সংশয় থেকে
যাত্রা করে সত্য জ্ঞানে পৌঁছানো যায় কি না, এই ছিল ফরাসি দার্শনিক
ডেকার্টের সমস্যা। আর অবিশ্বাস থেকে শুরু করে আনন্দে পৌঁছানোর পথ খুঁজেছেন
সারাজীবন, এ যুগের মহান চিন্তাবিদ বার্ট্রান্ড রাসেল।
বার্ট্রান্ড
রাসেলের এই দীর্ঘ অন্বেষণের মূলে শুধু দার্শনিক কৌতূহল নয়, বরং তাঁর জীবনের
একটি অতি ঘনিষ্ঠ সমস্যা জড়িত ছিল। শৈশব থেকে তিনি ছিলেন অসুখী। যৌবনে
বহুবার আত্মহত্যার চিন্তা তাঁর মনে উঁকি দিয়েছে। এমনকি তিনি যখন বিবাহিত,
সন্তানের পিতা এবং ব্যক্তিগত জীবনে বাহ্যত সুখী, তখনও তাঁর মনের গভীরে একটা
বিপুল নৈর্ব্যক্তিক নৈরাশ্য অনড় বোঝার মতো চেপে বসে ছিল। তাঁর বয়স যখন
প্রায় ষাট তখন তিনি লিখেছেন : ও যধাব ফৎরাবফ ভৎড়স সু পযরষফৎবহ ধঃ ষবধংঃ ধং
সঁপয রহংঃরহপঃরাব ংধঃরংভধপঃরড়হ ধং ধ ধহঃরপরঢ়ধঃবফ...ইঁঃ যিরষব সু ঢ়বৎংড়হধষ
ষরভব যধং নববহ ংধঃরংভুরহম সু রসঢ়বৎংড়হধষ ড়ঁঃষড়ড়শ যধং নবপড়সব রহপৎবধংরহমষু
ংড়সনৎব. গু ধপঃরারঃরবং পড়হঃরহঁব ভৎড়স ভড়ৎপব ড়ভ যধনরঃ, ধহফ রহ ঃযব পড়সঢ়ধহু
ড়ভ ড়ঃযবৎং ও ভড়ৎমবঃ ঃযব ফবংঢ়ধরৎ যিরপয ঁহফবৎষরহবং সু ফধরষু ঢ়ঁৎংঁরঃং ধহফ
ঢ়ষবধংঁৎবং. ইঁঃ যিবহ ও ধস ধষড়হব ধহফ রফষব, ও পধহহড়ঃ পড়হপবধষ ভড়ৎ সুংবষভ
ঃযধঃ সু ষরভব যধফ হড়ঃ ঢ়ঁৎঢ়ড়ংব. ও ভরহফ সুংবষভ রহাড়ষাবফ রহ ধ াধংঃ সরংঃ ড়ভ
ংড়ষরঃঁফব.” (ঔঁহব ১১, ১৯৩১). ১৯৩১ সালে তাঁর অসুখের অন্যতম কারণ ছিল পৃথিবী
সম্বন্ধে, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে, হতাশা। কিন্তু এর অতিরিক্ত, আরও
গভীর, কিছু কিছু ছিল না?
