
সফল এলডিসি উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে কিছুটা সময় নিতে হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা নেতারা। অর্থাৎ বাংলাদেশকে উত্তরণের পথে স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় স্তরে নীতিসহায়তা প্রয়োজন। গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে (ইউএন হাউস) এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আগত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য জাতিসংঘের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের মিশনের সঙ্গে পোশাক খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কৌশলগত পরামর্শ সভা হয়। এ সভায় বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। এলডিসিবিষয়ক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুসের নেতৃত্বাধীন মিশন চার দিনের সফরে ঢাকায় আছে। এলডিসি উত্তরণ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা জানতে এই মিশন কাজ করছে। তারা রপ্তানি খাতের কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, বেসরকারি খাত যে প্রস্তুত নয় সে কথা জাতিসংঘ মিশনকে অবহিত করেছেন তারা। নিয়ম অনুযায়ী উত্তরণের পর তিন বছর প্রস্তুতিকাল পেয়ে থাকে উত্তরণ হওয়া দেশগুলো। এর সঙ্গে আরও তিন বছর মিলিয়ে মোট ছয় বছর সময় চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের হাতে রয়েছে আরও এক বছর। সব মিলিয়ে সাত বছর প্রস্তুতিকালের একটা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে মিশন। উত্তরণের জন্য সময় দেওয়া হলে কীভাবে তা কাজে লাগাতে পারবে, সেটা বুঝতেই রোডম্যাপ চাওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মিশন গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গেও বৈঠক করেছে।
জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলকে ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের কারণে বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো আদেশ কমিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা চলছে। এর মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসি থেকে মসৃণ উত্তরণ-প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। এলডিসি উত্তরণ কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়, সে লক্ষ্যে সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। স্বল্প মেয়াদে রয়েছে ডব্লিউটিওর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিকল্প প্রণোদনা চালু, ব্যাংকসুদের হার হ্রাস ও ইডিএফ পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমান। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত ও লজিস্টিক অদক্ষতা (বন্দর ও শুল্ক) দূর করা। মধ্যমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণ হ্রাস, দ্রুত গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পের কাঠামোগত ভিত্তি মজবুত করা।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের শিল্পকারখানা বর্তমানে আইসিইউতে আছে। এ অবস্থায় রোগীকে (শিল্প) সুস্থ অবস্থায় আনতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে, তা না হলে রোগীকে (শিল্প) বাঁচানো যাবে না। এমন উদাহরণ দিয়ে এলডিসি উত্তরণ পেছানোর অনুরোধ করছেন তিনি।
এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা সক্ষমতা রাখে, তা সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহযোগিতামূলক নীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী সরকার ব্যবসায়ীদের নীতিসহায়তা দেবে। শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে এবং পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের জন্য নীতি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা খুবই প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ডব্লিউটিও জানিয়েছে, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পরও তাদের কারিগরি সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
