ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশবিস্তার ক্রমেই বাড়ছে। মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। থেমে থেমে বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম এডিস মশা বিস্তারে সহায়ক পরিবেশ। এখনই যদি সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে বিগত বছরের চেয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা ধারণা করছেন, এবার পিক সিজন হতে পারে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর। ডেঙ্গু মৌসুম না হলেও এখন প্রতি মাসেই কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, এতে অনেকে মারাও যাচ্ছেন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে প্রতি মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে শুধু মার্চ মাসে মৃত্যু হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিলে ৫০৪ জন আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় দুজনের। আর চলতি বছরের এপ্রিলে ৭০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। গত বছরের তুলনায় এ বছরের এপ্রিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অনেকটাই বেড়েছে। ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৭৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়। আর ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের এখনই সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য এবার গাইডলাইন আপডেট করছে সরকার। শিগগিরই তা চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা পাবেন রোগীরা। এডিস মশার ঘনত্ব নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার ঘনত্ব গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি আছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগীও বেশি। এ ছাড়া অল্প বিস্তর বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। এখনই যদি আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারি, তাহলে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে, সে জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সারা দেশেই পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোকে সক্রিয় করা, যাতে তারা এখন এডিস মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গু কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। জুলাই-আগস্টের দিকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এবারও পিক সিজন জুলাই বা আগস্টে হতে পারে। প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার কমালে এবং সারা দেশে যদি আন্দোলনের মতো ছাত্রদের সম্পৃক্ততায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান করা যেত, তাহলে হয়তো একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন আসত। সে ধরনের কিছু হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান, তাতে গতবারের চেয়ে বেশি খারাপ হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোশেনগুলোকে এলাকাভিত্তিক সমন্বিত কার্যক্রম আরম্ভ করতে হবে। যেকোনো জায়গায় পানি জমতে না দেওয়া। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা প্লাস্টিক বা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পাত্রসমূহ ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। সতর্কতা হিসেবে দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা ভালো। নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।