প্রথম যৌবনের সংশয় ও বেদনা থেকে বার্ট্রান্ড
রাসেল আত্মরক্ষা করেছিলেন গণিত শাস্ত্রকে আঁকড়ে ধরে। কিন্তু ১৯১৪-১৮ সালের
মহাযুদ্ধ আবারও তাঁর মনে একটা প্রচণ্ড তোলপাড় সৃষ্টি করল। সমাজ ও সভ্যতার
সমস্যা তাঁকে অত্যন্ত গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলল। বিপর্যয়ের শুরুতেই মানব
প্রকৃতি সম্বন্ধে তাঁর ধারণা ভয়নাকভাবে পালটে গেল। তিনি লিখেছেন : ও যধফ
ংঁঢ়ঢ়ড়ংবফ ঃযধঃ সড়ংঃ ঢ়বড়ঢ়ষব ষরুশবফ সড়বহু নবঃঃবৎ ঃযধহ ধহুঃযরহম বষংব, নঁঃ ও
ফরংপড়াবৎবফ ঃযধঃ ঃযব ষরুশবফ ফবংঃৎঁপঃরড়হ বাবহ নবঃঃবৎ”
অর্থাৎ অধিকাংশ
ইংরেজ যুক্তিবাদীর মতো বার্ট্রান্ড রাসেলও পূর্বে বিশ্বাস করতেন যে, সাধারণ
মানুষ সবচেয়ে ভালোবাসে টাকা অথবা সাংসারিক স্বাচ্ছন্দ্য; কিন্তু স্তম্ভিত
হয়ে তিনি আবিষ্কার করলেন যে, টাকার চেয়েও মানুষকে বেশি টানে বিশুদ্ধ
ধ্বংসের উন্মাদনা। কেন এমন হয়, কি করে মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা
যায়, এটাই হয়ে উঠল রাসেলের প্রধান চিন্তা।
গভীর চিন্তার পর বার্ট্রান্ড
রাসেল কয়েকটি সরল প্রত্যয়ে এসে পৌঁছলেন। তিনি লিখলেন : ও নবপড়সব ভড়ৎ ঃযব
ভরৎংঃ ঃরসব ফববঢ়ষু পড়হারহপবফ ঃযধঃ চঁৎরঃধহরংস ফড়বং হড়ঃ সধশব ভড়ৎ যঁসধহ
যধঢ়ঢ়রহবংং. ঞযৎড়ঁমযঃ ঃযব ংঢ়বপঃধপষব ড়ভ ফবধঃয ও ধপয়ঁরৎবফ ধ হবি ষড়াব ভড়ৎ
যিধঃ রং ষরারহম. ও নবপধসব পড়হারহপবফ ঃযধঃ সড়ংঃ যঁসধহ নবরহমং ধৎব ঢ়ড়ংংবংংবফ
নু ধ ঢ়ৎড়ভড়ঁহফ ঁহযধঢ়ঢ়রহবংং াবহঃরহম রঃংবষভ রহ ফবংঃৎঁপঃরাব ৎধমবং, ধহফ ঃযধঃ
ড়হষু ঃযৎড়ঁময ধ ফরভভঁংরড়হ ড়ভ রহংঃরহপঃরাব ুড়ু পধহ ধ মড়ড়ফ ড়িৎষফ নব নৎড়ঁযমঃ
রহঃড় নবরহম.” বার্ট্রান্ড রাসেল এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, প্রবৃত্তিকে পীড়ন
করে মানুষকে সমাজে বাঁচতে হয়। প্রবৃত্তির এই পীড়নের ফলে মানুষ অসুখী; আর এই
অসুখই মানুষকে হন্যে করে তোলে, অপরকে পীড়নের ভিতর মানুষ সুখ খোঁজে। এই
সময় তিনি চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঝড়পরধষ জবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ নামে একটি বই লেখেন। মানুষের
মনের ঝোঁকগুলোকে এখানে সৃজনধর্মী (পৎবধঃরাব) ও সংরক্ষণধমী (ঢ়ড়ংংবংংরাব)
এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মানুষ যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভালোবাসে, শিল্পে
নিজেকে প্রকাশ করে, অথবা কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে জ্ঞানের অন্বেষণ করে, তখন
তার ভিতর সৃজনধর্মিতার প্রাধান্য। আবার মানুষ যখন স্বধন রক্ষায় চিন্তিত
কিংবা নিজের অথবা অপরের নিগ্রহে নিযুক্ত, তখন তাঁর মন সংরক্ষণধর্মী। সেই
সমাজই ভাবে যেখানে মানুষের মন স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে নিজেকে প্রকাশ করার
স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত নয়, যেখানে জ্ঞান মুক্ত, আর প্রেম মানুষে মানুষে
নির্ভয় বন্ধনের সেতু।
তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি নিজেই লিখেছেন : ও যধাব
রসধমরহবফ সুংবষভ রহ ঃঁৎহ ধ ষরনবৎধষ, ধ ংড়পরধষরংঃ, ড়ৎ ধ ঢ়ধপরভরংঃ, নঁঃ যধাব
হবাবৎ নববহ ধহু ড়ভ ঃযবংব ঃযরহমং.” আসলে তাঁর মতের গায়ে কোনো রাজনীতিক তকমা
চাপানোর চেষ্টা করাই ভুল। তিনি কী ভেবেছিলেন সেটাই প্রধান কথা। মূলত
বার্ট্রান্ড রাসেল চেয়েছিলেন মানুষ যেন নির্ভয়ে জ্ঞানের অন্বেষণ করতে পারে
আর আনন্দের ভিতর দিয়ে মানুষের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
শিক্ষা সম্বন্ধে
আলোচনায় বার্ট্রান্ড রাসেল লিখেছেন : ওঃ রং ৎবাবৎবহপব ঃড়ধিৎঃং ড়ঃযবৎং ঃযধঃ
রং ষধপশরহম রহ ঃযড়ংব যিড় ধফাড়পধঃব সধপযরহব-সধফব পধংঃ-রৎড়হ ংুংঃবসং.”
