বুধবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
১০ পৌষ ১৪৩২
বুদ্ধদেব বসুর কাব্যশিল্প
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ এএম আপডেট: ২৪.১২.২০২৫ ১:০৫ এএম |

 বুদ্ধদেব বসুর কাব্যশিল্প
আধুনিক বাংলা কাব্য-আন্দোলনে ‘কবিতা’র সম্পাদক হিসাবে বুদ্ধদেব বসুর নাম বিশেষ স্মরণীয়। ১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বরর কুমিল¬ায় তাঁর জন্ম। অতি শৈশবেই তিনি মাকে হারান। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে মাতুলালয়ে, কুমিল্লাতে। মামার বাড়ি ছিলেন তাঁর মা। কৈশোরে পদার্পণ করে তিনি চলে আসেন ঢাকায়। ‘আমার ছেলেবেলা’-গ্রন্থে তিনি তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিকথা অনবদ্য ভাষায় লিখেছেন। বিদ্যার্থী হিসাবে বুদ্ধদেব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ছাত্র। ইংরেজি সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. এ. পরীক্ষায় তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন। অনুত্তীর্ণ-কৈশোরেই তাঁর সাহিত্য-সৃষ্টির সূত্রপাত। ঢাকা থেকে প্রিয়বন্ধু কবি অজিত দত্তের সঙ্গে যুগ্ম-সম্পাদনায় ‘প্রগতি’ পত্রিকা প্রকাশ করেন ১৩৩৪ সালে।
১৯৩১ সালে বুদ্ধদেব চলে যান কলকাতায়। সেই থেকে তিনি কলকাতা মহানগরীর স্থায়ী বাসিন্দা। প্রথমে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যাপনা করেছেন (প্রাক্ স্বাধীনতা আমলে তার ন াম ছিল রিপন কলেজ)। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে তুলনামূলক সাহিত্যের প্রধান অধ্যাপক-পদে বৃত হন। আমেরিকায় বক্তৃতাদানের জন্য একাধিকবার আমন্ত্রিত হয়েছেন। সেই উপলক্ষেই শেষবার তাঁর ছুটির আবেদন মঞ্জর না হওয়ায় তিনি যাদবপুরের সংস্রব ত্যাগ করেন। শেষজীবনে সাহিত্যই ছিল তাঁর জীবন ও জীবিকা। ঢাকা ছেড়ে কলকাতা আসার বছর চারেক পরে, ১৯৩৫ সালে তিনি কবিতার ত্রৈমাসিক ‘কবিতা’-পত্রিকা প্রকাশ করেন। পঁচিশ বছরেরও অধিক কাল তিনি এই পত্রিকা সম্পাদনা করে আধুনিক কাব্য-আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। বুদ্ধদেব বসু সাহিত্যের সব্যসাচী। কিন্তু তিনি মুখ্যত কবি।
আধুনিক বাংলা-সাহিত্যের যে অধ্যায়কে বলা হয় ‘কলে¬াল যুগ’ সেই অধ্যায়ের তরুণতম প্রতিনিধি ছিলেন বুদ্ধদেব বসু। ১৩৩০ সালে যখন ‘কল্লোাল’ প্রকাশিত হয় তখন বুদ্ধদেবের বয়স ছিল মাত্র পনেরো। কলকাতার ‘কল্লে¬াল’ (১৩৩০) এবং ‘কালিকলমের  (১৩৩৩) মতো ঢাকার ‘প্রগতি’ ছিল সে যুগের আধুনিকতার মুখ্য বার্তাবহ। গ্রন্থকার হিসাবে বুদ্ধদেবের জীবনে ১৯৩০ সালটি বিশেষ উলে¬খযোগ্য। এই বছরেই তাঁর ‘বন্দীর বন্দনা’ (কাব্য), ‘সাড়া’ (উপন্যাস) এবং ‘অভিনয়, অভিনয় নয়’ (ছোটগল্প-সংকলন) প্রকাশিত হয়। তখন  তিনি সবেমাত্র একুশ বছর অতিক্রম করেছেন।
কৈশোর-যৌবনের সন্ধিলগ্নে রচিত ‘সাড়া’ থেকে উপনীত-প্রৌঢ়ত্বের ‘মহাভারতের কথা’ পর্যন্ত বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্য-জীবনের ইতিহাস যেমন বিচিত্র তেমনি বহুপ্রজ। তাঁর মৌলিকতা অনস্বীকার্য। কল্লে¬াল যুগের লেখকদের মধ্যে তরুণতম হয়েও, অথবা সেজন্যই, রক্ষণশীল সমাজ-মানসের আক্রোশ তাঁর উপরেই সবচেয়ে বেশি বর্ষিত হয়েছিল। এই সামাজিক প্রতিক্রিয়া থেকেই তাঁর মৌলিক-প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যাবে। একজন বিদেশী সাহিত্যরসিক বলেছেন, 'ঞযব ড়িৎষফ রহ মবহবৎধষ ফড়বংহ'ঃ শহড়ি যিধঃ ঃড় সধশব ড়ভ ড়ৎরমহরধষরঃু; রঃ রং ংঃধৎঃষবফ ড়ঁঃ ড়ভ রঃং পড়সভড়ৎঃধনষব যধনরঃং ড়ভ ঃযড়ঁমযঃ, ধহফ রঃং ভরৎংঃ ৎবধপঃরড়হ রং ধহমবৎ.' 
