বুধবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় পরস্পরের মিত্র নয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১:২৭ এএম আপডেট: ১৫.০৯.২০২৫ ২:৫৯ এএম |

 রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় পরস্পরের মিত্র নয়
রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় পরস্পরের মিত্র হতে পারে না। হওয়া উচিতও নয়, কেননা দুয়ের উদ্দেশ্য পরস্পরবিরোধী। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কায়েমি স্বার্থকে পাহারা দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য সেই স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করা। এই দুই পরস্পরবিরোধী স্বার্থ মিলবে কী করে? মিলবে কেন?
তবু তারা রেখায় মেলে বৈকি। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রকে শিক্ষিত লোকবল সরবরাহ করে। তারাই বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থ দিয়ে, সমর্থন দিয়ে আনুকূল্য প্রদান করে। এই সম্পর্কটা মিথ্যা নয়। এতে রাষ্ট্রের লাভ হয়। সে আরও দক্ষ হয়ে ওঠে; বিশ্ববিদ্যালয়েরও লাভ হয়, কেননা, এতে তার প্রতি সমাজের আকর্ষণ বাড়ে, লোকে ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে রাষ্ট্রীয় পদ (কেবল সরকারি নয়, বেসরকারিও) পেতে সুবিধা হবে। কিন্তু নিয়ম এটাই যে, চূড়ান্ত বিচারে রাষ্ট্রের যত লাভ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তাতে ক্ষতি। কেননা, ওই যে বললাম কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, সেটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ। সেখান থেকে সরে দাঁড়ালে বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় থাকে না। বড়জোর উচ্চতর প্রশিক্ষণ একাডেমিতে পরিণত হয়।
ব্যাপারটাকে আরও একটু পরিষ্কার করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের চর্চা হবে। সেটাই প্রধান কাজ তার। কিন্তু কোন জ্ঞান? না, সেই জ্ঞান নয়, যেটা মাকড়সার করায়ত্ত, যার সাহায্যে সে সূক্ষ্ম জাল বোনে, নিজেকে আবদ্ধ রাখার জন্য; সেই জ্ঞান নয় যেটা পিপীলিকার করায়ত্ত, যার সাহায্যে খাদ্য সংগ্রহ করে; অনেকটা সেই জ্ঞান, যা মৌমাছির আয়ত্তে রয়েছে। যার সাহায্যে সে একই সঙ্গে সংগ্রহ ও সৃষ্টি করে। কিন্তু যথার্থ জ্ঞানী মানুষ মোটেই মৌমাছি নয়, সে একই বৃত্তের ভেতর অনবরত ঘোরাফেরা করে না, বৃত্ত ভেঙে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ওটাই, বৃত্তকে ভেঙে ফেলা। কায়েমি স্বার্থও একটা বৃত্ত বটে। প্রত্যক্ষ বৃত্ত, যে বৃত্তকে মেনে নিলে বিশ্ববিদ্যালয় আবদ্ধ হয়ে পড়ে, সে বিশ্বের থাকে না, খুব ছোট হয়ে যায়। অন্তর্মুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সব সময়ে বহির্মুখী থাকা চাই।
তার মানে এই নয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্মুখী লোকেরা নেই, কিংবা থাকবেন না। অবশ্যই আছেন এবং থাকবেন। জ্ঞানের যথার্থ অন্বেষণ ও সৃজন সভা করে হয় না, নিভৃতেই করতে হয়, নীরবে, প্রায়শ একাকী। কিন্তু জ্ঞানীর সৃষ্টি খোপের ভেতর আবদ্ধ থাকে না, তা বৃত্তকে গিয়ে আঘাত করে। সেই আঘাতে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানের এবং স্বার্থের উভয় বৃত্তই কেঁপে ওঠে, অনেক সময় একসঙ্গে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ তো বটেই, সামাজিক স্বার্থও বিপন্ন হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় তাই চিরবিদ্রোহী এবং চিরনবীন। এ প্রতিষ্ঠানে তরুণরা থাকে বলেই যে সে চিরনবীন তা মোটেই নয়। কেননা, এতে প্রবীণরাও থাকেন। আসলে ওই প্রবীণরাও তরুণ বটে, তরুণদের চেয়েও তরুণ। কেননা, তরুণদের তারুণ্য অনেক সময়েই আবেগের পরিধিতে সীমাবদ্ধ, জ্ঞানী প্রবীণদের তারুণ্য তেমন নয়, সে তারুণ্য মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক। বুদ্ধিবৃত্তিক বিদ্রোহ অনেক বেশি বিপজ্জনক, আবেগনির্ভর বিদ্রোহের তুলনায়। আবেগের বিরাম আছে, চিন্তার নেই।বলা হয়ে থাকে যে, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের ভেতর একটি রাষ্ট্র। আসল সত্য রয়েছে আরও গভীরে; সেটি হচ্ছে এই যে, বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ। একমাত্র নয়, প্রধানও নয়, কিন্তু প্রতিজ্ঞাপরায়ণ প্রতিপক্ষ বটে।