ব্যক্তিত্বের প্রতি যাঁদের শ্রদ্ধা নেই তাঁরাই ছাঁচে-ঢালা মানুষ তৈরি করতে
চান। খানিকটা বাধ্যবাধকতা ও নিয়মকানুন ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ হতে
পারে না, একথা বার্ট্রান্ড রাসেল জানতেন। কিন্তু একথাটার ওপর তিনি জোর দিতে
চাননি। চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঝড়পরধষ জবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ নামে বইটিতে পাই তাঁর অনবদ্য
গদ্যের আরও একটি উদাহরণ : ঞযব সধহ যিড় যধং ৎবাবৎবহপব রিষষ হড়ঃ ঃযরহশ রঃ যরং
ফঁঃু ঃড় সড়ঁষফ’ ঃযব ুড়ঁহম. ঐব ভববষং রহ ধষষ ঃযধঃ ষরাবং, ধহফ সড়ংঃ ড়ভ ধষষ
রহ পযরষফৎবহ, ংড়সবঃযরহম ংধপঃবফ, রহফবভরহধনষব, ঁহষরসরঃবফ, ংড়সবঃযরহম
রহফরারফঁধষ ধহফ ংঃৎধহমবষু ঢ়ৎবপরড়ঁং, ঃযব মৎড়রিহম ঢ়ৎরহপরঢ়ষব ড়ভ ষরভব, ধহফ
বসনড়ফরবফ ভৎধমসবহঃ ড়ভ ঃযব ফঁসন ংঃৎরারহম ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ.” মানুষের, বিশেষত
শিশুর, বিকাশোন্মুখ মনের প্রতি শ্রদ্ধাকে বার্ট্রান্ড রাসেল
শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাধান্য দিতে চেয়েছিলেন।
বার্ট্রান্ড রাসেল শুধু
প্রচলিত আচারবিচারের বিরোধী একজন সমাজসংস্কারকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন
দার্শনিক। সমাজের বহিরঙ্গে কিছু পরিবর্তন ঘটাতে পারলেই মানুষ দুঃখ থেকে
মুক্তি পাবে, মানুষ সম্বন্ধে এমন অগভীর ধারণা রাসেলের নিশ্চয়ই ছিল না। তাঁর
ব্যক্তিগত হতাশা ও বেদনার ভিত্তি ছিল অস্তিত্বের আরও গভীরে। সমাজকে ছেড়ে
মানুষের চলে না; কিন্তু মানুষের একটা দিক আছে যেখানে সে নিঃসঙ্গ। মানুষ
সামাজিক হয়েও সমাজসর্বস্ব নয়। অন্তত বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন না।
জীবনে
বহুবার বার্ট্রান্ড রাসেল নিজেকে অনেক মানুষের ভিতর একাকার করে দেওয়ার
আগ্রহ বোধ করেছেন; কিন্তু তাঁর সংশয়ধর্মী বৃদ্ধি ও ব্যক্তিত্বসচেতন মন
তাঁকে ওই মাতলামিতে ডুবতে দেয়নি। বার্ট্রান্ড রাসেল লিখেছেন : ঞযৎড়ঁমযড়ঁঃ
সু ষরভব ও যধাব ষড়হমবফ ঃড় ভববষ ঃযধঃ ড়হবহবংং রিঃয ষধৎমব নড়ফরবং ড়ভ যঁসধহ
নবরহমং ঃযধঃ রং বীঢ়বৎরবহপবফ নু ঃযব সবসনবৎং ড়ভ বহঃযঁংরধংঃরপ পৎড়ফিং...
অষধিুং ঃযব ংপবঢ়ঃরপধষ রহঃবষষবপঃ, যিবহ ও যধাব সড়ংঃ রিংযবফ রঃ ংরষবহঃ, যধং
যিরংঢ়বৎবফ ফড়ঁনঃং ঃড় সব, যধং পঁঃ সব ড়ভভ ভৎড়স ঃযব ভধপুরুষ ব বহঃযঁংরধংসং ড়ভ
ড়ঃযবৎং, ধহফ যধং ঃৎধহংঢ়ড়ৎঃবফ সব রহঃড় ধ ফবংড়ষধঃব ংড়ষরঃঁফব.”
