নাগরিকত্বের একটি প্রমাণ জাতীয় পরিচয়পত্র বা
এনআইডি কার্ড। যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে এই কার্ডের প্রয়োজন। পাসপোর্ট
পাওয়া, ব্যাংকে হিসাব খোলা, মুঠোফোন নেওয়া বা নতুন সিম কার্ড তোলা,
বাড়িভাড়া, হোটেল কক্ষ ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স তৈরিসহ আরো অনেক কাজেই এখন
এনআইডির প্রয়োজন।
জাতীয় পরিচয়পত্রের এত গুরুত্ব এর আগে নাগরিকদের কাছে ছিল না।
অনেকেরই
ধারণা ছিল, শুধু ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেই এই পরিচয়পত্র কাজে লাগবে। কিন্তু
জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে যে এই পরিচয়পত্রটি হয়ে উঠবে নাগরিকের পরিচয় সনদ,
তা বুঝে ওঠার পর এখন পরিচয়পত্রে থাকা ভুল সংশোধনের জন্য এনআইডি উইংয়ে চাপ
বাড়ছে।
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জাতীয়
পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ভুলভ্রান্তি সংশোধনের জন্য করা সাড়ে পাঁচ লাখ আবেদন
ঝুলে আছে।
২০২০ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে অনলাইনে এনআইডি সংশোধন সেবা চালু করে ইসি।
এ
সময় ক, খ, গ ও ঘ এই চার ক্যাটাগরি করে সংশোধনের জন্য মাঠ পর্যায়ের
নির্বাচন কর্মকর্তাদের সংশোধনের দায়িত্ব দেয় ইসি। ৩০ দিনের মধ্যে এনআইডি
সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য ২০২২ সালের ৩০ জুন একটি নির্দেশনা জারি
করেছিল ইসি। নির্দেশনায় জানানো হয়েছিল ক্যাটাগরি বিভাজনের পর থেকে
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাঁর অধীনে আবেদন নিষ্পত্তি করতে ক্যাটাগরি ‘ক’
সাত কার্যদিবস, ‘খ’ ১৫ কার্যদিবস ও ‘গ’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০
দিনের সময় পাবেন।
এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রে নানা ভুল থাকে।
এসব
ভুলের কারণে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ভুক্তভোগীদের। যেমন-কুড়িগ্রামের
ভূরুঙ্গামারীতে এনআইডি কার্ডে নামবিভ্রাটের কারণে বিপাকে পড়েছেন এক বীর
মুক্তিযোদ্ধা। নাম সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করার দীর্ঘদিন
অতিবাহিত হলেও এখনো সংশোধিত না হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবার।
এনআইডি সংশোধনের কাজ
ধীরগতিতে হওয়ায় নিষ্পত্তি না হওয়া আবেদনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অদক্ষ
জনবল দিয়ে তথ্য সংগ্রহ, ডাটা এন্ট্রিকারীদের গাফিলতি, সমন্বয়হীনতাসহ আরো
কিছু কারণে ভুল হচ্ছে বা হয়েছে।
ভুল সংশোধন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের
অর্থের অপচয় হচ্ছে। দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে অনেক সময়ও ব্যয় হচ্ছে। কিছু সমস্যার
সমাধান উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সমাধান হলেও কিছু ভুলের সমাধানের জন্য
জেলা নির্বাচন অফিস, এমনকি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস পর্যন্ত যেতে হচ্ছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে গিয়ে কাউকে যেন নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান কাম্য।