বর্তমানে বাংলাদেশে যেমন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও অনিশ্চয়তা ভর করেছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা আগের সরকারের সময়কাল থেকে শুরু হলেও তা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে তা আরো তীব্র হয়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজনীতিতে এক পক্ষ নির্বাচনের জন্য মরিয়া, আরেক পক্ষ রয়ে-সয়ে সংস্কার শেষ করে তবেই নির্বাচনের ব্যাপারে একাট্টা।
এ অবস্থায় মনোযোগ হারিয়ে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। অর্থনীতির মূল সূচকগুলোর বেশির ভাগই গতিহীন।
আমদানি, ব্যবসা ও বিনিয়োগে মন্দার ফলে রাজস্ব আয়ে দেখা যাচ্ছে বড় ঘাটতি। মূল্যস্ফীতি থামাতে নেওয়া উচ্চ সুদের হারের খড়্গ ভোগাচ্ছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহকে।
ডলারের উচ্চ দরের প্রভাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ-জ্বালানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি না হওয়া আর আস্থাহীনতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় তলানিতে।
পুঁজিবাজারেও সাধারণ বিনিয়াগকারীদের হাহাকার।
অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিতে পড়ে বড় বড় শিল্প গ্রুপও রয়েছে বেকায়দায়। বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এসব গ্রুপের ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার কারণেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন খাতে। নিত্যপণ্যের বাজারেও উত্তাপ। গবেষণা সংস্থা ‘ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক’-এর মার্চ মাসের জরিপে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে নিয়মিত অনেক খাবার বাদ দিচ্ছেন।
মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা গেছে জরিপে।
দেশের শীর্ষ অনেক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার মধ্যে হতাশার কথাই বেশি শোনা যায়। সম্প্রতি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের (বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএ ও বিটিটিএলএমই) নেতারা ঘটা করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ব্যবসা-বিনিয়োগের নাজুক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। মোটকথা, সব মিলিয়ে অর্থনীতি এখন বেশ চাপের মুখে।
অর্থনীতিতে গতি ফেরানো সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে প্রায় সব মহল থেকেই বলা হচ্ছে। আর এ জন্য সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের আস্থায় নেওয়াও সমান জরুরি। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে সরকার একটি বিশেষ কমিটিও করতে পারে। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে সরকার কাজ শুরু করবে। আসন্ন বাজেটে রাজস্ব খাত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি নিয়ে রবিবার আয়োজিত এক সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা বলেন, ব্যবসার জন্য কঠিন পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় এমন আর্থিক নীতি তৈরি করতে হবে, যা ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির পরিবেশ নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক কর কাঠামো প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ৯ মাস হলেও দেশে ব্যবসার পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের শিল্প খাত ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গোষ্ঠীতন্ত্রের অচলায়তন ভাঙার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হতে পারে। ব্যবসা ও শিল্পসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাঁদের কথা শোনার কোনো বিকল্প নেই।