এ সম্পর্কের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উদাসীন থাকা সম্ভব হলেও রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, রাষ্ট্রের দায়িত্ব কায়েমি স্বার্থকে পাহারা দেওয়া, সেখানে অসতর্কতার অর্থ দাঁড়ায় কর্তব্য অবহেলা। রাষ্ট্র তার কর্তব্য অবহেলা করতে পারে না। এবং করে না।
রাষ্ট্র তাই চায় বিশ্ববিদ্যালয় তার অনুগত থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্দেহ না করে তার উপায় থাকে না। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেয়াদবির যে উপাদান থাকে সেটা সে জানে। ওই প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রকে দক্ষ লোকবল সরবরাহ করবে- এটা ঠিক আছে, এটা জরুরিও বটে; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বেকার সৃষ্টি করেই হোক কিংবা আরও গভীরভাবে স্বাধীন চিন্তার চর্চা করেই হোক প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে যে বিপন্ন করবে রাষ্ট্রের পক্ষে এটা সহ্য করা কঠিন।
এজন্য দেখা যায়, রাষ্ট্র চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে। প্রয়োজনে ভয় পর্যন্ত দেখায়; সব সময়ে যে স্থূলভাবে প্রদর্শন করে তা নয়, অনেক সময় অপ্রত্যক্ষ কিন্তু কার্যকর মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও অনুভবের সৃষ্টি করে, বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ভেতর থেকেই শান্ত থেকে সন্তুষ্টচিত্ত হয়ে পড়ে।
পরাধীন দেশে রাষ্ট্র পারতপক্ষে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চায় না। হ্যাঁ, ইংরেজ একদিন এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্তন ঘটিয়েছিল বটে। তবে সেটা তাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের স্বার্থেই, শাসিত জনগণের স্বার্থে নয়। আর পরে যখন দেখল অধীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ঠিক অধীন থাকতে চাচ্ছে না, বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকরা ওখান থেকে বের হয়ে কিছুটা শিক্ষার ও কিছুটা বেকারত্বের প্ররোচনায় সরকার বিরোধিতায় শামিল হচ্ছে তখন ইংরেজরা যে খুব খুশি হয়েছে তা মনে করার কারণ নেই। ঢাকায় তারা যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল তার কারণটাও রাজনৈতিক। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার দরুন অসন্তুষ্ট মুসলিম সমাজকে কিছুটা সন্তুষ্ট করাই ছিল তাদের অভিপ্রায়। আর তেমন একটা ভয়ও ছিল না, কেননা তাদের আস্থা ছিল কলকাতা থেকে দূরে গ্রামীণ এক পরিবেশে আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি থেকেও দূরে থাকবে এবং এখানে গরিব মুসলিম ছাত্ররাই পড়বে বেশি করে, যারা জীবনের সংগ্রামে এত ব্যস্ত থাকবে যে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। বলা বাহুল্য, তাদের আস্থা সংরক্ষিত হয়নি, কেননা এ বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকেনি, ইংরেজবিরোধী আন্দোলন এখান থেকেও হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই কাজ করেছে।
গোটা পাকিস্তান আমলজুড়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। যে জন্য আমরা দেখি একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার একেবারে প্রথমে হানাদার পাকিস্তানিরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কেই তাদের প্রথম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। রাগটা ছিল খুব বেশি। এবং তা অযৌক্তিক ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেককে তারা হত্যা করেছে, হানাদারদের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে অযৌক্তিক কিছু করেনি, কেননা নিরীহ শিক্ষকরা তাদের জন্য ছিলেন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পাকিস্তানিরা তখনকার পূর্ববঙ্গে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছিল সেটা ঠিক। না করে উপায় ছিল না বলেই তৈরি করেছে। ঠিক সেই ইংরেজদের মতো। