
দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। সিন্ডিকেট চক্র কারসাজি করে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। শুধু পেঁয়াজই নয়, অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও সরবরাহ ও দামের কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ চক্রের সঙ্গে দেশের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিও জড়িত বলে অভিযোগ এসেছে। দেশের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য মিলেছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেট করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ এসব সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। পুরোনো সিন্ডিকেট নতুন চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে। এসব সিন্ডিকেটে নতুনভাবে অসাধু ব্যক্তিরা যোগ হয়েছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জরুরি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চলতি মাসেই বাজারে এসেছে অন্তত ৭৫ হাজার টন নতুন দেশি পেঁয়াজ। তার পরও বাজারে পেঁয়াজের দর বেড়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি এ জন্য দায়ী। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনেও পেঁয়াজের দর বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজির কথা উঠে এসেছে।
বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক মাসে পেঁয়াজের দর বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে পেঁয়াজের দর বাড়তে শুরু করে। এ সময় সিন্ডিকেট চক্র দাম বাড়িয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ২৫২ কোটি টাকা। এরপর গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পণ্যটির দাম প্রতি কেজি গড়ে ৩৫-৩৬ টাকা করে বেড়েছে। এই ছয় দিনে দাম বাড়ানোর কারণে সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে ১৮৯ কোটি টাকা। এরপর ৬ নভেম্বর থেকে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ করে বেড়েছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। ৬ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর- এই ১০ দিনে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে ৫৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসাধু চক্র। এভাবে তিন ধাপে অসাধু পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে মোট ৯৮১ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বাজারের এ অবস্থার জন্য খুচরা বিক্রেতাদের মতো রাজধানীর পাইকারি বিক্রেতাদের অভিযোগ একই। তারা বলছে, মোকাম থেকেই সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। মোকাম থেকে পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেন ব্যাপারীরা। সেই দামে বিক্রি করতে হয়। কাজেই সিন্ডিকেট চক্রকে ধরলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পেঁয়াজ উঠলে বাজারে সংকট থাকবে না। দামও কমবে। এদিকে গত অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়; যা উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এতে চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব শক্তিশালী সিন্ডিকেট বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। তারা সরকারের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে এসব সিন্ডিকেট চালিয়ে নিতে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকে। এদের আটকাতে হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
গত মাস থেকে আমরা লক্ষ করেছি, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। সিন্ডিকেট করে মোকামে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বাজারে সংকটের গুজব ছড়িয়ে মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এভাবে প্রতিনিয়ত ভোক্তার পকেট কেটে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। তাই অবিলম্বে এ সংকট অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অচিরেই বাজারে পেঁয়াজের সংকট নিরসনে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