রবীন্দ্রনাথও ‘বলাকা’য় নবযুগের নান্দীপাঠ করে বলেছেন, “তোরে হেথায় করবে সবাই মানা। / হঠাৎ আলো দেখবে যখন / সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে, / শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে, / শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে, / সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে / লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়। / আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা।
বুদ্ধদেব বসুর জীবনের এই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া অতিক্রান্ত হবার পর, বিশেষ করে ‘কবিতা’-পত্রিকা সম্পাদনার শুরু থেকেই, তিনি কাব্যক্ষেত্রে যথার্থ আধুনিকতার পুরোধা বলে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেন। ১৯৩৬ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ কবিতা-সম্পাদককে লিখেছেন, ‘তোমার পত্রিকা নতুন কবিদের খেয়ার নৌকো। যাদের হাতে উপযুক্ত মাশ্লু আছে তাদের পার করে দেবে সর্বজনের পরিচয়ের তীরে।’
আমরা বুদ্ধদেব বসুকে বলেছি সাহিত্যের সব্যসাচী। গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা ও ভ্রমণ-সাহিত্য, প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, অনুবাদ ও শিশুসাহিত্য, সর্বোপরি গীতিকবিতা-গদ্য ও পদ্যবন্ধে সাহিত্যের প্রায় সর্ববিভাগেই তিনি আজীবন নতুন-নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে তাঁর ‘অহ অপৎব ড়ভ এৎববহ এৎড়ংং'-গ্রন্থের উপসংহারে তিনি বলেছিলেন, অহধৎপযু যধং নববহ নরঃঃবৎ রহ ইবহমধষ, ংধহরঃু ংধনড়ঃধমবফ, ধহফ ফধৎশ, হড়,ি রিঃয পড়হভঁংরড়হ রং ড়ঁৎ ষরঃবৎধৎু ংপবহব...ইঁঃ ঃরসব, ঃযব রহংপৎঁঃধনব ংপবহব-ংযরভঃবৎ, রং ঃরৎবষবংংষু ধঃ ড়িৎশ, ধহফ যরংঃড়ৎু ঃবধপযবং ঁং ঃড় যড়ঢ়ব ঃযধঃ ঃযব নষরমযঃ রিষষ ংড়ড়হ যব ড়াবৎ. ঝঢ়বপরধষষু হড়ি ঃযধঃ ড়ঁৎ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ভৎববফড়স যধং নববহ ধঃঃধরহবফ ঃযবৎব রং বাবৎু ৎবধংড়হ ঃড় ষষড়শ ভড়ৎধিৎফ ঃড় ধ ঃরসব যিবহ ড়ঁৎ ষরঃবৎধঃঁৎব, ৎবষবধংবফ ভৎড়স ঃযব ড়নষরমধঃরড়হং ড়ভ ঃযব ঢ়ঁনষরপ ংবৎারপব, ভৎববফ ভৎড়স ভৎড়ঃয, পঁৎবফ ড়ভ ংড়নং ধহফ নৎধাধফড়, রিষষ নবপড়সব ধফঁষঃ, ভঁষষু সধঃঁৎব. ঞযব ংড়রষ রং ৎরপয, ঃযব ধিঃবৎং ধৎব ংবিবঃ, ধহফ ঃযব ংববফ ড়ভ জধনরহফৎধহধঃয পধহহড়ঃ যধাব নববহ পধংঃ রহ াধরহ. 