মানুষের
আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে জগতের কোনো নিগূঢ় আত্মিক সম্পর্ক নেই জেনেও স্পিনোজা
নিরাসক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে এমন একটি বিশ্বজোড়া সমন্বয়ের সন্ধান পেয়েছিলেন
যে তাতেই তাঁর বৃদ্ধি ও আত্মা তৃপ্ত হয়েছিল। কিন্তু যে সমম্বয়দৃষ্টি
স্পিনোজাকে শান্তি দিয়েছিল তাও রাসেলের কাছে গ্রহণীয় হলো না। তিনি লিখেছেন :
ডযধঃ ঝঢ়রহড়ুধ পধষষং ঃযব রহঃবষষবপঃঁধষ ষড়াব ড়ভ এড়ফ” যধং ংববসবফ ঃড় সব ঃযব
ঃযরহম ঃড় ষরাব নু, নঁঃ ও যধাব হড়ঃ যধফ রবাবহ ঃযব ংড়সবযিধঃ ধনংরৎধপঃ এড়ফ
ঃযধঃ ঝঢ়রহড়ুধ ধষষড়বিফ যরসংবষভ ঃড় যিড়স ঃড় ধঃঃধপয সু রহঃবষষবপঃঁধষ ষড়াব.” এ
বিষয়ে রাসেলের দ্বিধার কারণ তিনি স্পষ্টভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। পাশ্চাত্য
দর্শনের ইতিহাস বিষয়ে তাঁর বৃহৎ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন : ঝঢ়রহড়ুধ ঃযরহশং
ঃযধঃ রভ ুড়ঁ ংবব ুড়ঁৎ সরংভড়ৎঃঁহবং ধং ঃযবু ধৎব রহ ৎবধষরঃু, ধং ঢ়ধৎঃ ড়ভ ঃযব
পড়হপধঃবহধঃরড়হ ড়ভ পধঁংবং ংঃৎবঃপযরহম ভৎড়স ঃযব নবমরহহরহম ড়ভ ঃরসব ঃড় ঃযব
বহফ, ুড়ঁ রিষষ ংবব ঃযধঃ ঃযবু ধৎব ড়হষু সরংভড়ৎঃঁহবং ঃড় ুড়ঁ, হড়ঃ ঃড় ঃযব
ঁহরাবৎংব, ঃড় যিরপয ঃযবু ধৎব সবৎবষু ঢ়ধংংরহম ফরংপড়ৎফং যবরমযঃবহরহম ধহফ
ঁষঃরসধঃব যধৎসড়হু. ও পধহহড়ঃ ধপপবঢ়ঃ ঃযরং; ও ঃযরহশ ঃযব ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ বাবহঃং
ধৎব যিধঃ ঃযবু ধৎব, ধহফ ফড় হড়ঃ নবপড়সব ফরভভবৎবহঃ নু ধনংড়ৎঢ়ঃরড়হ রহঃড় ধ
যিড়ষব. ঊধপয ধপঃ ড়ভ পৎঁবষঃু রং বঃবৎহধষষু ধ ঢ়ধৎঃ ড়ভ ঃযব ঁহরাবৎংব; হড়ঃযরহম
ঃযধঃ যধঢ়ঢ়বহং ষধঃবৎ...পধহ পড়হভবৎ ঢ়বৎভবপঃরড়হ ড়হ ঃযব যিড়ষব ড়ভ যিরপয রঃ রং ধ
ঢ়ধৎঃ.” নিজের দুঃখকে যদি-বা উপেক্ষা করা যায়, অন্যের প্রতি অন্যায় কোনো
বিশ্বদৃষ্টিতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই মুহূর্তের একটি অমার্জনীয় অবিচার
অনাগত ভবিষ্যতের কোনো সুবিচারের ফলে তার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারায় না।
প্রতিটি অন্যায় নিষ্ঠুরতা ইতিহাসের বুকে কাঁটার মতো জেগে থাকে। বিশ্ব জগতে
এমন কোনো সমন্বয় নেই যাতে হৃদয় মুগ্ধ হয়। স্পিনোজার বিরুদ্ধে রাসেলের
সমালোচনার বঙ্গানুবাদ না হলেও এটাই মর্মার্থ।
বার্ট্রান্ড রাসেলের
সমস্যা তা হলে এই। আনন্দ তাঁর জীবনের লক্ষ্য, তিনি মুগ্ধ হতেই ব্যাকুল। অথচ
তিনি অবিশ্বাসী, তাঁর যুক্তি তাঁকে সংশয়বাদী করেছে। অবিশ্বাস থেকে শুরু
করে কি আনন্দে পৌঁছানোর কোনো পথ আছে? জনতার ভিতর তিনি নিজেকে হারাতে
পারলেন না; ঈশ্বরে তিনি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারলেন না; বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেও
তিনি কোনো পরম সুন্দরের মহিমা খুঁজে পেলেন না। তবে তিনি কী নিয়ে বাঁচবেন?
