বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। অবশ্য এর পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী। অসম প্রতিযোগিতা, উপযুক্ত চাকরির অনিশ্চয়তাকেই সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা হয়। তারপরও বলা যায়, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণেও তরুণদের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। তা ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানও নিম্নমানের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা, উপযুক্ত মর্যাদা ও চাকরির সংকট থাকায় বিদেশে গিয়ে অনেকে ফিরছেন না। ফলে দেশ থেকে ডলার যেমন চলে যাচ্ছে, তেমনি ডিগ্রি অর্জন শেষে না ফেরার প্রবণতাও বাড়ছে। এ কারণে দক্ষ ও মেধাবীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি শিক্ষাব্যবস্থার মান বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তাহলেই বিদেশমুখী প্রবণতা কমে আসবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সংস্কার কমিশন করেনি। এটাকে জাতীয় ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষার জন্য বছরে ৫০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী দেশ ছাড়ছেন, যা ১০ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দায়িত্ব নেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে এনে এ দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর কথা বলেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন ও মেধাবী বাংলাদেশি রয়েছেন। যারা চাইলে দেশের বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। সচেতন সমাজ মনে করে, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে সরকার যেমন উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, তেমনি মেধাবীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তাহলে অধিকতর যোগ্য ও দক্ষরা দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই প্রবণতার জন্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম কমে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে দেশপ্রেমের নিম্নগতি। রাষ্ট্র যেভাবে সম্পদ পাচারে বাধা দিচ্ছে না; একইভাবে তারা ছেলেমেয়েদের বিদেশ পাঠাতে বাধা দিচ্ছে না।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, কোনো সরকার তাদের (মেধাবীদের) ফেরাতে চায়নি। এখনো চায় না। যারা বাইরে চলে যেতে চায়, এটা তাদের অধিকার। আমাদের রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধান ঠিকমতো হয় না। আইনের শাসনের ঘাটতি রয়েছে। জোর যার মুল্লুক তার মতো অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে। আমাদের দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
কর্মসংস্থানের সমস্যার কারণেও মেধাবীরা দেশে ফিরে আসছেন না। এ ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ল্যাব ও গবেষণাতেও সুযোগ-সুবিধা কম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেও ততটা অগ্রসর হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে। মেধাবীদের ফেরাতে সরকারিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে মেধাবীদের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তেই থাকবে।