এই মন্তব্যের মধ্যে বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্যজীবনের লক্ষ্য ও আদর্শ খুঁজে পাওয়া যাবে। চল্লিশ বছর বয়সে লেখা এই মন্তব্যের আলোকেই তাঁর পরবর্তী সাহিত্য-সাধনার বিচার করতে হবে। তিনি আশা করেছিলেন, আমাদের সাহিত্য একদিন প্রাপ্তবয়স্ক ও পূর্ণপরিণত হবে, কেননা এই প্রসন্নসলিলা পলিমৃত্তিকার দেশে রবীন্দ্র-বীজ কখনোই ব্যর্থ হতে পারে না। আমাদের সাহিত্যকে সবদিক দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক পূর্ণপরিণত করতে তিনি নিজে তাঁর সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছিলেন। আমরা বলেছি, ‘সাড়া উপন্যাসেতেই বুদ্ধদেবের সাহিত্য-সাধনার শুরু, আর তার সমাপ্তি ‘মহাভারতের কথা’য়। ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে সমকালীন পাশ্চাত্য মনন ও সাহিত্যদর্শকে সম্মুখে রেখেই তিনি সাহিত্যসৃষ্টি শুরু করেন। রবীন্দ্রেনাথের সাহিত্যদর্শ ছিল সে যুগের ‘আধুনিকতা’র বৈশিষ্ট্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরো অনেকের মতোই বুদ্ধদেব বসুও রবীন্দ্র-ঐতিহ্যকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, রবীন্দ্র-ঐতিহ্যকে মেনে নিয়েই আধুনিক সাহিত্যিকদের নতুন পথে অগ্রসর হতে হবে। সমকালীন জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাক্সক্ষা, চিন্তা ও অনুভূতিকে শিল্পিত বাণীরূপ দেওয়াই সাহিত্যের কাজ। কিন্তু সমকালীন জীবন নিরালম্ব বায়ুভূত কোনো বস্ত নয়। অতীতের সঙ্গে রয়েছে তার নাড়ীর যোগ। আর এই প্রাচীন সভ্যতার দেশে সে অতীত কয়েক সহস্র বৎসরের সংস্কৃতি ও জীবনচর্যাকে বুকে ধরে আছে। বুদ্ধদেবের সাহিত্য-সাধন যে ‘মহাভারতের কথা’য় সম্পূর্ণতা পেয়েছে, এর একটা নিগূঢ় তাৎপর্য অবশ্যই আছে, তবে তাঁর অতীতচারিতার অর্থ অতীতে প্রত্যাবর্তন নয়, অতীতের পুনরুজ্জীবন, অতীতের নবীকরণ।
তাছাড়া বর্তমানকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও মহাদেশের ভৌগোলিক সীমানাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোনো সভ্যদেশই আজ অন্য-নিরপেক্ষ স্বয়ং-সম্পূর্ণ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে।’ পাশ্চাত্য সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুকরণ বা অন্ধ অনুসরণ নয়, কিন্তু তার সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করেই আমাদের চলতে হবে। আর, বলাই বাহুল্য এক্ষেত্রে সমকালীন বাঙালি সাহিত্যিকগণের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু কারোই পাশ্চাতে ছিলেন না। তাই দেখি, একদিকে যেমন তিনি কালিদাসের মেঘদূতের অনুবাদ করেছেন, অন্যদিক, তিনি বোদ্লেয়ার-প্রমুখ কবিদের কবিতার সঙ্গেও বাঙালী কাব্যরসিককে পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন।
