কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরের বাসিন্দা রাসেল মুন্সি নিখোঁজ এর ২২ দিনেও কোন সন্ধান মিলেনি। পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে। একমাত্র শিশু কন্যা সন্তান রশ্নি সারা দিন-রাত ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলে বাবা রাসেল ঘরে ফিরে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু গত ২২ দিন যাবৎ শিশু রশ্নির ডাক বাবা রাসেল মুন্সির কানে পৌঁছছে না। ঘরে ফিরে এসে জড়িয়ে ধরছে না আদরের সন্তানকে।
নিখোঁজ রাসেল মুন্সি (২৭) চান্দিনা উপজেলা সদরের মহারং মুন্সি বাড়ির মনিরুল ইসলাম মুন্সির বড় ছেলে। গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ। এ ঘটনায় গত ৭ ডিসেম্বর রাসেল মুন্সির ছোট ভাই মাসুদ রানা চান্দিনা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন।
পরিবারের লোকজন পুলিশের অপেক্ষায় বসে না থেকে নানা সূত্রধরে এগুতে থাকেন। রাসেল প্রায় প্রতিদিনই বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই গ্রামের যে একটি পরিত্যক্ত ঘরে আড্ডা দিতো সেই ঘরের সন্ধান পেয়ে পুলিশ নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। সেই ঘরের বালির নিচে তল্লাসী চালিয়ে তার ব্যবহৃত একটি স্বর্ণের দোকানের ব্যাগ ও আতরের বোতল পায় পুলিশ। ঘরে রক্তের দাগও পাওয়া যায়। কিন্তু পাওয়া যায়নি রাসেল এর জীবত বা মৃত দেহ। রাসেল মুন্সি কোথায় আছে, বেঁচে আছে না মারা গেছে? এমন নানা প্রশ্ন জেগেছে জনমনে।
এদিকে, ওই ঘটনার সূত্র ধরে চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় গত ১৫ ডিসেম্বর রাসেল এর ঘনিষ্ট তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারাও কোন তথ্য দিতে পারেনি। তবে তাদেরকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
নিখোঁজ রাসেল এর স্ত্রী রুমা আক্তার জানান- আমার স্বামী বাহিরে থাকলেও কখনও ফোন রিসিভ না করে থাকতো না। আমার স্বামী যে আতর ব্যবহার করতো সেই আতরের ছোট বোতল তার সাথে সব সময় থাকতো। কোরপাই গ্রামের ওই পরিত্যক্ত ঘরে রক্ত লেগে আছে, হাতের ব্যগটি পাওয়া গেছে, আতরের বোতলটিও পাওয়া গেছে। তাহলে রাসেল কোথায়? কেউ কি আমার স্বামীর সন্ধ্যান দিতে পারবে না? বলেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন।
রুমা আক্তার আরও বলেন- আমার চার বছর বয়সী ছোট্ট শিশুটির ডাক কি কেউ শুনতে পায় না? আইনের চাকা ঘুরতে এতো দেরি হচ্ছে কেন? কোরপাই গ্রামের ওই পরিত্যক্ত ঘরের সন্ধান আমাদের লোকজনই দিয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দহজনক তিনজনকে আমাদের লোকজনই আটক করে পুলিশে দিয়েছে। তাহলে পুলিশ কি কাজ করলো? আটক আসামীদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আমার স্বামীর সন্ধান মিলবে।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান জানান- আসামীদের আমরাই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আটক করেছি এবং নিখোঁজ ডায়েরীর পর অপহরণ মামলা নিয়েছি। কোরপাই গ্রামের যে পরিত্যক্ত ঘরে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে সেখানে সিআইডি টিম কল করে আনা হয়েছে এবং সেখান থেকে নমুনাও সংগ্রহ করেছে সিআইডি। আশাকরি আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই আদালত সন্দেহভাজন আসামীদের রিমান্ড মঞ্জুর করবেন। রিমান্ডে আসার পর মূল ঘটনার উদঘাটনের সম্ভাবনা রয়েছে।
