বৃহস্পতিবার ২০ নভেম্বর ২০২৫
৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
দাউদকান্দির ‘গোয়ালমারী- জামালকান্দি যুদ্ধ’ দিবস আজ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ১:২৭ এএম |


  দাউদকান্দির ‘গোয়ালমারী- জামালকান্দি যুদ্ধ’ দিবস আজআলমগীর হোসেন,দাউদকান্দি।।
২০ নভেম্বর, দাউদকান্দির ‘গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ’ দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে গোয়ালমারী ও জামালকান্দি গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে বিজয়ী হন মুক্তিযোদ্ধারা। হানাদারদের প্রায় ৭০ জন সৈন্য নিহত হয় সেদিন। দাউদকান্দি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার খোরশেদ আলম প্রদত্ত তথ্য অনুয়ায়ী, ভয়াবহ এই যুদ্ধে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহিদ হন।
‘গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ’ ছিল ২ নম্বর সেক্টরের বড় যুদ্ধগুলোর অন্যতম। ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর ছিল রোজার ঈদের দিন। ঈদের দিন ভোরে পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে গোয়ালমারী ও জামালকান্দিতে। এই আক্রমণের মূল টার্গেট ছিল- গোয়ালমারী চৌধুরী বাড়ি ও গোয়ালমারী বাজারের পশ্চিম পাশের স্কুলে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন ঘাঁটি এবং জামালকান্দিতে অবস্থিত খান সাহেব ওসমান আলী ও তাঁর ছেলে মোস্তফা সারওয়ারের বাড়ি। মুক্তিযোদ্ধারা অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রান্ত হলেও দ্রতই তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলতে সক্ষম হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় অংশ নেন সাধারণ গ্রামবাসী। ভোরে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ চলে পরবর্তী টানা ১৫ ঘণ্টা। বিজয়ী হন মুক্তিযোদ্ধারা।
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানা এলাকার দক্ষিণাঞ্চল, বর্তমান চাঁদপুর জেলার মতলব থানা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদারদের তৎপরতা সীমিত করতে এবং এ অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করতে এই যুদ্ধের প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। কেননা এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর দাউদকান্দির দক্ষিণাঞ্চলে আর কোনো অভিযান পরিচালনা করার সাহস করেনি তারা। তাই বলা যায়, গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধের মাধ্যমেই শত্রুমুক্ত হয় দাউদকান্দির দক্ষিণাঞ্চল।
গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রধান ভূমিকা ছিল এই যুদ্ধের কমান্ডার চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. (অব.) এম. ওয়াদুদের। সেদিনকার যুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে তিনি আহত হন। যুদ্ধটি সম্পর্কে মো. আল-আমিন ও বাশার খান রচিত "মুক্তিযুদ্ধে দাউদকান্দি" গ্রন্থের ৮৬ পৃষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধা এম. ওয়াদুদের উল্লেখিত স্মৃতিচারণ, "রাত প্রায় ১০টার সময় ১৩ জন আহত মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন শহিদের লাশ নিয়ে বিজয় মিছিল করে আমরা ফিরে আসি আমাদের আস্তানায়। আমাদের চিকিৎসা চলল নিজস্ব হাসপাতাল নিশ্চিন্তপুরে। সেখানে যাঁদের অক্লান্ত সেবা ও চিকিৎসায় আমরা সুস্থ হয়ে উঠি তাদের কথা জীবনে কখনও ভুলতে পারব না। ২০ শে নভেম্বরের বিজয়ের সাথে মতলব, দাউদকান্দি, কচুয়া ও চাঁদপুরের উত্তরাংশ হানাদার মুক্ত হয়।"
শহিদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ নিয়ে স্বাধীনতার ৫৫ বছর পরও কোনো স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়নি। গোয়ালমারী বাজারের পাশে সিমেন্ট দিয়ে কিছু ইট পুঁতে রাখা হয়েছে। যা কোনক্রমেই মুক্তিযুদ্ধকে রিপ্রেজেন্ট করে না বলে অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তাই দ্রুতই সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় তরুণ প্রজম্ম। ২০১৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ স্সৃতিস্তম্ভের নকশাসহ ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করলেও এই মহতি উদ্যোগটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা।
গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করেছেন লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক বাশার খান। কুমিল্লার কাগজকে তিনি বলেন, 'ঐতিহাসিক এই যুদ্ধটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয়ের ক্ষেত্রে সূদুরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। যুদ্ধটির অন্যতম ৩টি বিশেষত্ব হল : ১. এরফলে দাউদকান্দির দক্ষিণাঞ্চল, মতলব, কচুয়া এবং গজারিয়ার একাংশ পরোক্ষভাবে স্বাধীন হয়ে যায়। ২. গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কেউই সেদিন ঈদের নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারেননি। গ্রামবাসী বুক পেতে সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। অকাতরে জীবন দিয়েছেন। ৩. ২০ নভেম্বরের যুদ্ধের পর তারা একটি বড় অঞ্চলে আর কোনো তৎপরতা চালাতে সাহস-ই করেনি। হানাদারদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। অপরদিকে এই জয়ে মুক্তিবাহিনীর মনোবল দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়। এই যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ, নকশাসহ বরাদ্দ আনতে আমি অনেক শ্রম দিয়েছি। কিন্তু বিগত পলায়নকারী সরকার সেটি বাস্তবায়ন করেনি। এমন গাফিলতি অগ্রহণযোগ্য ও অত্যন্ত লজ্জাজনক। প্রশ্ন হচ্ছে, বরাদ্দকৃত ৩৫ লাখ টাকা এখন কোথায়? আমি ২০১৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এর প্রতিবাদ করে আসছি। স্মৃতিস্তম্ভটি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য আবারো দাবি জানাচ্ছি।'
এবিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরীন আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
টাউন হলে সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপির কোনো গ্রুপ
দল আমরা একসাথেই করবো: মনির চৌধুরী
নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার নতুন জেলা প্রশাসকের
দাউদকান্দির ‘গোয়ালমারী- জামালকান্দি যুদ্ধ’ দিবস আজ
সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার মাস্টারক্লাস ফর পাবলিক সার্ভিস ও ভিশনারি টক সেমিনার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আমি কোনো গ্রুপ বুঝি না, ধানের শীষের কর্মী বুঝি
মহাসড়কের কুমিল্লায় সেই স্থানে রোপণ হলো ৬৪ বকুল গাছ
লাকসামে সড়ক দুর্ঘটনায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
চান্দিনায় প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি
দেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২