অবকাঠামো
উন্নয়ন, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা এবং কঠোর নজরদারির ফলে হযরত শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীসেবায় আমূল পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিশেষ করে চেক-ইন ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় গতি আসা, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে
আধুনিকায়ন এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোর তৎপরতায় সাধারণ
যাত্রী ও প্রবাসীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
সম্প্রতি বিমানবন্দরে
যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করছেন নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট কে এম আবু নওশাদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি বিমানবন্দরের
প্রতিটি অংশে সক্রিয় নজরদারি চালাচ্ছেন। অতিরিক্ত মূল্য আদায়, দালালি,
লাগেজ কাটা চক্র এবং যাত্রী হয়রানি রোধে তিনি তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা
নিচ্ছেন। তার এসব অভিযানের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত
প্রকাশ হওয়ায় তা ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি লাখ লাখ
মানুষের নজর কেড়েছে।
কে এম আবু নওশাদ বলেন, “আমরা দলগত উদ্যোগে
বিশ্বাসী। সবার সম্মিলিত আন্তরিকতায় আরও ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব।”
যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে তিনি যেকোনও অভিযোগ বা পরামর্শের জন্য বিমানবন্দরের
হটলাইন নম্বর ১৩৬০০-এ যোগাযোগ করার আহ্বান জানান।
সবাই মিলে আরও ভালো
থাকার এবং আরও ভালো সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টার মাধ্যমেই প্রক্রিয়াসমূহের
ধারাবাহিক ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
যাত্রীদের
দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল লাগেজ কাটা বা মালামাল চুরির বিষয়ে। এই সমস্যা
সমাধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখন থেকে প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের
লাগেজ ওঠানামায় ‘বডি-ওর্ন ক্যামেরা’ ব্যবহার শুরু করেছে। বিমানের
মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম জানান, এই প্রযুক্তির ফলে লাগেজ
হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। কোনও অনিয়ম হলে
দায়ীদের সহজেই শনাক্ত করা যাবে। এর ফলে যাত্রীদের আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনি
সংশ্লিষ্ট কর্মীদের পেশাদারত্ব আরও সুদৃঢ় হবে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী
পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ জানান, ইমিগ্রেশন কাউন্টার
বৃদ্ধি, আধুনিক স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন এবং জনবল পুনর্বিন্যাসের ফলে
যাত্রীদের অপেক্ষার সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ ছাড়া
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বসার সুব্যবস্থা বাড়িয়ে টার্মিনাল এলাকাকে আরও
পরিবেশবান্ধব করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত
করেন।
সৌদি আরব প্রবাসী আবুল বাশার বলেন, “আগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে
থাকতে হতো, এখন অপেক্ষার সময় কমেছে। তথ্যসেবা ডেস্ক ও ডিজিটাল সাইনেজের
উন্নতির কারণে প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে পাচ্ছি। এছাড়া লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে
বডি-ওর্ন ক্যামেরার সম্প্রসারণ দেখে অনেকটা স্বস্তি পেয়েছি। এতে প্রবাসীদের
দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। লাগেজ কাটার ভয় থেকে মুক্তি মিলবে।”
সংশ্লিষ্টরা
মনে করছেন, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই সমন্বিত
উদ্যোগ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কঠোর অবস্থান শাহজালাল বিমানবন্দরকে
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
