বর্তমানসময়েশিক্ষার্থীদেরবিসিএসপ্রবণতাঅত্যধিক বেড়েছে। আরতারপ্রমাণপাওয়াযায়প্রতিবছরবিসিএসপরীক্ষায়আবেদনপত্রেরসংখ্যাবিবেচনায়। বিসিএসপরীক্ষারচূড়ান্তফলাফলপ্রকাশপাওয়ার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেশাবদলেরবিষয়ে বেশআলোচনা-সমালোচনা লক্ষ করি।
অভিভাবকরা যে সন্তানকেনিয়ে ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসককিংবাপ্রকৌশলীবানানোর স্বপ্ন দেখতেন, তারাওএখনচিকিৎসাবিদ্যা-প্রকৌশলবিদ্যা পড়ালেওভবিষ্যতে বিসিএসেরএকটি দাপুটেক্যাডার চেয়ারে দেখতে চানসন্তানকে।
উল্লেখ্য, বর্তমানবাস্তবতায় দাপুটেক্যাডারবলতেবিশেষসুবিধাপ্রাপ্তপুলিশ, প্রশাসন, কাস্টমস, ট্যাক্স এবংপররাষ্ট্রকে বোঝানোহচ্ছে। একজনশিক্ষার্থী এমবিবিএসকিংবাইঞ্জিনিয়ারিংপড়েতারনিজের দক্ষতানির্ভর পেশায়যাচ্ছে না। কারণহিসেবে দেখাযাচ্ছে, তথাকথিত দাপুটেক্যাডারেরসুযোগ-সুবিধাতারনিজ ক্ষেত্রের চেয়েঅনেক বেশি। অথচ তাদের মেধার ক্ষেত্রে কোনোকমতি নেই।
মেধাক্রমবিবেচনায়এবংক্যাডারপছন্দক্রম বিবেচনাতেই যেহেতুবিসিএসেচাকরি হয়, সেহেতুনিজেরসুযোগ-সুবিধারকথাবিবেচনাকরেইতাদেরসুবিধাভিত্তিকক্যাডারেযাওয়ারপ্রবণতা লক্ষ করাযাচ্ছে। ইদানীংবিসিএসের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলচিত্রে দেখা গেছে, পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস, ট্যাক্সেরমতোশীর্ষ ক্যাডারের বেশিরভাগ পদে মনোনীতহচ্ছেএমবিবিএসএবংইঞ্জিনিয়ারিংপাসকরাপ্রার্থীরা।
ক্রমাগতভাবেপরপরকয়েকটিবিসিএসেএমনচিত্রআমরা লক্ষ করেছি। এ প্রবণতারঅন্যতমকারণহিসেবেআন্তক্যাডার বৈষম্যকেই দায়ীকরাযায়। সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরুকরেক্যাডারভেদে পদোন্নতিতেরয়েছেব্যাপক বৈষম্য।
আমরাযদি স্বাভাবিকভাবেসমাজেরকল্যাণ ও গুণগত মানেরচিন্তাকরিতাহলেবলা যেতেপারে, দেশেরযারাসর্বোচ্চ মেধাবীতাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আসারকথাছিলশিক্ষাক্যাডারে। কিন্তু লক্ষণীয়হলো, বিসিএসপরীক্ষায়ক্যাডারপছন্দক্রম ফরম পূরণকরতেগিয়েশিক্ষাক্যাডারকেঅনেকনিচেরপছন্দক্রমে রাখা হয়। কারণএকজনশিক্ষাক্যাডারেরকর্মকর্তারসুযোগ-সুবিধা পূর্বে উল্লিখিততথাকথিত যেকোনো দাপুটেক্যাডারেরতুলনায়অনেক কম।
তাছাড়াপ্রভাব-প্রতিপত্তিরবিষয় তোরয়েছেই। অথচ শিক্ষকতাএকটিআদর্শ পেশাহিসেবেবিবেচনায়নিয়ে মেধাবীদের এই পেশায়আসারপ্রবণতালক্ষণীয়মাত্রায় থাকারকথাছিল। শুধু বৈষম্যেরকারণেএখনআর কেউ বাই-চয়েসশিক্ষকতায়আসতেচাচ্ছে না। ঠিকএকইভাবে ডাক্তারি এবংইঞ্জিনিয়ারিংপড়ে ডাক্তার এবংইঞ্জিনিয়রিং পেশাতেও থাকতেচাচ্ছে না।
কারণ সেখানেওক্যাডারভেদে দৃশ্যমান বৈষম্য লক্ষ করাযাচ্ছ। বাস্তবতাএমনএকটিপর্যায়েএসেছে যে, অনেকেই মেধাবীহওয়াসত্ত্বেওযথাযথ মূল্যায়নপাচ্ছেনানিজ দক্ষতানির্ভর পেশায় থেকে। এ কারণে ডাক্তারি পড়েঅনেকেই ডাক্তার নাহয়ে লোভনীয়ক্যাডারচয়েসদিচ্ছে, আবারইঞ্জিনিয়ারিংপড়েও অন্য পেশায়যাওয়ারপ্রবণতা দেখাযাচ্ছে।
আমাদের দেশে যারাসবচেয়ে মেধাবীতারা মেডিকেলবাইঞ্জিনিয়ারিংয়েভর্তি হয়। তাইবিসিএসেরমতোপ্রতিযোগিতামূলকপরীক্ষায়ও যে তারাভালোকরবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়াবিসিএসপরীক্ষারপ্রশ্নপত্রেএমনকিছুপ্রশ্নআসতে দেখাযায় যেগুলোসাধারণবিষয়েপড়াশোনাকরাশিক্ষার্থীরা উত্তরকরতেপারেনা।
অন্যদিকে একজনইঞ্জিনিয়ারিংকিংবা ডাক্তারি পড়াশিক্ষার্থীর জন্য ওই প্রশ্নেরউত্তরকরাঅনেকটাসহজহচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণবিষয়েপড়াশিক্ষার্থীরা কম নম্বর পেয়েক্যাডারপছন্দের পেছনেরসারিতেচলেযাচ্ছে।
