পুঁজিবাজারে বেশির ভাগ বিনিয়োগ নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ধারাবাহিক পতন হচ্ছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এ অবস্থায় দৈনিক লেনদেন কমে এসেছে আড়াই শ কোটি টাকায়। এদিকে অন্তর্বতী সরকার চলতি বছরের জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রকে আরও আকর্ষণীয় করতে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১২ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বাড়ার কারণে পুঁজিবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগ সেখানেই যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোও চলতি বছরে তাদের আমানত ও ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকের শেয়ার সারা বছর রেখে যে লভ্যাংশ পাওয়া যায়, তার চেয়ে বেশি মুনাফা এখন ব্যাংকের স্থায়ী সঞ্চয় স্কিমে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তারল্য বা নগদ টাকা বিনিয়োগের সংকট প্রকট হয়েছে। এর জন্য গলার কাঁটা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মার্জিন ঋণকে। মূলত ঋণ নিয়ে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, মন্দা পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় তারা না পারছেন শেয়ার বিক্রি করতে, না পারছেন নতুন করে বিনিয়োগ করতে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিএসইসির দুর্বল কার্যক্রম আর মন্দা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষা পেতে ঝুঁকছেন সঞ্চয়পত্রে বা ব্যাংকে স্থায়ী সঞ্চয় স্কিমে। পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হলে আবার নতুন বিনিয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
চলতি বছরের পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৭৯ দিন লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ দিন সূচকের পতন হয়েছে। আর বাকি ৩২ দিন সূচকের উত্থান হয়েছে। এই সময়ে পুঁজিবাজারের সূচক কমেছে ৭৩৭ পয়েন্ট আর সূচক বেড়েছে মাত্র ৪৪৮ পয়েন্ট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে মন্দার কারণগুলো যাচাই করা দরকার। একদিকে রিজার্ভ কম। মুদ্রার মানও স্থিতিশীল করা যায়নি। মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এখন ট্রেজারি বন্ডগুলো সাড়ে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন না। বিশ্বব্যাংকের যে তথ্য, তাতে জিডিও গ্রোথ খুবই কম। এমন অবস্থায় ইক্যুইটি মার্কেট খুব ভালো হবে, তা চিন্তা করা যায় না। আবার রাতারাতি পুঁজিবাজার উন্নয়ন হয়ে যাবে, তাও বলা ঠিক হবে না।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, আমি আগেও পুঁজিবাজারবান্ধব ছিলাম, এখনো আছি। কিছু বিনিয়োগকারী আমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুঁজিবাজারের মন্দার জন্য দায়ী করছেন। এটি সত্য নয়। বরং সরকারের পক্ষ থেকে যে ৩ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছিল, তার ১ হাজার কোটি টাকা আইসিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের হারিয়ে যাওয়া তারল্য ফিরিয়ে আনতে হলে এখনই নতুন কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন টালমাটাল। চারদিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এখন নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত আছেন।
পুঁজিবাজারের মন্দা অবস্থা কাটাতে হলে সরকারকে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। এতে করে বাজারের হারিয়ে যাওয়া তারল্য ফিরে আসবে। বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিএসইসিকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, গতিশীল ও যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।