জাকি’র
পুরু নাম মাহবুব আলী জাকি। কুমিল্লা আর্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ
আলী স্যার এর ছেলে। এভাবে তাঁর নাম পরিচয় করিয়ে দিতে হলো জাকি চলে গেলো
বলে। আমাদের মধ্যে সবার আগে চলে গিয়েছিল পারভেজ।
আত্মমগ্ন পারভেজ চলে
গেলো গভীর মগ্নতায়। না ফেরার দেশে। এখন চলে গেলো জাকি। কয়েক বছর আগে
রাজশাহী গেছে দল (বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম) নিয়ে। ব্যস্ততার মধ্যে রাত হয়ে
গেলো। কিবুর বাসার সামনে গিয়ে ডাকতে লাগলো। কিবু.. কিবু...। কিবু মানে
কিবরিয়া জামান, এক সময়ের কুমিল্লা মাঠের দাপুটে ফুটবল খেলোয়াড়। কিবরিয়া
রাজশাহী থাকে। রাজশাহীতে তার সংসার। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাল আছে।
কিবু
জাকিেেক বলে, তুই কই? জাকি বলে , আরে বেটা বের হয়ে আয় তখন দেখবি আমি কই।
কিবরিয়া ভাবছে জাকি ঢাকা থেকে বা রাজশাহীর বাইরে থেকে দুষ্টামী করছে।
কিবরিয়া বাসার বাইরে এসে জাকিকে দেখেতো অবাক। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তুই
এতো রাতে কেন কিবরিয়াকে ডাকতে গেলি। সে বলে তার বাসার পাশে একটা পান দোকান
আছে ভালো পান বানায়। কালাইরুটি আর হাঁসের মাংস খাওয়ার পর পান খেতে ইচ্ছে
হয়। মাশ কলাইয়ের রুটি। এই তার বাইরদুয়ারী কিচ্ছা।আমার টাইম লাইনে কিবরিয়া
লিখেছে, ‘‘রাজশাহী এসে আর কখনো বলবে না আমি তোর গেইটের সামনে, তুই আয়।
মানতে পারছি না। জাকির তোর জন্য আর অপেক্ষায় থাকবো না, তুই আসবি বলে।’’
তার বাইরে যাওয়ার সময় কই। কুমিল্লায় এলে আমাকে বলতো দেখা করতে আয়। আমার সময়
হয় না। একবার রাজগঞ্জ পশ্চিম গেইটে রাজবাড়ি মুখটা পাড় হয়ে শফিকের দোকান।
মুরগ-মুরগীর দোকান। আমার দরকার দুইটা। জাকির দরকার পাঁচছয়টা। মনে নেই হয়তো
আরো বেশি। শুরু হলো গল্প। বাজারের গমগমে শব্দের ভেতর আমাদের গল্প। আমার
কেবল প্রশ্ন। বাংলাদেশ দলে কুমিল্লার প্লেয়ার কয়জন আছে। জাকি বলে দুই জন।
কে কে? আমি আর তুই। আমি হাসি। জাকি বক্সিং খেলতো। সে জাহাঙ্গীর
মুষ্টিযোদ্ধা ক্লাবের সদস্য ছিল। হাইস্কুল জীবনে একবার জেলা পর্যায়ে জাকি
চ্যাম্পিয়ান হলো। বিভাগীয় পর্যায়ে থার্ড হলো। স্কুল অর্ধদিবস হলো, তার
মেডেল পাওয়া উপলক্ষ্যে ছুটি দেয়া হলো। ছেলেদের আনন্দ আর দেখে কে!
নবম কি
দশম শ্রেণীর কথা। স্যালুনের কাজ ঘরে। নিজ হাতে একদিগের জুলপি সম্পূর্ণ
কেটে ফেলেছে। আরেক দিগের জুলপি সম্পূর্ণ আছে। এখন কী করা। তার বুদ্ধি মতো
সে সমাধান করে চলে এলো। পরীক্ষার হলে কে কাকে দেখে । পরীক্ষা শেষে আমাকে
পাশে ডেকে বলে, দেখতো আমার দুই কানি ঠিক আছে তো? আমি দেখলাম, বললাম ঠিক
আছে। সে বলে ভালো করে দেখ। ভালো করে দেখলাম ঠিক আছে। সে আমাকে বললো। ঠিক
নেই। এবার আমি আরো গভীরভাবে দেখে অবাক হলাম। রেডলিপ কলমের কালো কালি দিয়ে
সে সুন্দর করে কাটা কানি ঠিক করে পরীক্ষা দিতে চলে এসেছে। সে কয়েক টানে
রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকতে পারতো। লন্ডনে উচ্চতর ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিয়েছিল
জাকি। চ্যাপেল ভাইদের একজনের নিকট সে প্রশিক্ষণ নেয়। আমাকে বলতো তুই আমার
উপরে এককটা রিভিউ কুমিল্লার কাগজে করে দে। কেন করিনি জানি না। আমার মনে হতো
তার রিভিউ হবে জাতীয় পত্রিকায়। এখন হয়তো জাতীয় আঞ্চলিক সকল পত্রিকায় হবে।
আমার মতো আনসিন লোকও দাবি করতে থাকবো জাকি আমার বন্ধু ছিল। এটাই হয়তো নিয়ম।