বুদ্ধদেব মুখ্যত কাব্যশিল্পী হলেও গদ্যরচনায়ও মৌলিক মননশীলতা এবং পরিশীলিত চিন্তার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনবোধের সঙ্গে সবাই একমত হবেন, এ-কথা আশা করাই অবাস্তব। কিন্তু তিনি যে তাঁর নিজের মতো করে ভেবেছেন, এটাই বড়ো কথা অবশ্য সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় তাঁর প্রবন্ধ-সাহিত্য ঈষৎ দুর্বল। কিন্তু কবিতা-পত্রিকায় সমকালীন সাহিত্যিকদের সম্পর্কে তাঁর অনেক বক্তব্যই তাঁর অভ্রান্ত দূরদৃষ্টির পরিচয় বহন করছে। তাঁর ‘কালের পুতুল’-এর রচনাগুলি পরবর্তী সাহিত্যলোচার পথপ্রদর্শক হয়েছে।
গদ্য সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর শ্রেষ্ঠ সম্পদ তাঁর ভাষা। অমন সহজ স্বচ্ছন্দ অথচ প্রাণস্পন্দিত গদ্যরীতি সমকালীন সাহিত্যে দুর্লভ। অমন খাপখোলা তলোয়ারের মতো ঝক্ঝকে ভাষা আর কারো কাছে পাওয়া গেছে বলে মনে হয় না। রম্যরচনায় তাঁর ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’ বাংলা সাহিত্যের চিরন্তন সম্পদ।
ছোটগল্প এবং উপন্যাসও তিনি অজস্র লিখেছেন। তাঁর প্রথম বয়সের ‘রেখাচিত্র’র মত গল্প বাংলা-সাহিত্যে অল্পই লেখা হয়েছে। কিন্তু উপন্যাসের ক্ষেত্রে তাঁর সিদ্ধি বিতর্কের বিষয় হতে পারে। জীবনের সর্বস্তরে যে বিচিত্র বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে সার্থক ও মহৎ উপন্যাস লেখা সম্ভব হয় না, সেই অভিজ্ঞতা, সেই তটস্থ বাস্তব দৃষ্টি স্বভাবতই কবিপ্রাণ শিল্পিমানসের কাছে সর্বদা প্রত্যাশিত নয়।
তাই সাহিত্যেক্ষেত্রে সর্বত্রচারী হওয়া সত্ত্বেও বদ্ধুদেব বসু মুখ্যত কবি, কাব্যশিল্পী। তাঁর ‘বন্দীর বন্দনা,’ ‘কঙ্কাবতী’, ‘দময়ন্তী’, ‘দ্রৌপদীর শাড়ি,’ ‘নতুন পাতা,’ ‘যে আঁধার আলোর অধিক,’ ‘শীতের প্রার্থনা,’ ‘বসন্তের উত্তর,’ ‘মরচে-পড়া পেরেকের গান’-প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ তাঁর কবিপ্রতিভাকে ধাপে-ধাপে উন্মীলিত ও উজ্জ্বল করেছে। শেষদিকে তিনি নাট্যকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তার ফলে ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী,’ ‘কলকাতার ইলেক্ট্টা ও সত্যসন্ধ,’ ‘কাল সন্ধ্যা,’ ‘পুনর্মিলন,’ ‘অনাম্লী অঙ্গনা ও প্রথম পার্থ’ প্রভৃতি রচনা বাংলা-সাহিত্যে কবিভাষা ও কবিকল্পনার সঙ্গে নাট্যধর্মের বিষম-মিলনে এক অভিনব শিল্পরূপ গড়ে তুলেছে।
বুদ্ধদেব বসু দীর্ঘজীবন লাভ করেন নি। ৬৬ বছর পূর্ণ হবার আগেই তিনি ১৯৭৪ সালের ১৮ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
বুদ্ধদেব বলছেন, মানুষ রিরংসাপরায়ণতাতেই নিজেকে নিঃশেষে করে দেয় নি। কামকেলির মধ্যেই সে আবিষ্কার করেছে প্রেমকে। এই প্রেমের প্রেরণাতেই সে রচনা করে ‘শতশিল্প, সংগীত, কবিতা।’ এই শিল্পীমানুষ, এই সারস্বত-মানুষের আত্ম-আবিষ্কারই মনুষ্যত্বের গর্ব ও গৌরব। বুদ্ধদেব বললেন, এই আত্ম-আবিষ্কারের প্রেমই মানুষের মূলীভূত প্রেরণা।
তত্ত্ব হিসাবে বক্তব্যটি হয়ত অভিনব কিছুই নয়। কিন্তু প্রকাশ-ভঙ্গির দিক দিয়ে এর অভিনবত্ব মৌলিকতায় অভূতপূর্ব এবং প্রকাশভঙ্গির এই অভিনবত্বেই বুদ্ধদেব আধুনিক। ‘কালের পুতুল’ গ্রন্থের নাম-প্রবন্ধে তিনি বলেছেন-“আধুনিক কথাটার সংজ্ঞা যুগে-যুগে বদলায়, অভিনবত্বের আকর্ষণ নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী, এবং সর্বশেষে-বিচারে বোধহয় এ-কথাই বলতে হয় যে, সেইটেই সত্যিকার আধুনিক, যেটা চিরন্তন।”