সাম্প্রতিকসময়েআমরা লক্ষ করছি, শিক্ষার্থীদেরপড়াশোনার স্তরঅনেকটাবিসিএসমুখীহয়ে উঠছে। কারণস্নাতকপর্যায়েরপড়াশোনারভিত্তিতে কোনোশিক্ষার্থী ভালোচাকরিরসুযোগপায়না। এ কারণেস্নাতকপর্যায়েরশুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা বিসিএসসিলেবাসআত্মস্থ করার চেষ্টাকরে থাকে।
উচ্চশিক্ষারউদ্দেশ্য হলোএকটিবিষয়েউচ্চতরডিগ্রি নেওয়া, সে বিষয়েজ্ঞানসৃষ্টি, জ্ঞানউন্নয়নকিংবাজ্ঞানেরসম্প্রসারণ। সুদূর দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে সেইজায়গাটা দখলকরেনিয়েছেবিসিএসগাইডবই। অধিকাংশছাত্রছাত্রীক্লাসে লেকচারনাশুনে, মনোযোগনাদিয়েবিসিএসগাইডপড়ে। সম্মান শ্রেণিতেওপড়ে, মাস্টার্সেওপড়ে, আবারপড়াশোনা শেষ করেপাঁচবছর সেই একই বইগুলোপড়ে।
শিক্ষার্থীরা পঠিতবিষয়েরঅর্জিতজ্ঞান, শিক্ষাবাস্তবজীবনেপ্রয়োগকরতেপারছেনা। তাহলে এই শিক্ষারউদ্দেশ্য কী? কিছুব্যতিক্রম থাকবে, কিন্তু গণহারে পেশাবদলেরবিষয়টি কোনোভাবেইশুভলক্ষণমনেকরছিনা। একজনশিক্ষার্থী লোকপ্রশাসনকিংবাসরকার ও রাজনীতিবিভাগেরশিক্ষার্থীরা প্রশাসনসংক্রান্তবিষয়াদি- সরকার, রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন ও শাসনব্যবস্থা নিয়েপাঁচবছরপড়াশোনাকরে।
আবার যেখানেআন্তর্জাতিকসম্পর্ক কিংবারাজনীতিবিজ্ঞানবিভাগেরশিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্রসংক্রান্তবিষয়- পররাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি, আন্তর্জাতিকরাজনীতিও সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়েপাঁচবছরপড়াশোনাকরে। তাহলে এ অর্জিতশিক্ষারউদ্দেশ্য কী? বিসিএসসিলেবাসে যেখানেবাংলা, ইংরেজি, গণিত, উচ্চতরগণিতবাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার।
মানবিককিংবাকলাব্যাকগ্রাউন্ডেরশিক্ষার্থীরা যেখানেগণিত, উচ্চতরগণিত, বিজ্ঞান ও কম্পিউটারএসববিষয়ে কম অবগত। কারণতারাএসববিষয়পড়েনা। কিন্তু বিজ্ঞানবিভাগকিংবা মেডিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরশিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক লেভেল থেকে বিজ্ঞান, কম্পিউটার, গণিতপড়েঅভ্যস্ত। তাইতাদেরবিসিএসপ্রবেশে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। আরঅপেক্ষাকৃত মেধাবীহওয়ায়তারাইচ্ছামতোক্যাডারচয়েসকরতেপারছে। এতে হোঁচটখাচ্ছে মানবিককিংবাকলাব্যাকগ্রাউন্ডেরশিক্ষার্থীরা।
বিশ্বেরঅন্যান্য দেশে দেখাযায়, যে যে বিষয়নিয়েপড়াশোনাকরছে, পড়াশোনা শেষে সে সে বিষয়-সম্পর্কিতচাকরিতে যোগদানকরছে। কিন্তু আমাদের দেশে এর উল্টোচিত্রটাই লক্ষ করাযায়। ইদানীংপ্রথম শ্রেণিতেপ্রথমহয়েওবিশ্ববিদ্যালয়েশিক্ষকহওয়ারনিশ্চয়তা নেই। ফলেবিভিন্নকারণেইশিক্ষার্থীদেরমূলপ্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে বিসিএস।
এই মুহূর্তে আমাদের দেশেরকর্মসংস্থানপরিকল্পনাকে ঢেলেসাজানোরসময়এসেছে। প্রভাব-প্রতিপত্তি, মর্যাদা-সম্মানএবংসুযোগ-সুবিধানির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আবদ্ধ না রেখে এর যথাযথ প্রয়োগঘটালেএবংআন্তক্যাডার বৈষম্য কমিয়েআনলেএমন পেশাবদলেরপ্রবণতাকিছুটাপ্রতিরোধকরা যেতেপারে।
আমাদের দেশেরবিসিএসপরীক্ষাপদ্ধতিআরবিসিএসহুজুগ দেশ ও জাতিরজন্য কোনোকল্যাণবয়েআনছেকিনা, সেটিওবিবেচনায়আনতেহবে। এখনইএ-সংক্রান্তসমস্যাচিহ্নিতকরেসমাধানদিতেনাপারলেআগামীদিনেরশিক্ষাযাত্রায়অশনিসংকেত বেজেওঠার শঙ্কা রয়েছে।
লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানবিভাগরাজশাহীবিশ্ববিদ্যালয়