বার্ট্রান্ড
রাসেলের জীবনদর্শন কি আত্মবিরোধী নয়? স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের ভিত্তিতে তিনি
জীবনকে স্থাপন করতে চেয়েছেন। কিন্তু এই বিশাল বিশ্ব মানুষের মহত্তম আদর্শ
এবং আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি নিষ্করণ একথা জানার পর কি জীবনকে কোনো সরল, সহজ
আনন্দের সুরে বাঁধা যায়? সহজ আনন্দের দুটি স্তর আছে; প্রথমত, শিশুর মন, আর
দ্বিতীয়ত, সাধকের দৃষ্টি। যে বিশ্লেষণী বুদ্ধি জগতে অসংগতি খুঁজে পায়, যে
ন্যায়- অন্যায় চেতনা এই অসংগতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তা তো আমাদের শিশুর
স্বর্গ থেকে নির্বাসিত করে, আবার সাধকের জগতেও প্রবেশাধিকার দেয় না। এই
সংশয় বুদ্ধির প্রতি যদি আমাদের বিশ্বস্ত থাকতে হয় তো তার মূল্য হিসেবে
অশান্তিকে মেনে নেওয়াই কি সংগত নয়? আর এই বুদ্ধিতে যদি আমরা উত্তীর্ণ হই,
তারপরও কি কালহীন বিশ্বে কোনো বিকট অসামঞ্জস্য বার্ট্রান্ড রাসেলের অভ্যস্ত
বেদনার্ত অট্টহাস্যের মতো অনন্ত শূন্যকে ব্যাপ্ত করে ধ্বনিত হতে থাকে?
বার্ট্রান্ড রাসেল যুক্তিবাদী, এই দুই বিকল্পের কোনো একটিকে বেছে নেওয়াই কি
যুক্তির কথা নয়?
কিন্তু বার্ট্রান্ড রাসেল একটি তৃতীয় পথ অনুসরণ করলেন। সেটি করুণার পথ।
পৃথিবীতে
ন্যায় নেই; বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষের প্রতি করুণা নেই; মানুষের মহত্তম
সাধনায় সাফল্যের কোনো নির্ভরযোগ্য প্রতিশ্রতি নেই। ব্রহ্মাণ্ডের এই
নির্মমতার বিরুদ্ধে মানুষের দৃপ্ত বিদ্রোহের পতাকা হবে, মানুষের প্রতি
মানুষের করুণা। অ ঋৎবব সধহ’ং ডড়ৎংযরঢ় শীর্ষক তাঁর বিখ্যাত প্রবেন্ধ
বার্ট্রান্ড রাসেল লিখেছেন : টহরঃবফ রিঃয যরং ভবষষড়ি সবহ নু ঃযব ংঃৎড়হমবংঃ
ড়ভ ধষষ ঃরবং, ঃযব ঃরব ড়ভ ধ পড়সসড়হ ফড়ড়স, ঃযব ভৎবব সধহ ভরহফং ঃযধঃ ধ হবি
ারংরড়হ রং রিঃয যরস ধষধিুং, ংযবফফরহম ড়াবৎ বাবৎু ফধরষষু ঃধংশ ঃযব ষরমযঃ ড়ভ
ষড়াব ....ঙহব নু ড়হব ধং ঃযবু সধৎপয, ড়ঁৎ পড়সৎধফবং াধহরংয ভৎড়স ড়ঁৎ ংরমযঃ,
ংবরুবফ নু ঃযব ংরষবহঃ ড়ৎফবৎং ড়ভ ড়সহরঢ়ড়ঃবহঃ উবধঃয....ইব রঃ ড়ঁৎং ঃড় ভববষ
ঃযধঃ, যিবৎব ঃযবু ংঁভভবৎবফ, যিবৎব ঃযবু ভধরষবফ, হড় ফববফ ড়ভ ড়ঁৎং ধিং ঃযব
পঁংব.” বার্ট্রান্ড রাসেল জানতেন যে, মৃত্যু যতদিন আছে দুঃখ ততদিন