এই চিরন্তনকে স্থান-কালের পরিবেশে নতুন করে পরিবেশণ করারই নাম প্রতিভা-শক্তি। বুদ্ধদেব বসু এই অর্থেই প্রেমের কবি হয়েও আধুনিক কবি। 
‘অন্ধ অমা-রাত্রি’ কামনার সঙ্গে স্বপ্ন-সুধা মিলিয়ে কবি রচনা করেছেন প্রেমকে। কামনার কারাগারে চিরবন্দী থেকেই প্রেমের এই অমৃতপিপাসায় তিনি সৃষ্টি করেছেন নিজের সারস্বতসত্তাকে। আত্মসৃষ্ট এই সারস্বতলোক থেকেই কবিকন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে নিখিল-স্রষ্টার উদ্দেশে ‘বন্দীর বন্দনা।’ অন্ধ কামের জ্যোতির্ময় প্রেমের এই মিলন-সাধনকেই কবি বলেছেন, ‘অমবস্যা-পূর্ণিমার পরিণয়ে’ পৌরোহিত্য। এই মিলন-মন্ত্রেরই অন্যনাম ‘বন্দীর বন্দনা’। এই মন্ত্র কণ্ঠে নিয়েই কবি ‘কঙ্কাবতী’র প্রেমলোকে উত্তীর্ণ হলেন। সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধদেবের কবিভাষারও নবজন্ম হল। ‘বন্দীর বন্দনা’র কবির বাহন ছিল মিশ্রবৃত্ত-রীতির পয়ার-জাতীয় ছন্দ। বাংলা কাব্যে এই ছন্দকে বলা হয় পুরুষালি ছন্দ। উদাত্ত আত্মঘোষণায় তার তুলনা নেই। ‘বন্দীর বন্দনা’য় ‘অয়ম্ অহং ভো’ উচ্চারণ করে ‘কঙ্কাবতী’র কবি কলাবৃত্ত-রীতির সংগীতময় গীতধ্বনিতে তাঁর প্রেমের আকাশ পূর্ণ করে তুললেন। 
বুদ্ধদেব বসুর গদ্যকবিতা-সংকলনের নাম, ‘নতুন পাতা’। ‘নতুন পাতা’র যুগে এবং পরবর্তী কালেও, গদ্যকবিতাকে নিয়ে কবি কিছু-কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তার মধ্যে গদ্যপঙ্ক্তিতে মধ্যমিল-যোজনার প্রয়াস একটি। এতে বাণীকুশলতার পরিচয় আছে, কিন্তু পদ্যছন্দেও যে-মধ্যমিল মাত্রাতিরেকী অলংকরণের পর্যায়ভুক্ত, গদ্যকবিতায় তার প্রাদুর্ভাব কৃত্রিম বলেই অবদ্য। গদ্যকবিতাকে পদ্যের মতো না সাজিয়ে টানা গদ্যের মতো লিপিবদ্ধ করে গদ্য ও পদ্যের দৃষ্টিবেদ্য বিভেদটিও লুপ্ত করার চেষ্টা বুদ্ধদেব করেছেন। কিন্তু কবিতা শুধু কানে-শোনার জিনিস নয়, লিপিরূপেও তা পাঠকের নয়নাভিরাম। 
১৯৪৪ সালে, ছত্রিশ বছর বয়সে কবি ‘আবর্তনসন্ধি'তে উপনীত হলেন। এই বৎসর জুলাই মাসে তাঁর ‘রূপান্তর’ কাব্যসংকলন প্রকাশিত হয়। এই ‘রূপান্তর’ এবং ‘দ্রৌপদীর শাড়ি’ ও ‘শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর’- এই তিনখানি কাব্যসংকলন একই সূত্রে গ্রথিত। কঙ্কাবতী ছিল পূর্বরাগের কাব্য; সংগমপূর্ব রতিই ছিল তার আলম্বন। ‘রূপান্তর’ থেকে সংগমোত্তর রতিই কবিমানসে মুখাস্থান পেয়েছে। কঙ্কাবতীর প্রেমের আলমম্বনস্বরূপিণী প্রেমিকা এযুগে হয়েছে স্বকীয়া নায়িকা। এই পরিবর্তনের একটি সংকেতসূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে ‘বন্দীর বন্দনা’র ‘প্রেমিক’ এবং ‘রূপান্তরে’র ‘রাত্রি’ কবিতায়। ‘বন্দীর বন্দনা’য় ‘প্রেমিক’ বলেছিল-“জানি, শুধু ততদিন তুমি র'বে তুমি, / যতদিন রবে মোর প্রিয়া!”
