নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির দুই গ্রুপের সমাবেশকে ঘিরে দিনভর উত্তেজনার পর শেষ পর্যন্ত কোনো গ্রুপকেই অনুমোদন দেয়নি প্রশাসন। টাউন হল মাঠ ছাড়া অন্য ভেন্যুতে সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয় দুই পক্ষকে। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে সমাবেশ করতে এলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর আগে সন্ধ্যা থেকে হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন ও মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা টাউন হল মাঠের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করেন। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী মাঠের মাঝখানে অবস্থান নেয়। পরে প্রশাসন দুই পক্ষকে আলাদা ভেন্যুতে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়। তবে কেউ সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত টাউন হল মাঠে সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ২০ নভেম্বর টাউন হল মাঠ ছাড়া অন্য স্থানে জনসভা আয়োজনের অনুরোধ করা হলো।
দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে ইয়াছিন গ্রুপ। একই দিন একই স্থানে মনিরুল হক চৌধুরী গ্রুপ আয়োজন করছে নির্বাচনী জনসভা। এ কারণে টাউন হলে পরিস্থিতি অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে।
বুধবার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, মুক্তমঞ্চসংলগ্ন পূর্ব পাশে ইয়াছিন গ্রুপের প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। অপরদিকে পশ্চিম পাশে মনিরুল হক চৌধুরী গ্রুপ মঞ্চ তৈরি ও প্যান্ডেলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। উভয় পক্ষের কর্মী, সমর্থকদের উপস্থিতিতে মাঠে কৌতূহলী মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। যদিও প্রকাশ্য কোনো বিরোধ দেখা যায়নি, তবে বৃহস্পতিবারকে ঘিরে নগরবাসীর মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এর আগের সোমবার নগরীর চকবাজার কাপুড়িয়াপট্টিতে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।
হাজী ইয়াছিন গ্রুপের পক্ষ থেকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম রায়হান জানান, ১৮ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে মাঠ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, তার আগেই টাউন হল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। তাই তারা বৈধভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে মনিরুল হক চৌধুরীর আইনজীবী আবদুল মোতালেব মজুমদার বলেন, তারাও ১৭ নভেম্বর লিখিতভাবে আবেদন করেছেন এবং নির্ধারিত ফিও পরিশোধ করেছেন।
এদিকে জেলা পুলিশের কুমিল্লার সদর সার্কেল সাইফুল মালেক বলেন, দুই পক্ষই মাঠ চেয়ে আবেদন করলেও কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং দুপক্ষের সাথে কথা বলছি তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে একই স্থানে একই দিনে প্রোগ্রাম না করে বিকল্প ভেন্যুর বাছাই করার জন্য। পুলিশের পরামর্শ না মানলে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, একই স্থানে দুই পক্ষের কর্মসূচি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। জননিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে কাউকে অনুমতি দেওয়া হবে না। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে রাতেই দুই পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
