৈদ্যুতিক তারের বিরুদ্ধে অভিযান, ৪০ হাজার টাকা জরিমানা
কুমিল্লায় পৃথক দুর্ঘটনায় ৩জন নিহত, আহত ২
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সকালে গণপিটুনি, কুমিল্লায় এক পরিবারের তিনজন নিহত
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে দোকানে মিললো টিসিবির ১৪৪২ লিটার তেল
ফজর আলীর ভাই শাহপরানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ
বাড়ি ছাড়লেন সেই নারী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলীতে ফেলা হচ্ছে বিষাক্ত স্লাজ বর্জ্য
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২