‘শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর’ কাব্যগ্রন্থেও কবিমানস আসক্তি-মুক্তির দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত। এই গ্রন্থের কবিতাগুলি ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে লেখা বিভিন্ন রীতি ও গোত্রের রচনা থেকে এলোমেলোভাবে সংকলিত। প্রথম কবিতাটির নাম, ‘মৃত্যুর পরে: জন্মের আগে।’ কবিতাটি বুদ্ধদেবের কবি-জীবনের ইতিবৃত্ত। একে কবিতা না বলে কবিমানসের কড়চা বলাই সমীচীন। বৎসরের হ্রম্বতম দিনে, স্বল্পতম সূর্যালোকে, শীতার্ত কবি যৌবনদিনের স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করে বলেছেন-“তাই বলি, / যা-কিছু লিখেছি আমি-হোক যৌবনের স্তব, অন্ধ জৈব / আনন্দের বন্দনা হোক্ না- / যা-কিছু লিখেছি, সব, সবই ভালোবাসার কবিতা, / কথা বুনে, ছন্দ গেঁথে, শব্দ ছেনে / আমি শুধু ভালোই বেসেছি / সবচেয়ে তীব্র, মত্ত, সত্য ক'রে।”
এই সংকলনের সর্বশেষ কবিতা ‘শীতরাত্রির প্রার্থনা'তেই গ্রন্থের নামকরণ বিশে¬ষিত হয়েছে। শীত যদি মৃত্যুর দোসর হয়, তাহলে বসন্ত হল নবজন্মের অমৃত-দূত। কবি এই জন্মমৃত্যুর রহস্যকেই ঋতুচক্রের আবর্তনলীলার প্রতীকদ্যোতনায় প্রকাশ করে বলেছেন-“ডুবতে হবে তিমিরে, নয়তো কেমন করে বেঁচে উঠবে আবার? লুপ্ত হতে হবে পাতালে, নয়তো কেমন করে ফিরে আসবে আলোয়? তুমি কি জানো না, বারবার মরতে হয় মানুষকে, বারবার, দুলতে হয় মৃত্যু আর নবজন্মের বিরামহীন দোলায়, সত্যি যদি বাঁচতে হয় তাকে। এই শীত-বসন্ত, এই জন্ম-মৃত্যুর রহস্যময় ঋতুচক্র পেরিয়ে যাওয়ার আদে এই যুগের একটি আশ্চর্য গদ্যকবিতার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা প্রয়োজন। কবিতাটির নাম, ‘রাত্রি’। এই যুগেই লেখা, কিন্তু ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ছাড়া অন্য কোনো কাব্যগ্রন্থের অঙ্গীভূত হয় নি। রাত্রি কবির প্রেয়সী। কবিমানসে এই রাত্রি চেতনার বিবর্তনের ইতিহাসটি অনুসরণযোগ্য। ‘বন্দীর বন্দনা’র যুগে কামনা ছিল ‘অন্ধকার অমা-রাত্রি সম’! ‘রূপান্তর’ কাব্যেই প্রথম রাত্রি কবি প্রেয়সীর আসন গ্রহণ করেছে। কবি আত্নহুতির মূল্যে তাকে তিলে-তিলে রচনা করেছেন। আমাদের আলোচ্য কবিতায় কবিপ্রেয়সীরই অন্য নাম, রাত্রি। তাই কবির রাত্রি সম্ভাষণ প্রেম-সম্ভাষণেরই রূপক। টানা গদ্য-অনুচ্ছেদে সাজানো এই গদ্যকবিতার কাব্যরস উদ্ধৃতিযোগেই আস্বাদ্য-“
তোমার মনে আছে রাত্রি, আমাদের মিলনের অনুষ্ঠান? সেই নগ্নতার শপথ, স্তব্ধতার শপথ, যৌতুকের বিনিময়?”
তুমি আমাকে দিয়েছিলে তোমার চাঁদ, অনেক চাঁদ, আরো অনেক তারা, তারা-ভরা আকাশ, জ্বলন্ত, আগুনের নিঃশ্বাস-ফেলা অন্ধকার! আর বিশাল দেশ, মহাদেশ, জনতাময় নির্জনতা, আর অনিদ্রার তীব্রমধুর উন্মামদনা।
আর আমি তোমাকে দিয়েছিলাম আমার প্রেম, আমার প্রাণ, আমার আত্মার নির্যাস, সত্তার সৌরভ।
সব ভুলে গেছো?