অনিবার্য। জগতের নিয়মে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কাজেই অমরতা তিনিও দাবি করেননি।
তিনি চেয়েছিলেন দুঃখে ক্লিষ্ট মানুষের দুঃখ লাঘব করতে।
‘গৌতম’ বুদ্ধ ঈশ্বর সম্বন্ধে মৌন ছিলেন। বার্ট্রান্ড রাসেলও করুণাকে তাঁর পথ এবং পাথেয় বলে গ্রহণ করলেন।
এ
পথের শেষে কি তিনি আনন্দে পৌঁছেছিলেন? জানি না; শুধু জানি যে, জীবনের শেষ
প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি এমন কয়েকটি বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন, অপার্থিব আনন্দ
ও করুণতম বেদনার সংমিশ্রণে যা অবিস্মরণীয়। চুরানব্বই বছরের বৃদ্ধ
বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর আত্মজীবনী মুখবন্ধে লিখেছেন : ঞযৎবব ঢ়ধংংরড়হং,
ংরসঢ়ষব নঁঃ ড়াবৎযিবষসরহমষু ংঃৎড়হম, যধাব মড়াবৎহবফ সু ষরভব; ঃযব ষড়হমরহম ভড়ৎ
ষড়াব, ঃযব ংবধৎপয ভড়ৎ শহড়ষিবফমব, ধহফ ঁহফনধৎধনষব ঢ়রঃু ভড়ৎ ঃযব ংঁভভবৎরহম
ড়ভ সধহশরহফ... ও যধাব ংড়ঁমযঃ (ষড়াব) নবপধঁংব রহ ঃযব ঁহরড়হ ড়ভ ষড়াব ও যধাব
ংববহ, রহ ধ সুংঃরপ সরহরধঃঁৎব, ঃযব ঢ়ৎবভরমঁৎরহম ারংরড়হ ড়ভ ঃযব যবধাবহ ঃযধঃ
ংধরহঃং ধহফ ঢ়ড়বঃং যধাব রসধমরহবফ. ঞযরং রং যিধঃ ও ংড়ঁমযঃ, ধহফ ঃযরং রং যিধঃ –
ধঃ ষধংঃ – ও যধাব ভড়ঁহফ .... ডরঃয বয়ঁধষ ঢ়ধংংরড়হ ও যধাব ংড়ঁযঃ
শহড়ষিবফমব... অ ষরঃঃষব ড়ভ ঃযরং, নঁঃ হড়ঃ সঁপয, ও যধাব ধপযরবাবফ...খড়াব ধহফ
শহড়ষিবফমব, ংড় ভধৎ ধং ঃযবু বিৎব ঢ়ড়ংংরনষব, ষবফ ঁঢ়ধিৎফ ঃড় ধিৎফ ঃযব যবধাবহং.
ইঁঃ ধষধিুং ঢ়রঃু নৎড়ঁমযঃ সব নধপশ ঃড় বধৎঃয. ঊপযড়বং ড়ভ ঢ়ধরহ ৎবাবৎনবৎধঃব রহ
সু যবধৎঃ... ও ষড়হম ঃড় ধষষবারধঃব ঃযব বারষ, নঁঃ ও পধহহড়ঃ, ধহফ ও ঃড়ড়
ংঁভভবৎ.” কথা শুনে চমকে উঠতে হয়। বার্ট্রান্ড রাসেল বলছেন যে, জীবনের
শেষপ্রান্তে এসে তিনি অবশেষে সেই অলৌকিককে লাভ করেছেন যে অধরা শুধু কবি ও
সাধকের কল্পনায় ধরা দেয়। প্রেম ও জ্ঞানের হাত ধরে তিনি স্বর্গের দিকে এগিয়ে
গেছেন। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের আর্তনাদ তাঁকে সেই স্বর্গে স্থির থাকতে
দেয়নি। বেদনায় বিদ্ধ হয়ে তিনি সংসারে ফিরে এসেছেন।
বার্ট্রান্ড রাসেল,
যুক্তিবাদী বার্ট্রান্ড রাসেল– আনন্দের স্বর্গে পৌঁছেছিলেন, একথা কি সত্য
অবিশ্বাস্য। কিন্তু বার্ট্রান্ড রাসেল মিথ্যা বলেছেন, এও তো বিশ্বাস করা
যায় না।