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা চেয়েছে শহর থেকে দূরে রাখবে বিশ্ববিদ্যালয়কে, ওই সেই আশাতে যে তার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে। আইয়ুব খানের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জয়দেবপুরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা তারা ভেবেছিল। পারেনি। না পেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যখন তৈরি করল তখন তাকে ঢাকায় জায়গা দিল না, নিয়ে গেল সাভারে। বলল, এটি হবে আবাসিক, আশাটা হুবহু সেই ইংরেজদের; অর্থাৎ রাজধানী থেকে দূরে থাকলে রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে- আশা এই রকমের। রাষ্ট্র বদলালো; কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্র বদলালো না। একই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। সেখানেও শহরে না রেখে পাহাড় ও অরণ্যের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্বাসিত করা হয়েছে।
এসব তো ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তান নামক দুই বিদেশি রাষ্ট্রের কাহিনি; তাৎপর্যপূর্ণ সত্য এটাও যে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরও জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে শহরে নিয়ে আসা হলো না; যদিও সে দাবি উঠেছিল এবং তাতে প্রশাসনিক কোনো অসুবিধা ছিল না। তবে অন্য অসুবিধা অবশ্যই ছিল। শাসকদের অসুবিধা। শাসকরা বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দ করে না। করার কথাও নয়।
সেটাই আরও স্পষ্ট করে বোঝা গেছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারের অনীহা দেখে। দেশ স্বাধীন হলো, জনসংখ্যা বাড়ল, শিক্ষিতের সংখ্যা বৃদ্ধি থেমে থাকল না, নানা ক্ষেত্রে বিকাশ লক্ষ্য করা গেল; কিন্তু কই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তো যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেল। হয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এসব খোলা হয়েছে। কিন্তু এগুলো নামে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, আর ওদের নামই বলে দিচ্ছে যে ওরা বিশেষ বিদ্যার প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় নয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা তো পরের কথা, চালুগুলোই এখন বন্ধ থাকছে, প্রায়ই।
অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি। তাহলে বদলালো কী? এ প্রশ্নটা থেকেই যায়। অনেক কিছু বদলেছে, অবশ্যই; কিন্তু সেসব অদলবদল, কিংবা বড়জোর রদবদলে মৌলিক কোনো পরিবর্তন এল কি?

বিশ্ববিদ্যালয় যে স্বায়ত্তশাসন চায় তার কারণ রাষ্ট্র যেমন তাকে অবিশ্বাস করে, সেও তেমনি রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করে না। স্বায়ত্তশাসন কী জন্য দরকার? না, যা ইচ্ছা তাই করার জন্য নয়, স্বেচ্ছাচার অভীষ্ট নয়, অভীষ্ট হচ্ছে জ্ঞানচর্চার স্বাধীনতা। বিশ্ববিদ্যালয় সেই স্বাধীনতাটা চায়। আর রাষ্ট্র সেটা দিতে ভয় পায়। কেননা, রাষ্ট্র জানে স্বাধীনতা দিলে তা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।
রাষ্ট্র তার কথাবার্তায় সন্ত্রাসবিরোধী; কিন্তু রাষ্ট্র কি সন্ত্রাস করে না? অবশ্যই করে। সেও ভয় দেখায়। সন্ত্রস্ত রাখে মানুষকে এবং সেভাবেই শাসন করে। সেই সন্ত্রাসকে মেনে নিতে হয়। কেননা সেটা আইনি। যে সন্ত্রাসকে মানা যায় না, সেটা হলো বেআইনি সন্ত্রাস।