“না, না, আমি জানি তোমাকে, ছলনাময়ী, তুমি অসতী হয়ে জাগিয়ে দিলে আমার পৌরুষ, আমাকে পরিত্যাগ করে জ্বালিয়ে দিলে তৃষ্ণা। একদিন তুমি নিজেই ধরা দিয়েছিল আমাকে, আজ তোমার এই পণ যে আমি তোমাকে  জয় করবো, রাক্ষসী মৃত্যুকে মেরে জয় করে নেবো তোমাকে, অজরা। ... ফিরে এসো, রাত্রি, নেমে এসো এই মৃত্যুর উপর, আনো তোমার বুক ভ'রে আমার যন্ত্রণা-স্বপ্ন দাও, দুঃস্বপ্ন দাও, দাও ঈশ্বরের মতো কবির নিঃসঙ্গতা....” কবির এই আকুল প্রার্থনা ব্যর্থ হয় নি। ‘যে আঁধার আলোর অধিক’-গ্রন্থে তারি উজ্জ্বল স্বীকৃতি রচিত হয়েছে ‘যাওয়া আসা’ কবিতায়। এই গ্রন্থের কবিতাগুলি ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে লেখা। ১৯৪৪ থেকে এক যুগের অধিককাল ঐকান্তিক যন্ত্রণাময় বিরহ-সিন্ধু পেরিয়ে কবি উপনীত হলেন পুনর্মিলনের বাসন্তী উপকূলে। এই পরমা-প্রাপ্তিরই অবিস্মরণীয় প্রেমসংগীত ‘যাওয়া-আসা’-“ আবার আমায় ফিরতে হবে তোমার কাছে, / প্রিয়তাম: / তোমার কাছেই আবার আমায় ফিরতে হবে, / প্রিয়তমা। / আবার আমায় ডুবতে হবে তোমার গাঙে, / প্রিয়তমা।”
বুদ্ধদেব বসুর কবিজীবনে এই অবগাহনই পরম সত্য। ‘মৃত্যুর পরে, জন্মের আগে’- কবিতায় কবি বলেছিরেন, ‘যা-কিছু লিখেছি, সব, সবই ভালোবাসার কবিতা।’ পঞ্চাশের কবি ষাটের কোঠায় পৌঁছে তাঁর ‘মরচে-পড়া পেরেকের গান’-এ (ডিসেম্বর ১৯৬৬) প্রেমের দেবতারই পূজারিত করলেন। এই গ্রন্থ প্রকাশের পর কবির আরো দু’খানি কাব্যসংকলন প্রকাশিত হয়েছে: ‘স্বাগত বিদায়’ (১৯৭১) এবং ‘একদিন চিরদিন’ (১৯৭১)। কিন্তু ‘মরচে-পড়া পেরেকের গান’-এই বুদ্ধদেবের কবিকল্পনা চূড়ান্ত শিখর স্পর্শ করেছে। 
প্রৌঢ়কবির জীবনচেতনায় কিন্তু দেহমিলনের আনন্দই মর্ত্যলীলার নিঃশ্রেয়স বলে পরিগৃহীত হয়েছে। ‘মরচে-পড়া পেরেকের গান’ কবিতায় ঋষ্যশৃঙ্গের রূপক উপাখ্যানের মধ্য দিয়ে অতনু-লীলার এই আনন্দ, বিশ্বের এই প্রথম শিহরণেরই বিজয়-বৈজয়ন্তী উড্ডীন হয়েছে। আধুনিক কবি তাঁর জীবনবোধকে ভাষা দিতে গিয়ে মহাভারতীয় উপাখ্যানটিকেও নবজন্ম দিয়েছেন। 
রাজা লোমপাদের রাজ্যে অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে দৈবজ্ঞরা বললেন, আজন্ম-বনবাসী, তরুণ তপস্বী ঋষ্যশ্ঙ্গৃকে ভুলিয়ে রাজধানীতে নিয়ে আসতে পারলেই দেশের অভিশপ্ত দশার অবসান হবে। এক বর্ষীয়সী বারবধূ এই দুঃসাধ্য কাজের দায়িত্ব নিয়ে নিজের রূপসী ও যুবতী কন্যার সাহায্যে আজন্ম-ব্রহ্মচারী তরুণ তপস্বীর ব্রহ্মচর্য-ভঙ্গ করল। মোহমুগ্ধ ঋষ্যশৃঙ্গ এলেন রাজধানীতে। তাঁর আগমনের সঙ্গে-সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে দেশের অজন্মা দূর হল। লোহমপদ তাঁর কন্যার সঙ্গে ঋষিকুমারের বিবাহ দিলেন।
এই কাহিনীকেই বুদ্ধদেব বসু গ্রহণ করেছেন তাঁর বক্তব্যের রূপক হিসাবে। এক আশ্বিনের সকালে দেখা গেল, পচা কাঠের টুকরো থেকে বেরিয়ে পড়ে আছে এক মরচে পড়া পেরেক। যেন তারই ইশারায় কবির চোখে উন্মোচিত হল অতীতের যবনিকা। এক শাপভ্রষ্ট তপস্বীর রূপ নিয়ে সে বলতে লাগল তার জীবনের কাহিনী। সে বলল, রাজকন্যার বাহুবন্ধে সে তৃপ্তি পায় নি। পর্জন্যের মুক্তিদাতা, জীবাত্মার পরিত্রাতা হয়ে তার কোন আনন্দ ছিল না। রাজপুরীর প্রেমহীন তিক্তকাম রাত্রি তার কাছে বিবর্ণ বিস্বাদ হয়ে উঠেছিল। তার সমস্ত চেতনা আবিষ্ট করে ছিল বিশ্বের প্রথম শিহরণের স্মৃতি। সে জানত না কাকে বলে নারী, জানত না তার অন্তরের ঘুমন্ত পৌরুষের আনন্দের উৎস কোথায়। তার জীবনে নারীর সেই প্রথম আবির্ভাব, পৌরুষের সেই প্রথম জাগরণই তার পরম কাম্য হয়ে উঠেছিল। সেই আবির্ভাব, সেই জাগরণের বর্ণনায় বুদ্ধদেব যেন তাঁর কবি-জীবনের পরা-সিদ্ধি লাভ করেছেন। গদ্যকবিতার চারটি স্তবকে অনবদ্য সেই বর্ণনা-“বাহুতে হিলে¬াল তুলে এগিয়ে এলো, জলের স্রোতে, / জ্যোৎস্নার মতো চঞ্চল, / পল¬বের ফাঁকে-ফাঁকে যেমন রৌদ্রকণা, / তেমনি তার কঙ্কণের রশ্মি, / শঙ্খের মতো গ্রীবা, দুটি কান যেন উজ্জ্বল কমগুলু, / বুকের দুটি মাংসপিন্ড নৈবেদ্যের মতো বিদগ্ধ ও বর্তুল, / ‘শরতের দৃষ্টির মতো স্বচ্ছ ও আর্দ্র তার দৃষ্টি, / তার আননে চৈত্রপূর্ণিমার আকাশের আনন্দ, / মস্ত্রোচ্চারণের ছন্দ তার জানুতে ও জঙঘায়- / এমনি ক'রে এগিয়ে এলো, / তার নিঃশ্বাস স্পর্শ করলো আমাকে / ‘পুষ্প, ধুপ, চন্দন ও ঘৃতভূক অগ্নির চেয়েও সে সুগন্ধি; / তার স্পর্শে আমার চোখে নামলো ধ্যনমগ্ন তিমির, / স্তব্ধ হলো হৃৎপিন্ড, সব ইন্দ্রিয় রুদ্ধ, / ডুবলো এই দেহমন গভীর থেকে আরো গভীরে, / শূন্য থেকে গাঢ়তর শূন্যে, / যেখানে ত্রিলোক এক অখন্ড স্থির বিন্দুর মধ্যে সংহত / ত্রিকাল এক সমতল ও নিরঞ্জন বিস্তার / লুপ্ত সব দ্বৈত, তুমি আর আমি অনন্য- / আমি সেই ব্রহ্মলোকে স্থান পেলাম, তার আলিঙ্গনে।”
দেহরতির এই শুচিশুভ্র শুধু অপাপবিদ্ধ ঋষিদৃষ্টিতেই নয়, আধুনিক কালের কবি কল্পনাতেও পূজারতির সগোত্র হয়ে উঠেছে। প্রেমময়ী রমণীর প্রথম আশে¬ষে ব্রহ্মলোক-প্রাপ্তির আনন্দ, ত্রিলোক ও ত্রিকাল অবলুপ্ত-করা  মিথুনলীলার মধ্যে অদ্বয়-তত্ত্বের উপলব্ধি দেহাশ্রয়ী প্রেমচর্যাকে একটি সুদৃঢ় দার্শনিক ভিত্তিতেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। ‘বন্দীর বন্দনা’র যাত্রা শুরু ক'রে ‘মরচে-পড়া পেরেকের গান’-এ পৌঁছে বুদ্ধদেব বসু চিরন্তন যৌবনের চিরপুরাতন বিহর-মিলন-লীলাকেই তাঁর কাব্যসাধনার অঙ্গিরসে পরমাস্বাদ্য করে তুলেছেন। একটি দুর্জয়ঢ প্রেমিক-সত্তার জন্ম-মৃত্যু ও পুনর্জন্ম এই সত্যনিষ্ঠ সারস্বত লীলার প্রাণকেন্দ্র।














http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন দেড় লক্ষাধিক নেতা-কর্মী
কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী দিন আজ
ফাজিল স্নাতক পরীক্ষায় বই দেখে লেখার অভিযোগ, ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
দুই হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখে স্বপ্নে অটল আরশাদুল
ব্রাহ্মণপাড়ায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের প্রধানসহ দুইজন গ্রেপ্তার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ঠিক হয়নি বললেন- সাবেক মেয়র সাক্কু
আড্ডার ঘরে রক্তের দাগ
আপনি যতবড় নেতাই হন তারেক রহমানের কাছে একজন কর্মী ছাড়া কিছুই না: জাকারিয়া সুমন
কুমিল্লায় বিএনপিতে যোগদানের পরদিন ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে কুমিল্লায় বিএনপির প্রস্তুতি সভা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২