এ বেআইনি সন্ত্রাস এখন বাংলাদেশে খুব চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এর দরুন একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। কাজ করবে কী, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মোটেই সরলীকরণ করা হবে না যদি বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসের সঙ্গে সরকার সরাসরি জড়িত। দুভাবে। প্রথমত, সরকার সন্ত্রাসকে চলতে দেয়, অর্থাৎ সন্ত্রাসীদের আটক করে না। দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসকে সে প্রশ্রয় দেয়। আজ নয়, অনেক দিন ধরে দিয়ে আসছে। বর্তমান সন্ত্রাসের শুরু সেই মোনেম খানের আমল থেকে। ওটি তার বিশেষ অবদান। কিন্তু তিনি তো ছিলেন একজন গণধিকৃত ব্যক্তি, তার পক্ষে ওই কাজ অস্বাভাবিক ছিল না। যা হতাশাজনক তা হলো সেই ভয়ংকর রকম সন্ত্রাসী ব্যক্তিটির পতন হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু সন্ত্রাস যায়নি; বরঞ্চ যে সরকারই এসেছে ওই একই মোনেমখানী নীতি অবলম্বন করেছে। বোঝা যায় হাকিম বদলেছে, হুকুম বদলায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসের মূল কারণ অবশ্য সমাজে বিরাজমান দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশেষ কারণ হচ্ছে সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি। একটি নতুন সামাজিক ঘটনাও ঘটে গেছে। সেটি এই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর অধিপতি শ্রেণির সন্তানরা পড়ে না। ওই সন্তানরা বিদেশে যায়, তাই বিশ্ববিদ্যালয় রইল কী গোল্লায় গেল তাতে ধনীদের কিছু যায় আসে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমাগত নিম্নমধ্যবিত্তের বস্তিতে পরিণত হচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে এখানে সন্ত্রাস থাকবেই। কোন বস্তি সন্ত্রাসমুক্ত ছিল? কবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত সম্পর্কে আমরা অনেক কথা বলি এবং শুনি। বলে থাকি, এ হচ্ছে আমাদের আলীগড়। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান কী? হ্যাঁ, আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ইত্যাদি সরবরাহ করেছে সে, কিন্তু তার পর? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চয়ই তার চেয়ে বেশি কিছু করেছে। সেখানেই তার বিশেষ গৌরব। এ ধরনের কাজ আলীগড় কখনো করেনি। বলা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড? কোন দিক দিয়ে? না, কোনো দিক দিয়েই নয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গৌরব মানুষকে সে স্বাধীন করতে চেয়েছে। আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, পেশাজীবী পণ্ডিত, বেকার- অনেক কিছু সরবরাহ করেছে সে। এসব ক্ষেত্রে তার অবদান সামান্য নয়। কিন্তু এ অবদানের জন্য যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি মূল্যবান সে প্রতিষ্ঠিত স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে বলে।
আগামী দিনেও এ বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে তেমনভাবে দাঁড়াবে কি, অতীতে যেমন দাঁড়িয়েছিল? যাতে দাঁড়াতে না পারে তার চেষ্টা চলছে। কায়েমি স্বার্থেই করছে সে কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে বিপরীত অবস্থান, যদি সে অতীতের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শুধু নয়, নিজে জীবন্ত থাকতে চায়। জীবন্তেরই তো ঐতিহ্য থাকে, মৃতের আবার ঐতিহ্য কী।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় ১৬ বছরের কিশোর নিখোঁজ: খোঁজ দিতে পরিবারের আকুতি
কুমিল্লার ১৮ থানার লটারির মাধ্যমে নতুন ওসির পদায়ন
আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে এমপি ইলেকশন করছি এটাই তো বড় বিষয়: হাসনাত আব্দুল্লাহ
মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত
বাঁচতে চায় ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত কুবি শিক্ষার্থী অনন্যা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা নগরী যানজটমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান
আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে এমপি ইলেকশন করছি এটাই তো বড় বিষয়: হাসনাত আব্দুল্লাহ
কুমিল্লার ১৮ থানার লটারির মাধ্যমে নতুন ওসির পদায়ন
লাকসামে রেললাইনের পাশ থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯
যে কারণে টিউলিপের সাজা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২